ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থপাচার রোধে সরকার কঠোর
সোহেল রহমান : বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাণিজ্যভিত্তিক অর্থ পাচার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য বেশি দেখিয়ে অর্থ পাচার বেশি হচ্ছে। এর বাইরে অন্যান্য আমদানির ক্ষেত্রে পণ্যমূল্য বেশি দেখিয়ে ও রপ্তানির মূল্য কম দেখিয়ে বা দেশে না এনে অর্থ পাচার করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ পাচার হয়। এ প্রেক্ষিতে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাচার রোধে সর্বাত্মক কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
জানা যায়, বাণিজ্যভিত্তিক অর্থ পাচার প্রতিরোধে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে ‘বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’ (বিএফআইইউ)। এ নীতিমালার আওতায় প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অর্থ পাচার রোধে একটি নিজস্ব গাইড-লাইন/ম্যানুয়াল তৈরি করতে বলা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখনো এটি বাস্তবায়ন করেনি। আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন পরিপালনে ব্যর্থ হলে ‘বিএফআইইউ’ ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা হিসেবে লাইসেন্স স্থগিত কিংবা জরিমানা আরোপ করতে পারবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম-এর মতে, যে কোনো উপায়ে দেশ থেকে অর্থ পাচার ঠেকাতে হবে। এতে অর্থনীতির অনেক ক্ষতি হচ্ছে। বিএফআইইউ’র নির্দেশিত নীতিমালা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোকে আন্তরিক ও সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হলে বাণিজ্যভিত্তিক মুদ্রা পাচার কমে যাবে। অর্থ পাচার প্রতিরোধে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অভিমত হচ্ছে, সরকারি ব্যাংকগুলো বিশেষ করে সরকারি খাতের এলসি নিয়েই বেশি কাজ করে। ফলে সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে অর্থ পাচারের ঝুঁকি কম। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর এলসি’র ক্ষেত্রে তদারকি আরও বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে অর্থ পাচার প্রতিরোধে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং ঠেকাতে ব্যাংকের নিজস্ব ডাটাবেজ তৈরি পাশাপাশি কেন্দ্রীয় একটি ডাটাবেজ গড়ে তোলা এবং ভ্যাসেল ট্র্যাকিং ও কনটেইনার ট্র্যাকিং করার পরামর্শ দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।
জানা যায়, মুদ্রা পাচার, সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধে কোনো ব্যাংক হিসাব একাধিক্রমে ৭ বার পর্যন্ত স্থগিত করতে পারবে বিএফআইইউ। তবে স্থগিতাদেশে হিসাব বা হিসাবধারীর সম্পর্কে যতদূর সম্ভব বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। প্রতিটি স্থগিতাদেশের মেয়াদ হবে ৩০ দিন। একই হিসাবের বিপরীতে ভিন্ন ভিন্ন কারণে পৃথক পৃথক স্থগিতাদেশ দেয়া যাবে।
স্থগিত হিসাবের স্থিতি থেকে হিসাব পরিচালন ব্যয় এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সরকারি কর বা শুল্ক আদায় ছাড়া অন্য কোনো খাতে অর্থ ব্যয় বা উত্তোলন করা যাবে না। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিধান অনুযায়ী হিসাবের স্থিতির ওপর প্রচলিত হারে সুদ কিংবা মুনাফার হিসাব জমা করা যাবে এবং এর বাইরে অন্য কোনো অর্থ জমা করা যাবে না।
অন্যদিকে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ‘বিএফআইইউ’-এর স্থগিতাদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করতে পারবে। আবেদন যথাযথ হলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা যাবে।