অস্ত্র মামলায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদের যাবজ্জীবন কারাদ-
মামুন খান : রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমকে অস্ত্র আইনের মামলায় যাবজ্জীবন এবং গুলি উদ্ধারের ঘটনায় আরও সাত বছরের সশ্রম কারাদ- দিয়েছেন আদালত। সোমবার ঢাকার এক নম্বর স্পেশাল ট্র্রাইব্যুনালের বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষনা করেন। রায় ঘোষণার সময় সাহেদকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে আবারও কারাগারে পাঠানো হয়। রায় ঘোষণার আগে পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, মামলায় চার্জশিটের ১৪ সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সাহেদের গাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে এটা নিয়ে দ্বিমত নাই। কিন্তু আমার কাছে আশ্চর্য লাগে নিজেকে গাড়ির মালিক হিসেবে পরিচয় দিতে তীব্র বিরোধীতা করেন সাহেদ। তিনি বারবার বলে আসছেন গাড়ী তার নয়। অথচ লোন নিয়ে গাড়ি কিনে ব্যবহার করেন সাহেদ। আসামি কতটা চতুর, জানা সত্ত্বেও তা স্বীকার না করে বিরোধীতা করে আসছেন। ২০ লাখ টাকায় ৬০ কিস্তিতে গাড়িটি কেনেন তিনি। বিচারক বলেন, গাড়িটি অটোলক ছিল। গাড়ির চাবি সাহেদ সরবরাহ করে। পরে গাড়ি খুলে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এখানে পাবলিক সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। আসামিপক্ষ বলেছে, অস্ত্র মামলায় সাজা দিতে হলে অস্ত্র সম্বন্ধে আসামির নলেজ, কন্ট্রোল ও পজিশন নিরঙ্কুশ হতে হয়। রাষ্ট্রপক্ষ তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।
বিচারক আরও বলেন, আসামি খুবই চতুর ও ভদ্রবেশী অপরাধী। এ ধরনের আসামিরা আদালত থেকে কোনো অনুকম্পা পেতে পারেন না। তাই অস্ত্র আইনের সর্বোচ্চ সাজা দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আমাদের সমাজে সাহেদের মত অনেক ভদ্রবেশী অপরাধীদের জন্য এ রায় বার্তা হিসেবে কাজ করবে।
এদিকে রায় ঘোষনার পর ন্যায় বিচার পাননি বলে সাংবাদিকদের জানান সাহেদ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাহেদ বলেন, আমি ঘটনার সাথে জড়িত না। ন্যায়বিচার পায়নি। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবো।
অপরদিকে রায়ে আসামির সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। তবে নাখোশ আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।
ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, এ মামলায় তাকে আমরা সর্বোচ্চ সাজা দিতে পেরেছি এজন্য আমরা সন্তুষ্ট।
সাহেদের আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, মামলাটির বিচার এত দ্রুত হচ্ছে এটা নিয়ে আমরা আগে থেকেই আশঙ্কায় ছিলাম। সেই আশঙ্কায় আজ সত্য হলো। মামলাটি আমাদের ঘাড়ের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এ রায়ে আমরা আমরা অসন্তুষ্ট, সংক্ষুদ্ধ। উচ্চ আদালতে আপিল করলে আমরা ন্যায় বিচার পাবো। সেখানে আসামি খালাস পাবেন বলে বিশ্বাস করি। উল্লেখ্য, গত ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। ৭ জুলাই রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় করোনা টেস্ট প্রতারণার অভিযোগে সাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে র্যাব মামলা করে। ১৫ জুলাই সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে এ মামলায় তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় সাহেদকে নিয়ে উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক এস এম গাফফারুল আলম সাহেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলাটি করেন। গত ৩০ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. শায়রুল ইসলাম সাহেদকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। গত ২৭ আগস্ট সাহেদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। ১০ সেপ্টেম্বর মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর তা শেষ হয়। চার কার্যদিবসে চার্জশিটভুক্ত ১৪ সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। ১৬ সেপ্টেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চান সাহেদ। ১৭ সেপ্টেম্বর মামলাটিতে সাহেদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদ- দাবি করে রাষ্ট্রপক্ষ। ২০ সেপ্টেম্বর সাহেদের পক্ষে তার আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। ওইদিন আদালত মামলাটির রায় ঘোষণার তারিখ ২৮ সেপ্টেম্বর ধার্য করেন।