১০ বছরে গমের ১০, ট্রিটিক্যালির ২ ও ভুট্টার ৯ জাত এবং ১০ কলাকৌশল উদ্ভাবন
মতিনুজ্জামান মিটু : দেশের সার্বিক কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন, কৃষকের আয় বাড়ানো এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য গম ও ভুট্টার ওপর গবেষণার পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কাজ করে আসছে। গত ১০ বছরে বিডব্লিউএমআরই উদ্ভাবিত গমের ১০টি ও ট্রিটিক্যালির ২টি জাতের মধ্যে ১টি লবণাক্ততা সহনশীল (বারি গম ১০), একটি কান্ডের মরিচা রোগ (বারি গম ২৭) ও ১টি গমের ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী (বারি গম ৩৩) এবং ২টি গমের ব্লাস্ট রোগ সহনশীল (বারি গম ৩০ ও ৩২)। এর মধ্যে বারি গম ৩৩ জিঙ্ক সমৃদ্ধ জাত, বারি গম ৩২ কিছুটা স্বল্প মেয়াদী জীবনকাল ১০০ থেকে ১০৫ দিন। দিনাজপুর জেলার নশিপুরে স্থাপিত বিডাব্লিউএমআরই গম ১ সবচেয়ে স্বল্প মেয়াদী। এর জীবনকাল ৯৫ থেকে ১০০দিন। বারি গম ২৭ ছাড়া সবগুলো জাত তাপ সহিষ্ণু। দ্বৈত উদ্দেশ্যে উদ্ভাবিত ট্রিটিক্যালির জাত দু’টি পশুর খাদ্য ও দানাও দেয়।
ভূট্টার মোট ৯টি জাতের মধ্যে ৮টি হাইব্রিড। এগুলোর মধ্যে ৩টি সাদা দানার বারি হাইব্রিড ভূট্টা ১২, ১৩ ও ১৪ খরা সহিষ্ণু ও বারি হাইব্রিড ভুট্টা খাটো প্রকৃতির। লবণাক্ততা সহনশীল বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৬ অন্যান্য জাতের চেয়ে ১০ থেকে ১২ দিন আগে পাকে। মোচার উচ্চতা অপেক্ষাকৃত কম, সহজে হেলে পড়েনা। বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৪, ১৫ ও ১৭ ও ডব্লিউএমআরআই ভুট্টা-১ ও ডব্লিউএমআরআই বেবি কর্র্ন-১ তাপ সহনশীল, দেরিতে বা খরিফ-১ মৌসুমে ভালো ফলন দেয়।
উদ্ভাবিত উল্লেখযোগ্য কলাকৌশলের মধ্যে রয়েছে; উত্তরাঞ্চলের হালকা বুনটের মাটির জন্য ৪টি ফসল সম্বলিত লাভজনক ফসল ধারা। আগাম আলু, গম, মুগ ডাল ও আমন ধান। গমের ব্লাস্ট রোগ দমনের জন্য সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা। গম, মুগডাল বা পাট বা পতিত আমন ধান ফসল ধারায় ফসলের বাড়ানো ও মাটির উর্বরতা রক্ষায় রাসায়নিক সারের সঙ্গে জৈব সারের (হেক্টর প্রতি ১০ টন পঁচা গোবর বা মুরগির বিষ্টা) ব্যবহার। গম, মুগডাল বা পাট বা পতিত আমন ধান ফসল ধারায় ফসলের ফলন ও মাটির উর্বরতা বাড়াতে খড়ের অর্ধাংশ জমিতে প্রয়োগ। অমিøও মাটি (পিএইচ ৫.৫) সংশোধনের জন্য শতক প্রতি জমিতে ৪ কেজি ডলোচুন দিয়ে ফলোন বাড়ানো। এক চাষে পাওয়ার টিলার চালিত যন্ত্র দিয়ে গম ও ভূট্টাসহ অন্যান্য ফসলের বীজ সারিতে বোনা ও মই দিয়ে ৬০ ভাগ খরচ কমানো। পটেটো প্লান্টার যন্ত্র দিয়ে আলু লাগিয়ে পরে মেশিনে সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে ভুট্টা বোনা।
বাংলাদেশ গম ও ভূট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. এছরাইল হোসেন জানান, বিএডিসিসহ অন্যান্য বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রতি বছর ৪০ থেকে ৬০ টন প্রজনন বীজ সরবরাহ করে। এছাড়াও প্রতি বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে কৃষকের মাঝে ২৫ থেকে ৩০ টন মান ঘোষিত বীজ বিতরণ করা হয়। প্রতিবছর রবি মৌসুমের শুরুতে নতুন জাতের গম প্রদর্শনী স্থাপনের জন্য প্রায় ১০০০ হতে ১২০০ জন কৃষক ও সংশ্লিষ্টদের (মূলত উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা) গম উৎপাদন এবং বীজ সংরক্ষণের কলাকৌশলের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রতি বছর রবি মৌসুমে গম ও ভূট্টার বিভিন্ন রকমের ২০২০টি প্রদর্শনী স্থাপন করার পাশাপাশি কৃষকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। প্রতি বছর গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা এবং বিভিন্ন প্রকার সমস্যা সমাধান করে ৫ থেকে ৬টি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এসব কর্মশালায় বিজ্ঞানী ছাড়াও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মী এবং এনজিও কর্মীসহ অন্যান্যরা অংশ নেন। নিয়মিতভাবে পুস্তিকা লিফলট ও ফোল্ডার প্রকাশ করা হয়। গমের জাত ও উৎপাদনের কলাকৌশল উদ্ভাবন এবং প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কার্যক্রমের ফলে ফলন ও উৎপাদন ২০০৯ সালের চেয়ে ২০১৯ সালে যথাক্রমে গড় ফলন হেক্টর প্রতি ২.১৫ টন থেকে হেক্টর প্রতি ৩.৬৪ টন এবং উৎপাদন ৮.৪৯ লাখ টন থেকে ১২.৭ লাখ টন হয়েছে এবং ভূট্টার জমির পরিমাণ, ফলন ও উৎপাদন ২০০৯ সালের চেয়ে ২০১৯ সালে যথাক্রমে হেক্টর প্রতি ১.৭৪ লাখ টন হতে ৫.১৭ লাখ ও গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৬.৫৩ টন হতে ১০.০১ টন এবং উৎপাদন ১১.৩৭ লাখ থেকে ৫১ লাখ টন হয়েছে।