দ্রুত ভ্যাকসিনেশন করা গেলে বাণিজ্যে সুফল পাওয়া যাবে
ড. জাহিদ হোসেন
আমাদের দেশে এখনো পুনরুদ্যোমে ভ্যাকসিনেশন চালু হয়নি। ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখ থেকে পুনরুদ্যোমে ভ্যাকসিনেশন চালু হবে বলে বলা হচ্ছে। যেসব জায়গায় করোনা সংক্রমণ খুব বেশি, সেখানে দ্রুত ভ্যাকসিনেশন করতে পারলে মানুষের মধ্যে যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে সেটা ধীরে ধীরে কেটে যাবে। করোনা প্রতিরোধের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভরসা বাড়বে। ভ্যাকসিনেশনের ক্ষেত্রে গতিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যতো দ্রুত বেশি লোককে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় নিয়ে আসা যাবে, ততো দ্রুত বাণিজ্যে সুফলটা পাওয়া যাবে। বেশি দেরী করলে যে ভ্যাকসিন আছে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।
ভ্যাকসিনেশনে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে সাড়াটা একটু কম। ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে না হলে আর যে ১৬-১৭টা পেশার কথা উল্লেখ আছে, তার মধ্যে না পড়লে রেজিস্ট্রেশন করা যায় না। যাদের মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট নেই তাদের দ্বারা অনলাইন রেজিস্ট্রেশন সম্ভব নয়। কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে তা নিয়ে জনসচেতনতার অভাব রয়েছে। এখনো পর্যন্ত বড় কোনো ক্যাম্পেইন হয়নি। আবার উচ্চ সারির যারা নেতৃবৃন্দ আছেন তারা যদি ভ্যাকসিনেশন নিয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, তাহলে হয়তো আগ্রহটা বাড়বে। যাদের রেজিস্ট্রেশন করার সক্ষমতা নেই তারা যেন সবাই রেজিস্ট্রেশন করতে পারে। ভ্যাকসিনেশর পর অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে কিনা সেটা নির্ভর করবে কতো সংখ্যক লোককে আমরা ভ্যাকসিনেশন করছি। ৬০-৭০ শতাংশ লোককে ভ্যাকসিনেট করতে না পারলে করোনা ঝুঁকিটা থেকেই যাবে। আমাদের এখন সরবরাহ আছে ৭০ লাখের মতো। সেটা আমাদের জনসংখ্যার তুলনায় অনেক কম। সরবরাহ প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে যে সরবরাহ আসার কথা। এর বাইরে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে কিছু ভ্যাকসিনের জন্য সাইনআপ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ৮৫ মিলিয়নের মতো অর্ডার করা আছে।
ভ্যাকসিনের সরবারহ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দেখতে হবে যতো বেশি সংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিনেট করা যায়। ঝুঁকিপূর্ণ বা ফ্রন্টলাইনারদের দিয়ে শুরু করে করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত ভ্যাকসিনেশনের আওতায় নিয়ে আসলে মানুষ চলাফেরা ও ব্যবসা-বাণিজ্য করতে স্বস্তিবোধ করবে। তখন অর্থনীতিতে একটা টেকসই রিকভ্যারি আমরা দেখতে পারবো। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও আত্মবিশ্বাস বাড়বে। জুলাই আগস্টের মধ্যে বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোতে ভ্যাকসিনেশনের অনেক অগ্রগতি হবে বলে আমরা আশা করতে পারি।
করোনাভাইরাসের নতুন নতুন রূপ বের হওয়ায় হচ্ছে যেটা আরও ভয়ঙ্কর। সাউথ আফ্রিকা, ইইকে ও ব্রাজিলে করোনাভাইরাসের যে নতুন রূপ বের হয়েছে সেটা আরও ভয়ঙ্কর। ভাইরাসের নতুনরূপে ভ্যাকসিনটা কতোটুকু কাজে লাগবে সেটা অজানা। সেজন্যই ভ্যাকসিনেশনটা দ্রুত শেষ করা দরকার যাতে নতুনরূপ আঘাত করতে না পারে। ভ্যাকসিনেশন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত অর্থনীতিকে একটা ঝুঁকি থেকেই যাবে। করোনার কারণে যারা নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন এবং যারা আগে থেকে দরিদ্র ছিলেন। তারা কাজে ফিরে এসেছে কিন্তু আগের মতো আয় করতে পারছে না। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের যারা বিপদে আছে তাদের সহায়তার জন্য যে কর্মসূচিগুলো সরকার হাতে নিয়েছে তার সঠিক বাস্তবায়ন নির্শ্চিত করতে হবে। শুধু ভ্যাকসিনেশন শেষ হয়ে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে এই আশায় বসে থাকাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
পরিচিতি : অর্থনীতিবিদ। সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লেখাটি লিখেছেন আমিরুল ইসলাম