রংপুরে গ্যাস সংযোগের দিকে তাকিয়ে ব্যবসায়ীরা
মো. আখতারুজ্জামান : দেশ সব থেকে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত বিভাগের নাম রংপুর। এই পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এর অংশ হিসেবে নতুন নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ১ হাজার ৩৭৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপনের একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তৈরি হবে নতুন নতুন কলকারখানা সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের। খাদ্যভাÐার খ্যাত রংপুরের শ্রমজীবী মানুষদের আর ঢাকা বা অন্য কোনো এলাকায় কাজের জন্য যেতে হবে না। রংপুর চেম্বারের প্রতিনিধি পরিচালক মো. মশিউর রহমান রাঙ্গা জানান, আমাদের এখানে অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী রয়েছে। এরা শুধু গ্যাস সংযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। রংপুরে গ্যাস এলে একদিকে যেমন বিনিয়োগ বাড়বে অন্যদিকে বাড়বে কর্মসংস্থান। সেইসঙ্গে পাল্টে যাবে রংপুরের পুরো চিত্র।
গ্যাস সংযোগ পেলে বদলে যাবে রংপুরের চিত্র। রংপুর বিভাগের লোকেরা পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে কাজে অভাব বা কর্মসংস্থান না থাকা। সরকারি হিসেব অনুযায়ী রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ৫৭ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৮ জন। গ্যাস পেলে এই বিশাল জনগোষ্ঠী তাদের নিজেদের মত করে গড়ে নিবে নতুন রংপুর। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রংপুরে গ্যাস সংযোগ এলে বর্তমান যে বিনিয়োগ রয়েছে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে যাতে। কারণ দেশের মধ্যে সব থেকে কম শ্রম মূল্য রয়েছে এই বিভাগে। বিনিয়োগকারিরা এটাকেই কাজে লাগেবে। নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি মারুফ জামান কোয়েল জানান, আমরা অনেক দিন থেকে নীলফামারিতে গ্যাস সংযোগের দাবি জানিয়ে আসছি। আমরা বিভিন্ন সভা সেমিনারে এই দাবিগুলো তুলে ধরেছি। গ্যাস সংযোগের পাশাপাশি আমরা আরও অনেক দাবি জানিয়ে আসছি। তবে এসব দাবির বেশি কিছু আমরা আদায় করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে যেসব কারখানা রয়েছে সেগুলোতে গ্যাস ব্যবহার করা যায় না। এতে পণ্য উৎপাদন ব্যয় বেশি হয়। বর্তমানে রংপুরের প্রধান কর্মসংস্থানের জায়গা হচ্ছে নীলফামারীর সৈয়দপুরের ইপিজেড। গ্যাস সংযোগ আসলে কারখানা সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। পাল্টে যাবে রংপুরের চিত্র। তখন আমাদের বিভাগের কর্মজীবী লোকদের আর দূরে গিয়ে কাজ করতে হবে না। আমরা জেনেছি গ্যাস সংযোগের কাজ করোনার কারণে বন্ধ ছিলো এখন আবার শুরু হবে। আগামী মার্চে এই কার্যক্রম আবার শুরু হতে পারে।
মারুফ জামান কোয়েল জানান, রংপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশি ভালো না। তবে এখন চার লেনের কাজ চলছে। এই কাজ শেষ হলে রংপুর থেকে ঢাকায় যেতে এখন যে সময় লাগে এটা কমে আসবে। অন্যদিকে কুড়িগ্রামের চিলমারী বন্দর চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এটা চালু হলে আমাদের পরিবহন ব্যয় কমে আসবে। তখন সরাসরি চট্টগ্রামে পণ্য পরিবহন করতে পারবো। এতে করে দেশের অন্যান্য এলাকার ব্যবসায়ীদের পণ্য মূল্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবো। বর্তমানে যা পারছি না।
অন্যদিকে গাইবান্ধা চেম্বারের সভাপতি শহীদুল ইসলাম শান্ত জানান, রংপুরে গ্যাস সংযোগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এই প্রকল্পে গাইবান্ধাকে বাদ দেয়া হয়েছে। আমরা সরকারের বিভিন্ন মহলে বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়ে আসছি যে গাইবান্ধাকে গ্যাস সংযোগের আওতায় নিয়ে আসা হয়। বাদ দেয়া হয় তাহলে পিছিয়ে থাকা গাইবান্ধাবাসী আরও পিছিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এখানে গ্যাস সংযোগ দেয়া হলে নতুন নতুন কালকারখানা তৈরি হবে। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের। গাইবান্ধাবাসি পিছিয়ে থাকার প্রধান কারণ এখানে কর্মসংস্থান নেই বললেই চলে। সরকারের কাছে দাবি জানাই যাতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনায় নিয়ে গাইবান্ধায় গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রংপুরের এই গ্যাস সংযোগের পাইপ লাইনটির ডিপিপিতে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য ছিল। তবে করোনার প্রভাবে প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর করা হয়। জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। মোট ৪৩৬ একর ৮৭ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হবে। নিয়ে আসা হয়েছে পাইপ লাইন। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে, বগুড়া থেকে রংপুর হয়ে সৈয়দপুর ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ১৫০ কিলোমিটার সঞ্চালন পাইপ লাইন স্থাপন করা হবে। ১০০ এমএমএসসিএফডি সিজিএস, রংপুরে ৫০ এবং পীরগঞ্জে ২০ এমএমএসসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন টাউন বর্ডার স্টেশন স্থাপন করা হবে। রেজা