কোভিডকালীন সরকারি প্রণোদনা তৃণমূল মানুষ পায়নি : ড. আবুল বারকাত
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : ‘জমি, জলা ও প্রাকৃতিক সম্পদ-নির্ভর প্রান্তিক সম্প্রদায়ের জীবন ও জীবিকার ওপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব ও সংকট থেকে উত্তরণের পথ’ বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এএলআরডি’র এক ওয়েবিনারে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড. আবুল বারকাত এ কথা বলেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইচডিআরসি-র সহযোগিতায় ওই গবেষণাটি এএলআরডি করেছে।
এএলআরডি-র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদার সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে যুক্ত ছিলেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম সাইদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সানজিদা আক্তার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খায়রুল চৌধুরীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরা।
প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে ড. বারকাত আরো বলেন, এই সময় প্রান্তিক মানুষতাদের সম্পদ হারিয়েছে। ৬৯ ভাগ মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছে। ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে বাড়তি ব্যয়ের ধাক্কা সামলাতে ৭৬ ভাগ খানা তাদের খাদ্য পরিভোগ কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। জরিপকরা খানার এক-চতুর্থাংশ (২৪%) খানা মহামারিকালে ২১% কমে সম্পদ বিক্রি করতে বাধ্য হন। তিনি সরকারি প্রণোদনা যেন দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে সঠিক ভাবে বন্টিত হয় সেজন্য কার্যকর নজরদারির ব্যবস্থা চালু করতে হবে। তারা যেন ভর্তুকি ও স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা পান সেজন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতেহবে; কৃষিজীবি, মৎস্যজীবি, গবাদি পশু-পাখি প্রতিপালনকারী খামারিদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিশ্চিত করতে উপজেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্টসরকারিসংস্থা গুলোর সমন্বিত টাস্কফোর্স চালু করতে হবে এবং কর্মসংস্থানহীন আদিবাসীসহ অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক, পেশাগত সংখ্যালঘুদের জীবিকা সৃজনে অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে বলে সুপারিশ করেন।
এতে আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. এম সাইদুর রহমান বলেন, কোভিড কালীন সময় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক মানুষ সবচেয়ে বেশীক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। চাহিদার তুলনায় সেবার পরিমাণের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে বিভিন্নভাবে। তাছাড়া সরকারি ব্যবস্থাপনা, সমন্বয় এবং জবাবদিহিতার অভাবও গবেষণায় ফুটে উঠেছে। ফলে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে তৃণমূলের মানুষেরা বঞ্চিত হয়েছে এবং ৬৯ ভাগ মানুষ সংকটে পড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. খায়রুল চৌধুরী বলেন, গবেষণাটি অত্যন্ত তথ্যবহুল এবং বিষয়টি সামগ্রীক। এতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়াও মৌলবাদেও সৃষ্টির বিষয়টিও জাতি হিসেবে আমরা যে সংকটে পড়েছি তার থেকে পরিত্রানের জন্য তিনি বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের বিকল্প নেই বলে মনে করেন।
দিনাজপুর থেকে সিডিএ-র পরিচালক শাহ-ই-মবিন জিন্নাহ বলেন, এই গবেষণায় জীবন চক্রের প্রতিটি স্তর বা খাতের সার্বিক তথ্যের প্রতিফলন ঘটেছে। গবেষণা তথ্য উপাত্তে করোনাকালীন ২০২০ সালের ঘটে যাওয়া ঘটনার বাস্তবতা উঠেছে। এটিও প্রতীয়মান হয়েছে যে, বিষয়গুলো প্রকৃতিকে বাদ দিয়ে নয়। তিনি মনে করেন গবেষণার সুপারিশগুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে কাজ করা যেতে পারে।
ফরিদপুর থেকে যুক্ত হয়ে বিএফএফ-র নির্বাহী প্রধান আ.ন.ম. ফজলুল হাদি সাব্বির বলেন, গ্রামীণ মানুষ করোনার ভয়াবহতা খুব একটা অনুভব করতে পারেনি। তবে এর প্রভাব যে জীবনের ওপরে কতটা পরেছে তা অনুধাবন করেছে। তিনি মনে করেন, এই গবেষণায় খাত অনুযায়ি যে সব দিক নির্দেশণাগুলো সুপারিশ করা হয়েছে তা নিয়ে সকরারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুরুত্ব দিলে এই সংকট সবাই মিলেই মোকাবেলা করতে সক্ষম হবো।