জিডিপি বৃদ্ধির তুষ্টির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সূচকের কী হলো
বিশ^জিৎ দত্ত : গত অর্থবর্ষে করোনায় অর্থনীতির খারাপ দশার পরে চলতি অর্থবর্ষে (২০২১-২২) বাংলাদেশ ধারাবাহিক হারে বৃদ্ধির মুখ দেখবে বলে জানাচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক অর্থভা-ার থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপদেষ্টা সংস্থা। সম্প্রতি জাতিসংঘের একটি সংস্থা বলেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির বৃদ্ধি হবে ৭.২ শতাংশ হারে।
অর্থনীতিবিদদের মত, শুধু বৃদ্ধির হারকেই হাতিয়ার করে আত্মতুষ্টিতে ভোগা ঠিক নয়। কারণ এ বছর বৃদ্ধি হলেও তা প্রকৃতপক্ষে হয়েছে গত বছরের সঙ্কোচনের উপরে দাঁড়িয়ে। ফলে অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি বুঝতে হলে বেকারত্ব, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো সূচকের কতটা উন্নতি হল, তা দেখা জরুরি। তাছাড়া বৃদ্ধির পূর্বাভাস কতটা মিলিবে, তা নির্ভর করবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অর্থনীতির কী প্রভাব ফেলে তা থেকে। ২০১৮-১৯ সালে দেশের অর্থনীতির বৃদ্ধি ছিল ৮.১৫ শতাংশ হারে। ২০১৯-২০ সালে এটি কমে হয় ৫.২৪ হয়। অর্থাৎ করোনায় বৃদ্ধি কমেছিল ৩.৯শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাটা অনুযায়ি, দেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক সূচকগুলো খুব একটা ভাল নয়। গত বছরের চেয়ে রপ্তানি কমেছে .৩৬ শতাংশ। আমদানি কমেছে ৬.৮ শতাংশ। আভ্যন্তরীণ বাজারও সংকোচিত হয়েছে। টেলিকমিউনিকেশন, কম্পিউটার তথ্য প্রযুক্তি কমেছে গত বছরের ফেব্রুয়ারির থেকে এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে ২১ শতাংশ। সাধারণ ব্যাবসা কমেছে ৩ শতাংশ। সরকারি সেবা কমেছে ১০ শতাংশ। ট্রাভেল কমেছে ৫৭ শতাংশ। ক্যাপিট্যাল মেশিনারি আমদানি কমেছে ২০ শতাংশ। তুলা আমদানি কমেছে ১৪ শতাংশ। গড় মূল্যস্ফিতীও গত বছরের চেয়ে বেড়েছে .৩ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদ ও সাবেক এনবিআর সদস্য আমিনুর রহমানের মতে, নতুন করে কোনও বাধা না-এলে বৃদ্ধিতে গতি ফিরবে ঠিকই। কিন্তু সেই হিসেব মাপা হবে ২০১৯-২০২০ সালের সঙ্কোচনের উপর দাঁড়িয়ে! অর্থাৎ, তা নিয়ে আদৌ উচ্ছ্বসিত হওয়া যায় না। করোনার আগেই দেশে বেকারত্ব ছিল সর্বোচ্চ হারে। নতুন করে বেকারত্ব বাড়ছে। তাই শুধু জিডিপি নয়, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কত নতুন কাজ তৈরি হচ্ছে বা বেকারত্ব কী রকম দাঁড়াচ্ছে, সেটাও। আর প্রযুক্তিগত ভাবে দক্ষ উচ্চশিক্ষিত কর্মীদের সঙ্গেই অদক্ষ বা কম দক্ষ কর্মপ্রার্থীদের নিয়েই তার বিচার করতে হবে। সেই সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশের মতো মানব উন্নয়নের অন্যান্য সূচকও গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে। তিনি মনে করেন, করোনায় দেশে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যু হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি জানান, যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে আবার আর্থিক কর্মকা- তথা অর্থনীতি ধাক্কা খেতে পারে। যে কারণে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, সকলের কাছে ঠিকমতো প্রতিষেধক পৌঁছনো এবং তা কতটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলছে, এই তিন বিষয়েই উপরেই বৃদ্ধির পূর্বাভাসের বাস্তবায়িত হওয়া নির্ভর করবে।