প্রথম পাতা • মিনি কলাম • লিড ২
মহামারীতে প্রান্তিক পরিবারে ঋণ বেড়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সংহতি তহবিল গঠন করতে বললেন ড. দেবপ্রিয়
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বেসরকারি সংগঠন ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম’-এর আহ্বায়ক ও গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, প্রান্তিক মানুষের ওপর অতিমারীর যে প্রভাব পড়েছেÑ তা সংঘঠিত জাতীয় প্রভাবের চেয়ে বেশি। প্রথাগতভাবে যারা আগে বিপন্ন ছিলেন না, তারাও এখন বিপন্ন হয়ে পড়েছেন। শুধু ছোট ছোট প্রণোদনা না, স্থানীয় সরকার, জনপ্রতিনিধি ও উন্নয়ন সংস্থাদের সমন্বয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ২-৩ বছরের একটি মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং একটি ‘সামাজিক সংহতি তহবিল’ গঠন করা প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার ‘নাগরিক প্ল্যাটফর্ম’ আয়োজিত ‘কীভাবে অতিমারিকে মোকাবেলা করছে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী: একটি খানা জরিপের ফলাফল’ শীর্ষক এক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে জরিপ ফলাফল তুলে ধরেন জ্যেষ্ঠ গবেষক ইশতিয়াক বারি।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, কোভিড-১৯-এর অভিঘাত বহুমাত্রিকভাবে এসেছে যার প্রভাব কর্মসংস্থান, আয়, সঞ্চয় ছাড়াও পুষ্টিহীনতা, সহিংসতা ও শিক্ষাখাতে ঝরে পড়ার ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয়।
সামাজিক সংহতি তহবিলের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারি তদারকিতে এ তহবিল গঠিত হবে। ত্রাণ তহবিলের অর্থ সরকারি অনুদানের পাশাপাশি, বেসরকারি অনুদান থেকে আসবে। জাতীয় সামগ্রিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নিতে হলে যে মানুষগুলো জনমানুষের কাছাকাছি থাকেন, যেমন- স্থানীয় সরকার, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনকে আরও শক্তিশালীভাবে যুক্ত করতে হবে।
জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশকালে বলা হয়, গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ জুড়ে প্রায় ১ হাজার ৬০০ খানায় একটি সমীক্ষা চালানো হয়, যেখানে দশটি প্রান্তিক গোষ্ঠীর মুখোমুখি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
জরিপে বলা হয়, কোভিড-১৯-এর অর্থনৈতিক প্রভাব স্বাস্থ্য ও সামাজিক সম্পর্কিত প্রভাবগুলোর তুলনায় অনেক গভীরভাবে পড়েছে। আয়ের হ্রাস এবং ব্যয়ের থেকে সমাজে সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষগুলো পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেনি। বিপুল সংখ্যক পরিবার ঋণের জালে পড়েছে এবং তাদের সঞ্চয় হারাচ্ছে। দশটি প্রান্তিক গ্রুপের মধ্যে, ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ী, প্রতিবন্ধী, বস্তিবাসী ও চরের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের বাড়তি ব্যয় ও ঋণ পরিশোধে সহায়তা দরকার।
সরকারিভাবে নগদ আর্থিক সহায়তা দিয়ে এ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের বর্তমান কোভিড -১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা করতে সাহায্য করা উচিত। এজন্য আসন্ন জাতীয় বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা নেট কর্মসূচির অধীনে এবং এর বাইরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সুস্পষ্ট আর্থিক বরাদ্দ করা প্রয়োজন।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত মার্চ ২০২০-এর তুলনায় ফেব্রুয়ারি ২০২১-এ প্রান্তিকগোষ্ঠীর আয় ১৫.৮ শতাংশ ও ব্যয় ৮.১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এ পরিবারগুলোর প্রায় ৭৮.৮ শতাংশ অতিমারীর ফলে আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল, যার ৭৮.৫ শতাংশই পুনরুদ্ধার হয়নি।
সমীক্ষা করা পরিবারের প্রায় ৬০.৮ শতাংশ পরিবারকে বিকল্প পন্থা হিসেবে ঋণ নিতে হয়েছিল এবং সেটি পরিশোধ করতে তাদের গড়-পড়তা প্রায় দুই বছর সময় লাগতে পারে।
এতে বলা হয়, কোভিড সমস্যার কারণে ৮০ দশমিক ৬০ শতাংশ পরিবার খাদ্যগ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে চরের ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ, হাওরের ৭৮ দশমিক ৯০ শতাংশ, উপকূলের ৬৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, বস্তির ৭৮ দশমিক ৮০ শতাংশ, দলিত ৬৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, আদিবাসী ৮৯ দশমিক ২০ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ৮০ দশমিক ৪০ শতাংশ, অভিবাসী ৭৮ দশমিক ১০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশ পরিবার খাবার গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছেন।
অপরদিকে খাদ্যবহির্ভূত খরচ কমিয়ে দিয়েছে ৬৪ দশমিক ৫০ শতাংশ পরিবার। এর মধ্যে চরের ৫৮ দশমিক ৭০ শতাংশ, হাওরের ৭০ দশমিক ৪০ শতাংশ, উপকূলের ৩৮ দশমিক ৪০ শতাংশ, বস্তির ৬১ দশমিক ৬০ শতাংশ, দলিত ৪১ দশমিক ৮০ শতাংশ, আদিবাসী ৮৩ দশমিক ৩০ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ৫৮ শতাংশ, অভিবাসী ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ৭৪ দশমিক ১০ শতাংশ পরিবার খাদ্যবহির্ভূত খরচ কমিয়ে দিয়েছেন। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও