হুমায়ুন আইয়ুব
মানবজাতির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যে সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে এর মূলে আছে পরিবার তথা ‘বিয়ের বন্ধন’। ইসলামে একাধিক বিয়ের অনুমোদনের বিষয়টি অনেকে বাঁকা চোখে দেখার চেষ্টা করেন। বাঁকা চোখে তাকানোটা ইতিহাস অজ্ঞতার কারণেও হতে পারে। অনেকের ধারণা ইসলাম ধর্মের আগে বোধ হয় একটি বিয়েরই প্রচলন ছিল, ইসলাম তা বৃদ্ধি করে চার বিয়েতে উন্নীত করেছে। অথচ বাস্তবতা ভিন্ন।
ইতিহাস সম্পর্কে যাদের প্রাথমিক ধারণা আছে তারাও জানেন যে, ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে আরবের জাহেলিয়াত সমাজে নারীদের কোনো মর্যাদাই ছিল না। নারীদের উপর শুধু জুলুম-নির্যাতন নয়, যেনতেন প্রকার আচরণ করা হতো। নারীদের সম্ভোগ কিংবা তথাকথিত বিয়ের কোনো সীমা বা সংখ্যা ছিল না। নারীদের অবস্থা এতটাই অবমাননাকর ছিল যে, কোনো পরিবারে কন্যাশিশু জন্মগ্রহণ করলে সে পরিবারের মুখ মলিন হয়ে যেত এবং কন্যাশিশুকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। বিয়ে সম্পর্কে ইসলামের যে পবিত্র ধারণা এবং স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি পরস্পরের যে দায়িত্ব ও সম্মানের চেতনা তা তখনকার সমাজে ছিল না। তখনকার সমাজের মেয়েদের নিরাপত্তা, সম্মান ও অধিকারকে প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামে বিয়ের বিধি-বিধানকে সুস্পষ্ট করা হয় এবং দায়-দায়িত্বহীন অসংখ্য বিয়েকে নিষিদ্ধ করে বাস্তব প্রয়োজনে সর্বোচ্চ চারটিতে সীমাবদ্ধ করা হয়। শুধু তাই নয়, এ কথাও সুস্পষ্টভাবে বলা হয় যে, ইনসাফ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিশ্চিত হতে না পারলে তোমাদের জন্য একটি বিয়েই উত্তম। এ ছাড়াও ইসলাম যৌন পবিত্রতা রক্ষায় বহু বিয়ের অনুমতি দিয়েছে। জাহান্নামের নির্মম শাস্তি থেকে মুক্তি এবং চারিত্র্যিক পবিত্রতা রক্ষার একটাই উপায়Ñ ইসলামের শিক্ষার ওপর আমল করা; আল্লাহ যার আদেশ করেছেন। কুরআন বলছে, ‘তোমরা যাদের ভালোলাগে দুটি, তিনটি, চারটি করে বিয়ে করো।’ স্বাভাবিক যৌন তাড়না বিয়ের মাধ্যমে বৈধভাবে মিটাবে। বিয়ে এক থেকে চারটা পর্যন্ত একসাথে করা যায়। তবে শর্ত হলোÑ তাদের মাঝে সাম্য ও সমতা রক্ষা করতে হবে। একইভাবে সবার হক আদায় করতে হবে। একাধিক বিয়ের অনুমতি কামপ্রবণ ব্যক্তিদের জন্য ইসলামের এক প্রতিষেধক ব্যবস্থা মাত্র। উদ্দেশ্য এটা নয় যে, একাধিক স্ত্রী রাখতেই হবে বা অনর্থক একাধিক বিয়ে করবে। বরং প্রয়োজনে একাধিক বিয়ে করা যায়। কুরআন বলেছে, ‘আর যদি মনে করো তাদের মাঝে সমতা বিধান করতে পারবে না তাহলে একটি বিয়েই করো। এটাই পক্ষপাতিত্ব না করার অধিকতর সম্ভাবনা।’ সম্পাদনা : সুমন ইসলাম