আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ১
করোনায় চাল আমদানি ২ হাজার গুণ বাড়লেও মেশিনারি কমেছে ২০ ভাগ
বিশ্বজিৎ দত্ত : করোনায় দেশে চাল আমদানি বেড়েছে প্রায় ২ হাজার গুণ। অন্যদিকে ক্যাপিটাল মেশিনারি ও শিল্পে ব্যবহৃত পণ্য আমদানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। কিন্তু অপরিশোধিত জ¦ালানি তেলের আমদানি বেড়েছে ৪৩০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ি, ২০১৯-২০ সালের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে চাল আমদানি হয়েছিল ১৫ মিলিয়ন ডলার। ২০২০-২১ সালের একই সময়ে চাল আমদানি হয়েছে ৩৭৭ মিলিয়ন ডলার। টাকার হিসাবে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ২৩৮১ গুণ।
তবে এই সময়ে গম আমদানি কমেছে, ২০১৯-২০ সালে ১১৯১ মিলিয়ন ডলারের গম আমদানি হলেও ২০২০-২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গম আমদানি হয়েছে ১১৭২ মিলিয়ন ডলারের গম। এই ’হিসাবে গম আমদানি গড়ে কমেছে ১.৬৩ শতাংশ।
সবমিলিয়ে ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে দেশে খাদ্য সামগ্রী আমদানি বেড়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ। ২০১৯ সালে যেখানে খাদ্য সামগ্রী আমদানি হয়েছিল ১২৭ মিলিয়ন ডলারের সেখানে ২০২০ সালে আমদানি হয়েছে ১৫৫০ মিলিয়ন ডলারের খাদ্য সামগ্রী।
চাল আমদানি বৃদ্ধির প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিজি, ড. শাহজাহান কবির জানান, দেশে গতবছর চালের উৎপাদন ২০ থেকে ৩০ লাখ টন বেশি উৎপাদন হয়েছিল। করোনার সময় সরকার গরীব মানুষদের মধ্যে চাল বিতরণ করেছে। তাতে সরকার আপদকালীন মজুদের কিছুটা ঘাটতি হয়। ফলস্বরূপ যেখানে সরকারের মজুদ থাকে ১২ লাখ টন সেখানে মজুদের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ টন। ব্যবসায়ীরা সরকারের এই ঘাটতিকে কাজে লাগিয়ে চাল মজুদ করে ফেলে। ফলে বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পায়। সরকার এই সময়ে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। যাতে বাজারে চালের দাম ঠিক থাকে। বেসরকারিভাবেও চাল আমদানির সুযোগ দেয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে দেশে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি হয়েছে।
খাদ্য আমদানি বাড়লেও কমেছে বড় শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি। ২০১৯ সালে যেখানে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি ছিল ২৮১৪ মিলিয়ন ডলারের। ২০২০-২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা কমে যায় প্রায় ২১ শতাংশ। এই সময়ে আমদানি হয়, ২২২৪ মিলিয়ন ডলারের মেশিনারি। কাঁচামাল আমদানি কমে সাড়ে ৪ শতাংশ। তবে একই সময়ে ক্যামিক্যাল, ফার্মাসিউটিক্যাল ও অপরিশোধিত জ¦ালানি তেলের আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১৯-২০ সালে ফর্মাসিউটিক্যালের কাঁচামাল আমদানি হয়েছিল ২১৭ মিলিয়ন ডলারের। ২০২০-২১ সালে আমদানি হয়েছে ২৩০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।
অপরিশোধিত জ¦ালানি তেলের আমদানি ছিল ২০১৯-২০ সালে ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের। ২০২০-২১ সালে আমদানি বাড়ে প্রায় ৪৩০ শতাংশ। এই সময়ে আমদানি হয় ২৩৮৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। একইসময়ে ক্যামিক্যাল আমদানি হয়েছে ১৮৮৪ মিলিয়ন ডলারের।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও সাবেক এনবিআর সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, করোনায় দেশে শিল্প উৎপাদন কমেছে এতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু সামনের চ্যালেঞ্জ হলো এই কমে যাওয়াকে আমরা কীভাবে আবার গতিতে নিয়ে আসতে পারবো। ফার্মাসিউটিক্যাল কাঁচামালের যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সেটিও কোন আশা জাগাচ্ছে না। কারণ প্রবৃদ্ধি খুবই কম। কেমিক্যালের সঙ্গে তুলনা করলেই এটি পরিস্কার হয়। কেমিক্যাল আমদানি বেড়েছে কারণ সরকার করোনার কারণে নানা ধরনের কেমিক্যালের শুল্ক সুবিধা দিয়েছে। করোনায় এসব কেমিক্যাল মানুষ ব্যবহার করছে।
কিন্তু করোনায় মানুষ নানা কারণে অসুখ হলেও চিকিৎসা নিচ্ছে না। তাই ওষুধ বিক্রিও কম হচ্ছে। কারণ মানুষের আয় কমে গেছে। সব মিলিয়ে আমাদের অর্থনীতি আসলে সংকটে রয়েছে। কোন সেক্টরই আসলে ভালভাবে চলছে না। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা