প্রথম ত্রৈমাসিকে অ্যামাজনের রেকর্ড বিক্রি ১০৮.৫ বিলিয়ন ডলার
রাশিদ রিয়াজ : আশাতীত সফলতা হিসেবে এ বিক্রিকে দেখছে অ্যামাজন। এর আগে কখনো প্রথম ত্রৈমাসিকে এত বিক্রি হয়নি। মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার মূল্য নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছেছে। কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস বলেছেন বিশে^ তার কোম্পানির এ আর্থিক সফলতা মহাকাশ গবেষণা আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। তার সম্পদের পরিমাণ এখন ২০২ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে এ কোম্পানিটির গত বছরের চাইতে এবার প্রথম ত্রৈমাসিকে বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৪ শতাংশ। বাজার বিশ্লেষকরা এ বিক্রির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন ১০৪.৫ বিলিয়ন ডলার। অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসের নেট আয় প্রতি শেয়ারে বেড়েছে ১৫.৭৯ শতাংশ। যার মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে ৮.১ বিলিয়ন ডলার। অথচ বাজার বিশ্লেষকরা ধারণা করেছিলেন শেয়ারমূল্য ৯.৫৪ ডলার বাড়তে পারে। আর মোটের ওপর তা বৃদ্ধি পেতে পারে আড়াই বিলিয়ন ডলার। ফোর্বস
গত বৃহস্পতিবার শেয়ার বাজারে লেনদেন শুরু হলে অ্যামাজনের শেয়ার মূল্য এক ঘণ্টার ব্যবধানে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ১৫ বছরের ব্যবধানে অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিস বার্ষিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করতে সমর্থ হল। ইতিমধ্যে অ্যামাজন বিশে^র বৃহত্তম প্রযুক্তি কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে এবং এর প্রবৃদ্ধি বছরে ৩২ শতাংশ হারে বাড়ছে। এক বিবৃতিতে অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও জেফ বেজস বলেন এয়ারবিএনবি, ম্যাকডোনাল্ডস, ফক্সওয়াগনের মত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও তাদের পক্ষে নিরলসভাবে উদ্ভাবন চালিয়ে যাওয়াই সফলতার মূল কারণ।
১৯৯৪ সালে সিয়াটলে একটি গ্যারেজ থেকে অনলাইনে বই বিক্রি থেকে জেফ বেজোস যাত্রা শুরু করেছিলেন। এরপর ক্লাউড স্টোরেজ, ভিডিও স্ট্রিমিং, গ্রোসারিসহ বিভিন্ন ব্যবসার ডালপালা গজিয়ে বিশে^র বৃহৎ কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে অ্যামাজন। গত বছর কোভিড মহামারীর মধ্যে অ্যামাজনের ৫৬ শতাংশ বিক্রি বাবদ ৩৮৬ বিলিয়ন ডলার আসে অনলাইন বিক্রি থেকে। বাকি বিক্রি আসে অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিস, অ্যামাজন প্রাইম ও বিজ্ঞাপন থেকে। গত ফেব্রুয়ারিতে জেফ বেজোস সিইও পদ থেকে সরে দাঁড়ান যার আগে তিনি ২৭ বছর ধরে ওই দায়িত্ব পালন করেন। অ্যামাজনের পরিষেবাগুলো আরো বৃদ্ধি বা অন্তত দ্বিগুণ করতে সিইও হিসেবে দায়িত্ব নেন এডাব্লুএস এর প্রধান নির্বাহী অ্যান্ডি জ্যাসি।
ব্লুমবার্গ পূর্বাভাস দিচ্ছে আগামী বছর অ্যামাজনের শেয়ার মূল্য ৩ হাজার ৯৯৩ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। বর্তমানে এর শেয়ার মূল্য রয়েছে ৩ হাজার ৪৭৪ ডলারে। অর্থাৎ আগামী বছর কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। গত বছর থেকে কোভিড মহামারী অ্যামাজনের বিক্রি প্রবৃদ্ধিকে শীর্ষে নিয়ে গেছে। শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ। এর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার। অথচ গত বছর চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের যোগান ঠিক রাখতে না পেরে অ্যামাজন অনেক পণ্য বিক্রি করতে পারেনি। এ অবস্থা হয় ওয়ালমার্ট, টার্গেট, ই বে সহ অন্যান্য কোম্পানির। বিনিয়োগ ব্যাংক ডি এ ডেভিডসনের সিনিয়র গবেষণা বিশ্লেষক টম ফর্টি মহামারীর শুরুতেই নিত্যপণ্য সরবরাহের কৌশলগত পরিকল্পনা হাতে নিয়ে তার ফল পেয়েছে অ্যামাজন। গত বছর প্রচুর মুনাফা করতে সমর্থ হয় কোম্পানিটি। লকডাউনে ঘরবন্দী মানুষকে সেবা দিয়ে গড়ে নতুন রেকর্ড।
সাম্প্রতিক এক ব্লগ পোস্টে এ ব্যাপারগুলো তুলে ধরে অ্যামাজন জানায়, রেকর্ড ভেঙে দেওয়া ছুটির মৌসুম পার করেছে তারা। এ ছাড়াও এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় গ্রাহক সঞ্চয়, ছোট ব্যবসায়ের বৃদ্ধি, কমিউনিটি দান দেখেছে তারা। গত বছর অ্যামাজন একশ ৫০ কোটি খেলনা, গৃহস্থালী পণ্য, বিদ্যুতচালিত পণ্য এবং সৌন্দর্য ও ব্যক্তিগত যতœ পণ্য সরবরাহ করে। যুক্তরাষ্ট্রের ছোট এবং মাঝারি ব্যবসার প্রায় একশ কোটি পণ্য অ্যামাজন মারফত বিক্রি হয়। যার ফলে এর আগের বছর ২০১৯ সালের তুলনায় গত বছর ছুটির মৌসুমে তৃতীয় পক্ষীয় ব্যবসা বিশ্বব্যাপী বিক্রি ৫০ শতাংশ বাড়তে দেখা গেছে। সম্পাদনা : রেজা