আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ২
রাজধানীতে সপ্তাহ ব্যবধানে চিনি দুধ তেল ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে
মাসুদ মিয়া : রাজধানীতে সপ্তাহ ব্যাবধানে চিনি দুধ তেল ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় বোতল ও খোলা উভয় ধরনের সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে পাম সুপার তেলের দাম। বোতলের সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বেড়েছে পাঁচ টাকা। আর খোলা সয়াবিন ও পাম সুপারের দাম কেজিতে চার টাকা বেড়েছে।
এদিকে কিছুটা দাম কমার পর আবার বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা করে। চিনির প্যাকেট কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১ কেজি ৭৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খোলা চিনি ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দুধের কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। কিছুদিন আগে হাফ লিটার দুধ ছিল ৩৫ টাকা গতকাল সে দুধ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা । ১ লিটার দুধ ছিল ৭০ টাকা সে দুধ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজি।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বোতলের সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দিলেও বাজারে নতুন দামের তেল এখনও আসেনি। বাজারে এক লিটারের যে বোতল ১৩৫ টাকা ছিল সেই তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। তবে বেশিরভাগ খুচরা ব্যবসায়ী এই তেল বিক্রি করছেন ১৪৫ টাকা। অবশ্য কোনো কোনো ব্যবসায়ী ১৪০ টাকাও বিক্রি করছেন।
পাঁচ ভাই ঘাট লেন ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম মুকুল বলেন, চিনি তেল দুধের দাম বেড়েছে এক লিটার সয়াবিন তেল ১৪০ টাকায় বিক্রি করছি। গত সপ্তাহ বিক্রি করেছি ১৩৫ টাকা। তিনি জানান বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তেলের বাজার বাড়তি। এক লিটারের বোতল নিতে হলে ১৪০ টাকায় দিতে হবে।
খোলা সয়াবিনের দাম বাড়ার তথ্য মিলেছে অন্য বাজারগুলোতেও। দুদিন আগে ১৩০ থেকে ১৩২ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া খোলা সয়াবিন তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৩৬ টাকা। এর সঙ্গে বেড়েছে পাম সুপারের দাম। ১২০ থেকে ১২২ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাম সুপারের দাম বেড়ে ১২৫ থেকে ১২৭ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. আফজাল বলেন, হঠাৎ করেই তেলের দাম বেড়ে গেছে। পাইকারি বাজারে সয়াবিন ও পাম সুপারের দাম বাড়ার আমরা বাড়তি দামে বিক্রি করছি। দুদিন আগে খোলো সয়াবিন ১৩০ টাকা কেজিও বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন ১৩৫ টাকার নিচে বিক্রি করার সুযোগ নেই। দুই-একদিনের মধ্যে বোতলের তেলের দামও বাড়বে। কোম্পানির লোক এসে দাম বাড়ার তথ্য দিয়ে গেছে।
এদিকে গত সপ্তাহে কিছুটা দাম কমার পর আবার বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে পেঁয়াজ আবার ৪০ টাকায় উঠেছে, যা গত সপ্তাহে ৩৫ টাকায় নেমেছিল।
পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে লক্ষ্মীবাজারে নাজমুল হোসেন বলেন, লকডাউনের কারণে যারা গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন তাদের অনেকে আবার ঢাকায় ফিরেছেন। এ কারণে পেঁয়াজের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। এর ফলে দাম বেড়েছে।
সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে নতুন আসা ফুলকপি প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এর সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে কিছু সবজির দাম কমেছে।
রোজার শুরুতে ১২০ টাকায় উঠে যাওয়া বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এই সবজিটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে রোজার শুরুতে অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়া শসার দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে। মানভেদে শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ টাকা এবং রোজার শুরুতে ছিল ৮০ টাকা।
দাম কমার তালিকায় রয়েছেÑ পটল, বরবটি, ঢেড়স, ঝিঙে। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। গত শুক্রবার ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটির দাম কমে ৪০ থেকে ৫০ টাকা হয়েছে। ঢেড়সের কেজিও বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
গত সপ্তাহের মতো ৬০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হওয়া ঝিঙের দাম কমে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে লাউ প্রতিটি আগের সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
বেশিরভাগ সবজির দাম কমার মধ্যে সজনের ডাটার দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া সজনের ডাটার দাম বেড়ে ৮০ থেকে ৯০টাকা হয়েছে। পাকা টমেটো আগের সপ্তাহের মতো ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে নতুন আসা কাঁকরোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। কাঁকরোলের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে কচুর লতি। এক কেজি কচুর লতি কিনতে গুনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, আমাদের ধারণা ছিল সবজির দাম আরও বাড়বে। কিন্তু সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সবজির দাম বাড়ার বদলে কমে গেছে। সামনে কিছু সবজির দাম আরও কমবে। তবে ঈদের পর সবজির দাম বাড়তে পারে।
এদিকে গত সপ্তাহে দাম কমা ব্রয়লার ও পাকিস্তানি কক বা সোনালী মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। গত শুক্রবারের মতো ব্রয়লার ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি কক ২৩০-২৭০টাকা কেজি। চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মিনিকেট গত সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে কেজি ৬৬ টাকা ২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা। দেশি আদা ও রসুন ৮০ টাকা এবং রসুন চায়না ১১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মোটা দানা ৭০ টাকা, মুগ ডাল ১২০ টাকা, মটর ডাল ১০০ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা আর খেসারি ৮০ টাকা, মাছের দামও কিছুটা বেড়েছে । প্রতি কেজি রুই মাছের দাম (আকারভেদে) ১৮০ থেকে ৩৫০ টাকায়, মাগুর মাছ ৪০০ টাকায়, প্রতি কেজি শিং মাছ (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৪০০ টাকায়, মৃগেল ১১০ থেকে ১৪০ টাকায়, পাঙ্গাস ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়, ইলিশ প্রতি কেজি (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে হাজার টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায়, কাতল ১৭০ থেকে ৩০০ টাকায়, ফোলি মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, পাবদা মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়, টেংরা মাছ ১৮০ থেকে ২৫০ টাকায়, টাটকিনি মাছ ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়, তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়, সিলভার কার্প ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়, কাঁচকি ও মলা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, রূপ চাঁদা মাছ কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সম্পাদনা : রেজা