নতুন বাজেটে শেয়ার বাজারের লিস্টেড কোম্পানিগুলোর কর্পোরেট ইনকাম ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়া দরকার
আব্দুল্লাহ মামুন : এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, শেয়ার বাজারে ভালো কোম্পানিগুলো আনতে এই একটি সিদ্ধান্তই যথেষ্ট। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সেঞ্জ কমিশন পরামর্শ দিয়েছে লিস্টেড এবং নন লিস্টেড কোম্পানির মধ্যে ১৫ শতাংশ ব্যবধান তৈরি করার জন্য। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে শেয়ার মার্কেটের জন্য অন্য কোনো কিছুর প্রয়োজন হবে না। কালো টাকা সাদা করার প্রয়োজন হবে না। শেয়ার বাজারে ভালো কোম্পানিগুলো না আসার কারণ, তারা মনে করে এখানে এসে তাদের লাভ কী? সারা পৃথীবিতে কর্পোরেট ইনকাম ট্যাক্স অনেক কম যা আমাদের দেশের সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে ব্যবসাবান্ধব ট্যাক্স নির্ধারণ হওয়া উচিত। ব্যবসা বিরূপ ট্যাক্স সিস্টেম নির্ধারণ করা সঠিক নয়। শেয়ার বাজারের জন্য সরকার যদি কিছু করতে চায় তাহলে লিস্টেড কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে কর্পোরেট ইনকাম ট্যাক্স আরও কমানো উচিত। বর্তমানে ২৫ শতাংশ ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি আরও ৫ শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশ করা উচিত এবং সর্ব্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ থেকে আনুপাতিক হারে কমনো উচিত। এর ফলে ভালো কোম্পানিগুলো লিস্টে আসবে ট্যাক্স রিলিফ পেতে লিস্টেড হবে অন্যথায় তারা কেন আসবে?
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ লভ্যাংশ প্রদানের সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে, যা মোটেও সঠিক সিদ্ধান্ত হয়নি। বাংলাদেশ বর্তমানে মুক্ত বাজার অর্থনীতি অনুসরণ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত মুক্তবাজার অর্থনীতির মূল চেতনার পরিপন্থি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার উচিত। কারণ এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ ছাড়া এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে পারতো। বিনিয়োগকারীরা অধিক হারে মুনাফা অর্জন করতে চায়। কিন্তু মুনাফার সর্বোচ্চ হার যদি নির্ধারণ করে দেওয়া হয় তাহলে বিনিয়োগকারী নিরুৎসাহিত হবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক একদিকে বলছে তারা শেয়ার বাজারের ভালো চায় আবার অন্য দিকে সর্বোচ্চ লভ্যাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ভূমিকা স্ববিরোধী বলে মনে হচ্ছে। একটি কোম্পানির সর্বোচ্চ কতো ডিভিডেন্ড দিতে পারবে তা কোনো দেশেই নির্ধারণ করে দেওয়া হয় না। কোম্পানি তার সামর্থ মতো ডিভিডেন্ড দেবে এটাই রীতি। আশা করি বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে অর্থনৈতিক সেক্টরের আর্থিক ভীত শক্ত করবে। কিন্তু এভাবে আর্থিক ভীত শক্ত করা যায় না। তারা যদি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভীত শক্তিশালী করতে চায় তাহলে প্রভিশনিং ব্যবস্থা কড়াকড়ি করতে হবে। খেলাপিঋণ আদায়ের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।
তিনি বলেন, এছাড়া ডিভিডেন্ড ইনকাম ট্যাক্স যদি ১ লাখ টাকা পর্যন্ত মওকুফ করা যায় তাহলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য খুবই ভালো হবে। ডিভিডেন্ড ইনকাম অর্থাৎ কোম্পানি থেকে যে মুনাফা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পায় সেটি ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ট্যাক্স মওকুফ করা, যারা এটি রিসিভ করবে তাদের আর ট্যাক্স দিতে হবে না। এছাড়াও ১০ শতাংশ তো কেটে নেওয়া হয়। আমাদের ট্যাক্স সিস্টেম কমেপ্লেক্স ও বিনিয়োগ বিরোধী যার ফলে শেয়ার বাজারে ভালো কোম্পানি লিস্টে আসতে চায় না। কোম্পানিগুলো শেয়ার বাজারে লাভের জন্য আসবে এরপর তিনমাস পর পর রির্পোট করতে হয়, তাহলে কোম্পানি গুলোর সুবিধাটি কী? তেমন কোনো সুবিধা এখানে নেই! যেমনÑ হেল্থ কেয়ার, ইনসেপ্টা, পপুলার এই তিনটি কোম্পানির উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে কিন্তু তাদের নাম শেয়ার বাজারে নেই। এই বিষয় কোম্পানির পরিচালকের মন্তব্য চাইলে তাদের প্রথম প্রশ্ন হবে, শেয়ার বাজারে এসে লাভ কী। কোম্পানির লাভ বুঝাতে হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে এবং অর্থমন্ত্রণালয়কে তাদের ট্যাক্স রিলিফের বিষয়টি নিশ্চত করতে হবে, সেটি লিস্টেড ও নন লিস্টেডে কোম্পানিগুলোর মধ্যে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ ব্যবধান হবে। শেয়ার বাজারে ভালো কোম্পানির যে অভাব সেই ঘাটতি পূরণ করতে এই একটি সিদ্ধান্তই যথেষ্ট। সম্পাদনা : রেজা