আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ১
নাগরিক সংলাপ বাজেট ২০২১-২২ নতুন করারোপ না করা, কর না বাড়ানো ও কালোটাকা বৈধ করার সুযোগ বন্ধের পরামর্শ
সোহেল রহমান : চলমান কোভিড প্রেক্ষাপটে আগামী বাজেটে দেশের প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা এবং তা বাস্তবায়নের জন্য সঠিক দিক নির্দেশনা প্রয়োজন। একই সঙ্গে কোভিড থেকে পুনরুদ্ধারে বাজেটে ২-৩ বছর মেয়াদী একটি কৌশল নির্ধারণ করা দরকার। অন্যদিকে আগামী বাজেটে নতুন কর আরোপ না-করা এবং কর হার না-বাড়িয়ে প্রশাসনিক দক্ষতা ও কর ফাঁকি রোধের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ বন্ধ করার সুপারিশ করেছে বেসরকারি সংগঠন ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম’।
রোববার ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম’ আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২২: পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কী থাকছে’ শীর্ষক সংলাপে এসব সুপারিশ তুলে ধরেন সংগঠনের আহ্বায়ক ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ’ (সিপিডি)-এর সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, বর্তমান কোভিড-১৯ অতিমারি বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু দেশের প্রান্তিক এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ওপর এ অতিমারীর অভিঘাত অনেক বেশি। প্রান্তিক মানুষের ওপর অতিমারীর ফলে যে প্রভাব পড়েছেÑ তা সংঘটিত জাতীয় প্রভাবের চেয়ে বেশি। প্রথাগতভাবে যারা আগে বিপন্ন ছিলেন না তারাও এখন যুক্ত হয়েছেন। বিপুল সংখ্যক পরিবার ঋণের জালে পড়েছে এবং তাদের সঞ্চয় হারাচ্ছে। প্রতিবন্ধী, বস্তিবাসী ও চরের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের বাড়তি ব্যয় ও ঋণ পরিশোধে সহায়তা দরকার। বর্তমান কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় আসন্ন জাতীয় বাজেটে প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সুস্পষ্ট আর্থিক বরাদ্দ (সামাজিক সুরক্ষা নেট কর্মসূচির অধীনে ও এর বাইরে) থাকা দরকার এবং একটি নতুন ‘সামাজিক সংহতি তহবিল’ তৈরি করে কর্পোরেট ও বেসরকারি অনুদানের জন্য আর্থিক উৎসাহ (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে) বিবেচনা করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, গত অর্থবছর আমরা এক অদ্ভূত সময়ের মধ্যে পার করেছি। ওই বছর কর আদায়ের হার ও সরকারের ব্যয় কমেছিল। চলতি অর্থবছরেও কর আদায় ও সরকারি ব্যয়ের হার প্রয়োজনের তুলনায় কমেছে। গত মার্চ পর্যন্ত এডিপি-তে মোট বরাদ্দের ৪২ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৩ শতাংশ কম। অন্যদিকে রাজস্ব আদায়ের হার বাড়লেও অর্থবছরের ৯ মাসে লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশ রাজস্ব আদায় হয়েছে।
বাজেট ঘাটতি ৬ শতাংশ কিংবা এর বেশি হলেও তা সহনীয় হতে পারেÑ এমন মত ব্যক্ত করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, তবে বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মেগা প্রকল্পগুলোর পরিবর্তে যেসব প্রকল্প সমাপ্তির পথে সেগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক অর্থায়নের ওপর জোর দিতে হবে। বর্তমানে বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক ব্যবস্থা ও সঞ্চয়পত্র খাত থেকে সরকারের ঋণ অনেক বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, আগামী বাজেটে নতুন কোনো করারোপ কিংবা কর হার বৃদ্ধি করা উচিত হবে না। প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে কর আদায় বৃদ্ধি এবং কর ফাঁকি কমিয়ে আনতে হবে। যারা কর দেয় না, তাদের কাছ থেকে কর আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। নিয়মিত করদাতাদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
ব্যবসায়ীক গোষ্ঠীর জন্য যেসব বিভিন্ন রেয়াতি সুবিধা রয়েছে, সেগুলো এখন বাদ দিতে হবে। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ বাজারে শ্রমঘন শিল্পের ক্ষেত্রে কর হার নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখা জরুরি।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগকে অযৌক্তিক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে যুক্তিহীন, নৈতিকভাবে গর্হিত ও রাজনৈতিকভাবেও অপকারী হচ্ছে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া; পাচারকৃত অর্থ ফেরত না আনা ও অর্থ পাচারকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় না আনা। এসব সুযোগ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। একদিকে দরিদ্রের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি করতে পারব না, অন্যদিকে অবৈধ অর্থ বৈধ করার সুবিধা স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও