আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ৫
বাংলাবাজার ঘাটে ফেরিতে ভিড়ের চাপে ৫ জনের মৃত্যু, আহত অর্ধশতাধিক
ইমতিয়াজ আহমেদ : বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের পদ্মানদীতে একটি রোরো ফেরিতে আসছিল কয়েক হাজার যাত্রী। ফেরির যানবাহন রাখার খোলা জায়গায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। প্রখর রোদের তাপে ফেরি যখন বাংলাবাজার ঘাটের কাছাকাছি এসেছে তখনই অসুস্থ হয়ে পরতে শুরু করে যাত্রীরা। পানির পিপাসা আর গরমে হাঁসফাঁস করতে থাকে তারা। ওই ফেরিতে পার হওয়া একাধিক যাত্রীর বর্ণনা ছিল এমনই।
ফেরিটি বাংলাবাজার ঘাটে ভিড়লে অসুস্থ যাত্রীদের মধ্যে চারজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এছাড়া পন্টুনে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরকে মরে পরে থাকতে দেখা যায়। অসুস্থ অর্ধশতাধিক যাত্রীকে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়।
বুধবার দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। নিহত যাত্রীরা ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিল।
বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বেলা ১১টার দিকে শিমুলিয়া থেকে রোরো ফেরি এনায়েতপুরীতে উঠেন কমপক্ষে তিন হাজার যাত্রী। ফেরিটি মাঝপদ্মায় যাওয়ার পরে তীব্র গরমে ফেরির ডেকে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পরে। ফেরিটি শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে এসে ভিড়লে দেখা যায় কমপক্ষে অর্ধশতাধিক যাত্রী জ্ঞান হারিয়ে পরে আছে। এদের মধ্যে এক কিশোর, দুইজন নারী ও দুইজন পুরুষের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার বালীগ্রাম এলাকার নিপা আক্তার (৩৪) এবং শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কলিকা প্রসাদ এলাকার মো. গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মো. আনচুর মাতুব্বর (১৪) এর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকীদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
নিহত নিপা আক্তারের ছেলে রিফাত হোসেন(১৪) কান্নারত অবস্থায় জানান, ‘তার মা ফেরিতে থাকার সময় কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে ফেরি যখন ঘাটে ভিড়ে তখন লোকজন নামতে শুরু করে। এ সময় সেও ব্যাগ হাতে নেমে আসে। পন্টুনে নামার পর তাকে মাকে দেখতে না পেয়ে খুঁজতে থাকে ভিড়ের মধ্যে। লোকজন নেমে গেলে ফেরির ডেকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে সে।’
আমির হোসেন নামের এক যাত্রী জানান, ‘ফেরিতে প্রচুর ভিড়। ফেরির ডেকে বেশির ভাগ যাত্রী গায়ের সাথে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় দাঁড়িয়ে থেকে ফেরি বাংলাবাজার ঘাটে ভিড়ার আগেই অনেকে অসুস্থ হয়ে পরে। লোকজনের ভিড়ে আমরা প্রায় শ্বাস নিতে পারছিলাম না। তার উপর রোদের কড়া তাপ। অনেকেই পানির জন্য চেঁচামেচি করছিল।’
বাংলাবাজার ঘাটের একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘ভিড়ের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লে ফেরি যখন ঘাটে ভিড়ে তখন হাজার হাজার মানুষে নামতে শুরু করে। এসময়ই অসুস্থ লোকগুলো চাপে পড়ে মারা যায়। অসুস্থ হয় অনেকে। তাদেরকে পিকআপে করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।’
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজ হোসেন বলেন, ‘হিটস্ট্রোকে মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, প্রচন্ড ভিড় আর তীব্র গরম। এই কারণেই এক কিশোর, ২ নারী ও ২ পুরুষ যাত্রীর মৃত্যু হয়। অসুস্থ্য হয়ে পরে অর্ধশতাধিক। তাদেরকে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও