আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
আগামী অর্থবছরে সোয়া ২ লাখ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন
সোহেল রহমান : আগামী নতুন অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি’ (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে সরকার। নতুন এডিপি’র এই আকার চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি’র তুলনায় ৯.৮৪ শতাংশ এবং সংশোধিত এডিপি’র তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল এডিপি’র আকার ছিল ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এবং সংশোধিত এডিপি’র আকার হচ্ছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ’ (এনইসি)-এর বৈঠকে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের এই এডিপি অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে অংশ নেন ও সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এক ভার্চুয়াল ব্রিফিং-এ সাংবাদিকদের জানান, নতুন এডিপি বাস্তবায়নে সরকারি তহবিল থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ৮৮ হাজার ২৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, এছাড়া মূল এডিপি’র বাইরে বিভিন্ন সরকারি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা/কর্পোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ১১ হাজার ৪৬৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকার এডিপি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এডিপি-তে এবার বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রকল্প সংখ্যা হচ্ছে ১ হাজার ৫১৫টি। এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপি থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে ১ হাজার ৩৯৬টি প্রকল্প, নতুন অনুমোদিত প্রকল্প ৩০টি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের ৮৯টি প্রকল্প রয়েছে।
এছাড়া বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প রয়েছে ৫৯৬টি, বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির জন্য অন্তর্ভূক্ত প্রকল্প ১৪১টি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) প্রকল্প ৮৮টি এবং শেষ করার জন্য নির্ধারিত প্রকল্প হচ্ছে ৩৫৬টি প্রকল্প।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত ১ম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ‘ভিশন ২০২১’-এর সফল সমাপ্তির পর ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক গৃহীত ২য় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ‘রূপকল্প ২০৪১’-এর ১ম বছর হচ্ছে ২০২১-২২। নতুন এডিপি প্রণয়নে ১০টি বিষয় বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ ভৌত ও নির্মাণধর্মী প্রকল্প গ্রহণে কৃষি জমির ব্যবহার যথাসম্ভব পরিহার করা, আনুভূমিক প্রশস্ততার পরিবর্তে বহুতল মাল্টিপারপাস ভবন তৈরী করা এবং জমির ব্যবহার ন্যূনতম পর্যায়ে রাখা; এলাকা/অঞ্চল ভিত্তিক সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্পসমূহে বরাদ্দ প্রদান নিশ্চিত করা; সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) ভিত্তিতে/উদ্যোগে গৃহীত প্রকল্পের সহায়ক নতুন প্রকল্পকে অগ্রাধিকার প্রদান; বেসরকারি উদ্যোগে বাস্তবায়ন করার সম্ভাবনা রয়েছে এমন প্রকল্প এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব পরিহার করা; জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত এবং অধিক অগ্রগতি সম্পন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ প্রদান; দারিদ্র্য বিমোচন, জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ, কর্মসংস্থান সৃজন, মানবসম্পদ উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পসমূহের অগ্রাধিকার বিবেচনায় রেখে এডিপি-তে বরাদ্দ প্রস্তাব করা; অর্থ বরাদ্দ প্রদানের ক্ষেত্রে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ উৎপাদন, আইসিটি শিক্ষার উন্নয়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমনÑ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, অতিবৃষ্টি ইত্যাদির ক্ষয়ক্ষতি পুনর্বাসন সংক্রান্ত প্রকল্পে অগ্রাধিকার প্রদান; বৈদেশিক অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে প্রাপ্য বৈদেশিক অর্থ ব্যবহারের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় সরকারি তহবিল প্রদান; সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অথবা প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এমন প্রকল্প অগ্রাধিকার প্রদান এবং ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় (ডেল্টা প্ল্যান) অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে চিহ্নিত প্রকল্পকে অগ্রাধিকার প্রদান।
সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০টি খাত
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, আগামী অর্থবছরের এডিপি-তে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি খাতে মোট ব্যয় হবে ২ লাখ ১০ হাজার ৪২১ কোটি টাকা। এটি মোট এডিপি’র ৯৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ৬১ হাজার ৬৩১ কোটি ৪১ লাখ টাকা (২৭.৩৫%)। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ৪৫ হাজার ৮৬৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা (২০.৩৬%)। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলী খাতে। এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ২৩ হাজার ৭৪৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা (১০.৫৪%)। অন্যান্য খাতের মধ্যেÑ শিক্ষা খাতে ২৩ হাজার ১৭৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা (১০.২৯%); স্বাস্থ্য খাতে ১৭ হাজার ৩০৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা (৭.৬৮%); স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৪ হাজার ২৭৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা (৬.৩৪%); পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ খাতে ৮ হাজার ৫২৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা (৩.৭৮%); কৃষি খাতে ৭ হাজার ৬৬৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা (৩.৪%); শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ৪ হাজার ৬৩৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা (২.০৬%) ও বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ৫৮৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা (১.৫৯%) বরাদ্দ ধরা হয়েছে।
সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০ মন্ত্রণালয়
স্থানীয় সরকার বিভাগ ৩৩ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২৮ হাজার ৪১ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগে ২৫ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ২০ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ১৩ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ১৩ হাজার কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ১১ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা, সেতু বিভাগে ৯ হাজার ৮১২ কোটি টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৮ হাজার ২২ কোটি টাকা এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৬ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা।
সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০ প্রকল্প
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প (১৮,৪২৬.১৬ কোটি টাকা); মাতারবাড়ি ৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প (৬,১৬২ কোটি টাকা); চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (৫,০৫৩.৯৮ কোটি টাকা); ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট-লাইন-৬ (৪,৮০০ কোটি টাকা);পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ (৩,৮২৩.৫১ কোটি টাকা); বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু নির্মাণ (৩,৫৮০ কোটি টাকা); পদ্মা সেতু প্রকল্প (৩,৫০০ কোটি টাকা); ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (৩,২২৭.২০ কোটি টাকা); ডিপিডিসির আওতায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন (৩,০৫১.১১ কোটি টাকা) এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প (২,৮২৭.৫২ কোটি টাকা)। সম্পাদনা : রেজা