মানুষ প্রতিদিন চাহিদার চেয়ে ২.৫৮ গ্রাম মাছ বেশি খাচ্ছে
মতিনুজ্জামান মিটু : বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সফল হয়েছে। দেশ মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় গ্রামের শহরের সাধারণ মানুষ কমদামে মাছ ও পুষ্টি পাচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রের বরাতে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, মাছ বাঙালি জাতির সংস্কৃতি ও কৃষ্টির অংশ। দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্যবিমোচন ও রপ্তানি আয়ে মৎস্য খাতের অবদান আজ সর্বজনস্বীকৃত। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান ৩.৫০ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপিতে ২৫.৭২ শতাংশ।
দেশের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যে প্রাণিজ আমিষের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ আসে মাছ থেকে। দেশের প্রায় ১৪ লাখ নারীসহ মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশেরও বেশি অর্থাৎ প্র্র্র্র্র্র্রায় ২ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৎস্য খাতের ওপর ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছে। দেশের মানুষ বর্তমানে গড়ে জনপ্রতি প্রতিদিন ৬০ গ্রাম চাহিদার বিপরীতে ৬২.৫৮ গ্রাম মাছ গ্রহণ করছে।
মহান স্বাধীনতা দিবস মুজিব বর্ষে ৫০তম বছরে পদার্পণ করছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকালে মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য আজ বিশ্ব পরিমন্ডলে স্বীকৃত ও সমাদৃত। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে উৎপাদিত মোট মাছের পরিমাণ ৪৩.৮৪ লাখ টন, যা ২০০৮-০৯ সালের মোট উৎপাদনের চেয়ে ৬২.৩১ শতাংশের বেশি।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য মতে (২০২০) মিঠাপানির মাছের উৎপাদন বাড়ার হারে বাংলাদেশের অবস্থান ২য়, অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বিশ্বে ৩য় এবং বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম। ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১ম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে ৪র্থ। দেশ এখন মাছে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণই না, উদ্বৃত্তও বটে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে গণভবন লেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাছের পোনা অবমুক্ত করে মৎস্য চাষকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেওয়ার শুভ সূচনা করেছিলেন। তৎকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন ‘মাছ হবে এ দেশের দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ।’
জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে মৎস্যবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের ফলে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন আজ সফল হয়েছে। দেশ মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় গ্রামের সাধারণ মানুষ স্বল্পমূল্যে মাছ ও পুষ্টি পাচ্ছে। গত এক দশকে মৎস্য খাতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৬.২৮ শতাংশ।
দেশের জলাশয়ে প্রায় ৮ শত প্রজাতির মাছ ও চিংড়ি রয়েছে। এর মধ্যে ২৬০ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ এবং ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। দেশে মাছের মোট উৎপাদনের শতকরা ১৬ ভাগ (৬.৫৯ লাখ টন) সামুদ্রিক মাছের অবদান। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সমুদ্রে স্থায়ীত্বশীল মাছ আহরণের নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। অপরদিকে সামুদ্রিক মাছের অবাধ প্রজনন, সংরক্ষণ ও উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ২০১৫ সাল থেকে সমুদ্রে বছরে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সব ধরণের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে সমুদ্রে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ১২ থেকে ১৫ভাগ। সমুদ্রের মৎস্যসম্পদের মজুদ নিরূপণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ফলে সামগ্রিকভাবে দেশে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ সামুদ্রিক মাছের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষিত হচ্ছে। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও