প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার ২০৩০ সালের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের আবাসনের হার ৪০ শতাংশ ছাড়াবে
সুজিৎ নন্দী : গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার আমাদের অর্থনীতিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আরও বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার যখন ক্ষমতায় আসার সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের হার ৮ শতাংশ ছিলো। বর্তমানে সেটা বৃদ্ধি পেয়ে ২২ শতাংশে পৌঁছেছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের হার ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।’
‘রূপপুর এবং জি কে শামিমসহ একাধিক ঘটনায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের ভাবমূর্তি সমস্যা হয়, আমরা একত্রে কাজ করতে শুরু করি। সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাতে হাত মিলিয়ে উত্তরণের চেষ্টা করেছি। আমরা কাজে জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী।’
‘এডিবি, বিশ্বব্যাংক ও জিওবি অর্থায়নে ৩৯টি পিসিআর ল্যাব নির্মাণ করা হবে। এরই মধ্যে ১৮টির নির্মাণ শেষ হয়েছে। ১৫টি চলমান আছে। এছাড়া ৪৩টি হাসপাতালে ২০ শয্যার আইসোলেশন ও ১০ শয্যার আইসিইউ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যার কার্যক্রম এখন চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না।’
‘সারাদেশের সকল জেলা সদর ও উপজেলায় সুপরিসর ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পটি গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৫০টি মসজিদ নির্মাণ সমাপ্ত হয়েছে যা প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। এবছর আরও ৭০টি মডেল মসজিদ এর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
‘৮টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০ শয্যার আইসোলেশন ও ২০ শয্যার আইসিইউ স্থাপন কার্যক্রম চলছে। এর পাশাপাশি ৭টি স্থলবন্দর এ মেডিকেল সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গতবছরে সম্পাদিত কাজগুলো জিওবি অর্থায়নে কাজ করা হয়েছে।’
‘নির্মাণকাজে সলিড ব্লক ইট ব্যবহৃত হলে আমাদের ফসলী জমির টপ সয়েল রক্ষা পাবে, ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইড বন্ধ হবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধ করা যাবে। এই ইট তৈরিতে আগুন বা তাপের প্রয়োজন হয় না। সিমেন্ট ও বালির সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়। ফলে জালানি হিসেবে কাঠ, কয়লা বা গ্যাস এর প্রয়োজন হবে না। পরিবেশবান্ধব এর ব্যবহার।’
‘সুয়ারেজের পানি পরিশোধন করে পরিবেশ বান্ধব করে ড্রেনেজ সিস্টেমে ফেলা হবে। এতে পরিবেশ দূষণের মাত্রা অনেক কমে আসবে। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে টয়লেট এর ফ্লাশিং, বাগানের পানি দেয়া, গাড়ি ধোঁয়া প্রভৃতি কাজে ব্যবহার করা হবে।’
‘বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য প্রাকৃতিক আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করার জন্য ভবনসমূহে পর্যাপ্ত সূর্যালোক ঢোকার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এর পাশাপাশি সৌরবিদ্যুত তৈরির ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ গ্রীডের ওপর চাপ অনেকাংশে কমবে।’
‘গণপূর্ত অধিদপ্তর তার নিজস্ব বাজেট হতে মুজিব শতবার্ষিকী উপলক্ষে সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছে। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে মুজিব শতবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য মঞ্চ, প্যান্ডেল ও দর্শক গ্যালারি তৈরি, গেট তৈরি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, আলোকসজ্জা করাসহ সার্বিক আয়োজন করে। পাশাপাশি গোপালগঞ্জ ও সাতক্ষীরায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমন উপলক্ষে সেখানকার দুইটি মন্দিরের সার্বিক সংস্কার, অতিথিদের বসার জন্য পেন্ডেল স্থাপন। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল সংস্কার আমরা করেছি।’
‘১৭ মার্চ হতে ২৭ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গভবন, গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জাতীয় সংসদ ভবন, সুপ্রিমকোর্ট, সচিবালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সরকারি ভবনে নয়নাভিরাম আলোকসজ্জা করা হয়।’
‘যেকোনও প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আধুনিক টেকনলজি ব্যবহার, কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ, কার্যকর মনিটরিং এর মাধ্যমে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। এজন্য লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ১০তলা ভবন ১২ মাসের মধ্যে এবং ২০তলা ভবন ১৮মাসের মধ্যে সমাপ্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।’
সব শেষে সবশেষে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছুকিছু জটিলতা আছে। প্রকল্পের জমি নির্বাচন, জমি হস্তান্তর, অবৈধ দখলদারদের নিকট থেকে জমি উদ্ধার, জমিতে মামলা, কখনো প্রকল্পের জমিতে বসবাসকারী মানুষকে অন্যত্র স্থানান্তর, পুরাতন ভবনের অপসারণ, জমি নিচু থাকলে বা বন্যার পানি থাকলে প্রকল্প শুরু করতে দেরি হয়।’ সম্পাদনা : প্রিয়াংকা আচার্য্য