ফিরোজ আহমেদ
‘রাজার পাপে রাজ্য নষ্ট’ এমন একটা প্রবাদ ছিল। বাংলাদেশকে ভারতের ‘করদ রাজ্য’ বলে লিখেছে, ‘দ্য ডিপ্লোম্যাট’ নামের সাময়িকীটি। আপাতত সেটা দেশবাসীকে হজম করতে হচ্ছে সরকারের আন্তর্জাতিক শুধু নয়, অভ্যন্তরীণ সকল ক্ষেত্রেও দাসের মনোভাবের কারণেই। না হলে স্রেফ ভারত চটবে বলে আর কোন সরকার সুন্দরবনের ঘাড়ের ওপর কয়লাপোড়া বিজলি কারখানা বসায়? কিন্তু, তুমি-আমি সবাই তো জানি, করদ রাজ্য হবার জন্য একাত্তরে আমাদর পূর্ব পুরুষেরা প্রাণ দেননি। বরঞ্চ আমরা এটাও জানি, শাসকদের হাজারো বিশ্বাসঘাতকতা আর প্রতারণার পরও বাংলাদেশের জনগণের অর্জন ভারতের চেয়ে বহুক্ষেত্রে খুব কম না। তারপরও, আমাদের মেনে নিতেই হবে, এই অমর্যাদার জন্য ভারতের দায় আসলে ততবেশি না, যতটা আমরা নিজেরা আত্মঅমর্যাদা ডেকে এনেছি। মানুষ যদি আজকে সংগঠিত থাকত, নিজেদের দাবি নিজেরা আদায় করতে নিতে পারত, প্রতিটা প্রতারণার জবাব দিতে তৈরি থাকতÑ এমন সরকারই আমরা পেতাম যে ভারতের সঙ্গে, কিংবা আমেরিকা-চীন-রাশিয়া-পাকিস্তান যে কারো সঙ্গেই সমানে সমানে মর্যাদা রেখে কথা বলতে পারত, এই করদ রাজ্যের গ্লানি আমাদের সহ্য করতে হতো না। কেননা, শুধু ভারতই কেন, যেকোনো ক্ষমতাধর দেশই বাংলাদেশের কাছে যা চাইছে, দেশের ক্ষতি হোক, প্রকৃতি বিপন্ন হোক, অকাতরে তাই পেয়ে যাচ্ছে। জনসমর্থনহীন অনির্বাচিত সরকার এই সবকেই ভাবছে তার খুঁটির জোর। সুন্দরববন রক্ষার আন্দোলনেই প্রথম কার্যকরভাবে বাংলাদেশের মানুষ তার দাবি উত্থাপন করেছেন, বার্তা দিয়ে দিয়েছেন। সুন্দরবন রক্ষার রাজনীতি, সুন্দরবন রক্ষার সংস্কৃতি বাংলাদেশকে রক্ষা করবে করদ রাজ্যের মিথ্যা অভিধার গ্লানি থেকেও।
লেখক: কেন্দ্রীয় সদস্য, গণসংহতি আন্দোলন
ফেসবুক থেকে