তেল বহির্ভূত অর্থনীতি সৌদি প্রবৃদ্ধি ফিরিয়ে আনছে, আভাস আইএমএফ’র
রাশিদ রিয়াজ : সৌদি আরবের তেল-বহির্ভূত অর্থনীতি বাড়ছে ৪.৩ শতাংশ হারে। দেশটির মোট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ২.৪ শতাংশ হারে। দেশটির যুবরাজ বিন সালমান ২০৩০ সাল নাগাদ তেলের চেয়ে তেল বহির্ভূত অর্থনীতিকে প্রধান ধারায় নিয়ে আসার যে কর্মপরিকল্পনা নিয়েছেন তা ফল দিতে শুরু করেছে।
সৌদি আরবে এ লক্ষ্যে বিদেশি বিনিয়োগকে ব্যাপক সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে এধরনের বিনিয়োগের পিছনে সৌদি আরবের ‘সভরেইন ওয়েলথ ফান্ড’ বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। ফলে তেল রপ্তানির বাইরে বিকল্প আয়ের উৎস খুঁজে পাচ্ছে সৌদি অর্থনীতি। ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড বা আইএমএফ বলছে গত বছর সৌদ অর্থনীতি কোভিড মহামারীর কবলে পড়ে সঙ্কুচিত হয়েছিল ৪.১ শতাংশ। অথচ এবছর দেশটির অর্থনীতি ২.৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাওয়ার মূল শক্তিই হচ্ছে তেল বহির্ভূত রপ্তানি খাত। এ খাতের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪.৩ শতাংশ। আইএমএফ এক বিবৃতিতে বলছে মধ্যপ্রাচ্যে আরব দেশগুলোর অর্থনীতি আগামী বছর ৪.৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে।
একই সঙ্গে তেল বহির্ভূত অর্থনীতি বৃদ্ধি পাবে ৩.৬ শতাংশ। একই সঙ্গে তেল নির্ভর জিডিপি সঙ্কুচিত হবে শুন্য দশমিক ৪ শতাংশ। কারণ ওপেকের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে তেলের উৎপাদনও স্থবির হয়ে পড়েছে। কিন্তু তেলের মূল্য নিয়ে জটিলতা, চাহিদার ব্যাপক হ্রাস, ধীর প্রবৃদ্ধি ও তীব্র অর্থনৈতিক উত্থান পতনের মধ্যেও সৌদি অর্থনীতি বিকল্প উৎসের সন্ধান পেয়েছে। এমন মন্তব্য টুইট করেছেন সৌদি অর্থমন্ত্রী মোহাম্মাদ আল-জাদান। গত বছর সৌদি আরব অর্থনীতির ধস ঠেকাতে ৫ শতাংশ হারের ভ্যাট বৃদ্ধি করে ১৫ শতাংশে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে ভ্যাটের এ হার বৃদ্ধি কাজে দিয়েছে। কারণ আর্থিক ঘাটতির পরিমাণ সৌদি জিডিপির সাড়ে ৪ শতাংশ থেকে ১১.৩ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছিল। একই সঙ্গে ঋণের পরিমাণ দেশটির জিডিপির তুলনায় ২২.৮ শতাংশ থেকে সাড়ে ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এবছর জিডিপির তুলনায় বাজেট ঘাটতি হ্রাস পেয়েছে সাড়ে ৩ শতাংশে। এবং তা আগামী বছর ১.৯ শতাংশে দাঁড়াবে। আগামী বছর শেষ নাগাদ ঋণ হ্রাস পাবে জিডিপির ৩০.৪ শতাংশ।
আইএমএফ বলছে সৌদি সভরেইন ওয়েলথ ফান্ড ছাড়াও পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড এ সফলতা অর্জনে মূল ভূমিকা রেখেছে। এবছর পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড থেকে নতুন প্রকল্পগুলোতে ১৬ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করা সম্ভব হচ্ছে। আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ ১ ট্রিলিয়ন ডলার এধরনের বিনিয়োগে খরচ করা হবে। তবে আইএমএফ এ বিনিয়োগে সৌদি সরকারকে তদারকির পরমার্শ দিয়ে বলেছে বেসরকারি খাতে এধরনের বিনিয়োগে বেশ কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। আইএমএফ বলছে এজন্যে সৌদি আরবে আরো শক্তিশালী সংস্কার অব্যাহত রাখতে হবে। কাফালা স্পন্সরশিপ ব্যবস্থাপনায় বিদেশি কর্মীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি এধরনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিদেশি শ্রমিকরা এখনো সৌদি আরবের প্রবৃদ্ধির গতি বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা ও গৃহভিত্তিক আয় বৃদ্ধির এখনো অন্যতম সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। একই সঙ্গে সৌদি আরবের শেয়ার বাজারে প্রয়োজনীয় সংস্কারেরর তাগিদ দিয়েছে আইএমএফ।
ই-গভর্নমেন্ট ও ডিজিটাল ব্যবস্থা যাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের কাজে গতি আনতে সাহায্য করে সেদিকেও নজর দিতে বলেছে আইএমএফ। এতে সৌদি অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধার ও বৈচিত্রপ্রবণ হয়ে উঠবে। একই সঙ্গে সৌদি আরবে পরিবেশ দূষণ ও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের আল রাজি ক্যাপিটালের গবেষণা বিভাগের প্রধান মাজেন আলসুদায়ারি বলেন শুধু অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নয় বাজেটে আরো ঘাটতি মিটিয়ে গতি আনার আশা করছি আমরা। সৌদি মুদ্রায় বাজেট ঘাটতি ৬২ বিলিয়ন রিয়াল হ্রাস পাবে যদি তেলের দর ৬৫ ব্যারেল উঠে যায়। এবছরের শুরুতে তেলের দর ব্যারেলে ৫২ ডলার থাকলেও তা ইতিমধ্যে ৭৫ ডলারে ঠেকেছে।