চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫ দিনে অনলাইনে ৯৮১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার কোরবানির পশু বিক্রি
শোভন দত্ত : সারা দেশে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। দেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে গত ১৬ জুলাই পর্যন্ত শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বিভাগ থেকেই অনলাইনে ৫৪ ভাগ কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে কোরবানির পশু ক্রয়ের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন ক্রেতারা। সংক্রমণ এড়াতে বাজারে না গিয়ে নগর এবং বিভিন্ন উপজেলার খামারে গিয়ে ক্রেতারা পশু সংগ্রহ করছেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনলাইনে কোরবানি যোগ্য গবাদিপশু বিক্রয় প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বিভাগে গত ১৬ জুলাই পর্যন্ত অনলাইনে ৯৮১ কোটি ৬৮ লাখ ৯১ হাজার টাকার পশু বিক্রি হয়েছে। এই সময়ে চট্টগ্রাম সহ ৮ বিভাগে পশু বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৮৩২ কোটি ৯৭ লাখ ৮৩ হাজার ২৫৭ টাকার পশু।গত ১৬ জুলাই একদিনেই চট্টগ্রাম বিভাগে অনলাইনে বিক্রি হয়ছে ৫০ কোটি ৫০ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ টাকার পশু। এদিন চট্টগ্রাম সহ ৮ টি বিভাগে বিক্রি হয়েছে ১৬৭ কোটি ৯২ লাখ ৮১ হাজর ৫৮৫ টাকার পশু। অনলাইনে পশু বিক্রি বাড়ায় সাড়া নেই বাজারগুলোতে। এতে বিপাকে পড়েছেন বাজার ইজারাদাররা। কোটি টাকা দিয়ে বাজার ইজারা নিলেও আগের বছরগুলোর তুলনায় পশু বিক্রি কম হওয়ায় ইজারা মূল্য উঠে আসবে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন ইজারাদাররা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম জেলায় মোট ২২২টি পশুর হাট রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে রয়েছে ১২টি। বাকিগুলো জেলার ১৫টি উপজেলায় অবস্থিত। পশুর হাটের মধ্যে ৬০ টি স্থায়ী এবং ১৬২ টি অস্থায়ী।
চট্টগ্রাম জেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সেতু ভূষণ দাশ বলেন, ‘চট্টগ্রামে এবার কোরবানির পশুর চাহিদা ৮ লাখ ৯ হাজার।
যার বাজার মূল্য প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর এবং জেলার ১৫ টি উপজেলায় ৪ হাজার ২১৭ টি স্থায়ী এবং ১৩ হাজার মৌসুমী খামারে পশু প্রস্তুত আছে ৭ লাখ ৫২ হাজার। লকডাউন পরিস্থিতি শিথিল হওয়ায় সড়ক পথে চাহিদার বাকি ৫৭ হাজার পশু দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে শুরু করেছে।’
তিনি আরও বলেন, বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে অনলাইনে ৩৫ হাজার এবং অফলাইনে ৭১ হাজার গরু বিক্রি হয়েছে। এসব পশুর বাজার মূল্য প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। কোরবানি পর্যন্ত অনলাইনে পশু বিক্রির সংখ্যা ২ লাখ ছাাড়িয়ে যাবে। এর দাম হবে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। মোট চাহিদার প্রায় ২৫ ভাগ পশু বিক্রি হবে অনলাইনে।
বিভিন্ন বাজার ইজারাদারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় বাজারে পশু বিক্রির পরিমাণ তুলনামুলক কম। অনলাইনে কিংবা চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন অলিতে গলিতে পশুর হাট বসানোর কারণেও পশু বিক্রির পরিমাণ কমে গেছে।
চট্টগ্রাম নগরীর বৃহৎ পশুর হাট সাগরিকা বাজারের ইজারাদার আবুল কামাল আজাদ বাবুল বলেন, ‘চলতি বছর ১১ কোটি টাকা দিয়ে সাগরিকা বাজার ইজারা নিয়েছি। অনলাইনে পশু বিক্রি এবং শহরের অলিতে গলিতে পশুর হাট বসানোর কারণে ইজারার টাকা উঠে আসবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। তাই প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই যে, চট্টগ্রাম নগরীতে অনুমোদন ছাড়া যেসব পশুর হাট রয়েছে সেগুলো যাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
অনুমোদনহীন পশুর হাট বসানোর প্রবণতা চট্টগ্রাম শহরের বাইরের বিভিন্ন উপজেলায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার ইজারাদাররা।
উত্তর চট্টগ্রামের বৃহৎ গরুর বাজার মিরসরাইয়ের মিঠাছরায় চলতি বছরে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ইজারা দেয় সরকার। অনলাইনে বিক্রি এবং অনুমোদনহীন বাজারে পশুর হাট বসানোর কারণে এ বছর মূলধন উঠে আসা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন ইজারাদারেরা।
মিঠাছরা বাজারের ইজারাদার সাইফুল ইসলাম বলেন, অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি হওয়ার কারণে বাজারে পশু বিক্রি অনেক কম। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে অনুমোদনহীন পশুর হাট বসানোর কারণেও চরম আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছি আমরা। অনুমোদনহীন পশুর হাট বন্ধে সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান সাইফুল ইসলাম।
মিরসরাই উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. শ্যামল পোদ্দার বলেন, “কোরবানি উপলক্ষে এবার মিরসরাইয়ের প্রায় ৪০০ বাণিজ্যিক গরুর খামারে ৪০ হাজার গরু প্রস্তুত করা হয়। শুক্রবার পর্যন্ত অনলাইনে ৮ হাজার গরু বিক্রি হয়েছে। কোরবানির ঈদ পর্যন্ত অনলাইনে প্রায় ১৪ হাজার গরু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।” সূত্র : টিবিএস বাংলা অনলাইন, বাংলানিউজ।