বিধিনিষেধ শিথিলে ভারতের অর্থনীতি গতি পাচ্ছে
রাশিদ রিয়াজ : ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় বিস্তার রোধে যে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল তা কিছুটা শিথিল করায় অর্থনীতিতে গতি সৃষ্টি হয়েছে। গত বছর মার্চের পর নমুরা ইন্ডিয়াস বিজনেস রিজাম্পশন ইনডেক্স এই প্রথমবারের মত ১শ লেভেল মার্কে উন্নীত হয়েছে।
গত এপ্রিলের পর ভারতে জালানি তেলের চাহিদা সর্বোচ্চ পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রমিকদের কাজে যোগদানের হার ও বিদ্যুতের চাহিদা রেকর্ড পরিমান বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১০১.২ শতাংশ। যা গত মে মাসে হ্রাস পেয়েছিল ৬০.৪ শতাংশ। ওই সময় কোভিডে মৃত্যু ও সংক্রমণের হার রেকর্ড পরিমান সর্বোচ্চ ছিল। গত ১৪ আগস্ট পর্যন্ত এর আগের সাত দিনে গড়ে কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৮৭৪ জনে নেমে আসে যা গত মে মাসে বৃদ্ধি পেয়েছিল ৩ লাখ ৯১ হাজার ৮ জন। ইকোনোমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে কোভিডের প্রথম সংক্রমণের পর দ্বিতীয় সংক্রমণের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে কম সময়ে। কোভিড সংক্রমণের প্রথম বিস্তারের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে ১০ মাস লাগলেও দ্বিতীয় সংক্রমণ বিস্তারের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে ৩ মাসে। ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক গতি বজায় থাকলে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ১০.৪ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। প্রথম ত্রৈমাসিকে ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশ ছিল সাড়ে ১৯ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭.৯ থেকে ৯.৬ শতাংশের মধ্যে। প্রথম প্রান্তিকে ভারতের অর্থনৈতিক গতি বা প্রবৃদ্ধি হতাশাজনক মনে হলেও তা এখন দ্রুত পরিবর্তিত হবে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আরটি/দি প্রিন্ট
এর আগে ভারতের অর্থমন্ত্রণালয় কোভিড মহামারিতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ৮৪.৯ বিলিয়ন ডলার বা ৬.৯ ট্রিলিয়ন রুপির বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহায়তায় এবং অর্থনীতির যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের এ প্যাকেজ থেকে ৩৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ভারতের অর্থমন্ত্রী সীতারামন বলেছেন স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে অতিরিক্ত আরো ১৪.৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে ঋণের ক্ষেত্রে গ্যারান্টি স্কিম সহায়তা দেওয়া হয়েছে ২০.২ বিলিয়ন ডলার।
একই সঙ্গে ভারতের অর্থমন্ত্রণালয় আগামী ৬ মাসের জন্যে বিনামুল্যে খাবার ও খাদ্য শস্য সহায়তা হিসেবে ১২.৬ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্যে ঋণ দেওয়ার জন্যে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম সহায়তা দিচ্ছে। সিএনবিসিকে সিঙ্গাপুরের ডিবিএস গ্রুপের অর্থনীতিবিদ রাধিকা রাও জানান ভারত সরকারের এধরনের ঋণ আর্থিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তবে তা সরাসরি নগদ উদ্দীপনা হিসেবে না এলেও ঋণ হিসেবে উদ্যোক্তাদের কোভিড মোকাবেলায় ব্যবসা বাণিজ্য ফের দাঁড় করাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে সরকারের এধরনের প্যাকেজ সহায়তার সফলতা নির্ভর করবে কত বেশি ঋণ উদ্যোক্তারা পান তার ওপর। এমন মন্তব্য করে অর্থনৈতিক রেটিং কোম্পানি মুডি’র ভারতীয় অধিভুক্ত ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি আইসিআরএ -এর প্রধান অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ার বলেন কোভিড সংক্রমণের প্রথম বিস্তারের সময়ও সরকারের তরফ থেকে একই ধরনের সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এবার দ্বিতীয় কোভিড সংক্রমণ বিস্তারের সময় এধরনের আর্থিক সহায়তার পরিমান ভারতের জিডিপির শূন্য দশমিক ৫৯ শতাংশ। নোমুরা’র বিশ্লেষকরা আরো বলেন, চলতি বছরের জন্য সামগ্রিক আর্থিক প্রভাব জিডিপির ০.৬৫% হতে পারে এবং বিনামূল্যে কোভিড ভ্যাকসিন সরবরাহ এ উদ্যোগের অতিরিক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের পর ভারত কোভিডে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশ, যেখানে ৩০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত ও ৪ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।