তালেবানের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের সাড়ে ৮ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র
রাশিদ রিয়াজ : জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন আফগান তালেবানের কাছে বাগরাম বিমান ঘাঁটি এবং সাড়ে আট হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সমর্পণ করেছে। সিবিএস নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হ্যালি আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে বাইডেন প্রশাসনের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটি সম্পূর্ণভাবে তালেবানের কাছে আত্মসমর্পণ। তালেবানের সঙ্গে মার্কিন প্রশাসন কিভাবে আলোচনা করছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা কোনো আলোচনা করছে না, তারা সম্পূর্ণভাবে তালেবানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। তারা বাগরাম বিমানঘাঁটিকে সঁপে দিয়ে এসেছেন যা ছিল ন্যাটো জোটের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। তারা সাড়ে আট হাজার কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে দিয়েছে তালেবানকে।
নিকি হ্যালি আরো বলেন, বাইডেন প্রশাসন মার্কিন জনগণকে ফেলে এসেছে। প্রকৃতপক্ষে মার্কিন জনগণকে সরিয়ে নেয়ার আগে তারা সেনাদেরকে সরিয়ে নিয়েছে। এছাড়া, তারা আফগানিস্তানের মিত্রদেরকে ফেলে এসেছেন যারা আমার স্বামীর নিরাপত্তা দিয়েছিল। নিকি বলেন, মার্কিন নাগরিকদের যখন তালেবান পণবন্দী করল তখন সত্যি সেখানে অবিশ্বাস্য এক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল।
এদিকে আফগানিস্তানের পলাতক প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহকে ক্ষমা ঘোষণা করেছে তালেবান। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে তারা দুজনই নিরাপদে দেশে ফিরতে পারেন। পাকিস্তানের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল জিও নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তালেবানের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা খলিলুর রহমান হাক্কানি বলেন, তাদের সাথে তালেবানের কোনো শত্রুতা নেই। একই কাতারে পড়বেন সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হামদুলিল্লাহ মহিব। খলিলুর রহমান হাক্কানি বলেন- আশরাফ ঘানি, আমরুল্লাহ সালেহ এবং হামদুলিল্লাহ মহিবের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। তাদের সঙ্গে শুধু ধর্মের কারণেই শত্রুতা ছিল। আমাদের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করেছে তারা-সহ সবার জন্য আমরা ক্ষমা ঘোষণা করেছি। তাজিক, বেলুচ, হাজারা, পাশতুন সবাই আমাদের ভাই। তালেবানের এ নেতা বলেন, আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল সরকারব্যবস্থা পরিবর্তন, সেটি এখন বদলে গেছে।
খলিলুর রহমান হাক্কানি বলেন, মার্কিন সেনারা আমাদের বিরুদ্ধে তাদের অস্ত্র ব্যবহার করছিল কিন্তু আল্লাহ এখন তাদের অস্ত্র আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, যুদ্ধ ব্যর্থ হয়েছে। হাক্কানি দাবি করেন, তালেবানের নেতৃত্বে যে সরকার গঠিত হবে তাতে দেশের উচ্চ পর্যায়ের যোগ্যতাসম্পন্ন এবং শিক্ষিত ব্যক্তিরা থাকবেন। তিনি আরো জানান, আফগানিস্তানে অংশগ্রহণমূলক সরকার গঠিত হবে। এদিকে তালিবানের সঙ্গে বোঝাপড়া চান তালিবান বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা আহমেদ মাসুদ। তবে যুদ্ধের জন্য তৈরি তার দল সে কথাও জানান তরুণ এই আফগান নেতা। তিনি বলেন, আমরা তালিবানদের এটাই বোঝাতে চাই যে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বোঝাপড়া করাই একমাত্র রাস্তা। ধ্বংসের জন্য যুদ্ধ চাই না। তালিবানরা চাইলে বোঝাপড়া হতে পারে। আফগানিস্তানে একমাত্র পঞ্জশিরই তালিবান মুক্ত। হাজার হাজার আফগান তালিবান বিরোধী জোটকে শক্ত করতে পাড়ি দিয়েছেন উত্তরে। পঞ্জশির অঞ্চলে ৯ হাজার সেনা নিয়ে তালিবানের বিরুদ্ধে বাহিনী গড়ে তুলেছেন মাসুদ। তবে ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের প্রাথমিক লক্ষ্য হল ফের রক্তপাত এড়ানো। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, সামাজিক ন্যায়, সমতা, মানবাধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি তুলেছেন আহমেদ মাসুদ। এদিকে তালেবান মুখপাত্র সোহাইল শাহিন বলেছেন, তারা সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক চান এবং দেশের সব নৃ-গোষ্ঠীর অংশগ্রহণে সরকার গঠন করবেন। কাতারের রাজধানী দোহার রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে ইরানের প্রেস টিভিকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন সোহাইল শাহিন। তিনি বলেন, আফগানিস্তানের বাদাখশান প্রদেশসহ আরো কয়েকটি প্রদেশে তাজিক জাতিগোষ্ঠী রয়েছে, ফারিয়া ও সারে পোলের মতো প্রদেশগুলোতে রয়েছে উজবেক জনগোষ্ঠী। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে রয়েছে পাশতুন জনগোষ্ঠী। এরা সবাই আফগানিস্তানের জনগণ এবং তারা ইসলামি সরকারের অংশ হবে। তিনি এও বলেন, আফগানিস্তানে আইএস জঙ্গি গোষ্ঠীর কোণো ঠাঁই হবে না। এটি একটি বিদেশী চক্র। সোহাইল শাহিন জোর দিয়ে বলেন, আফগানিস্তানের ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চাইছে তালেবান। মেয়েদের শিক্ষা এবং নারীদের কর্মসংস্থান সম্পর্ক সোহাইল শাহীন বলেন, আফগানিস্তানে হাজার হাজার গার্লস স্কুল রয়েছে। সেগুলো চালু আছে। কোনো বাধা দেয়া হচ্ছে না, মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে। নারী শিক্ষকরাও তাদের কাজ শুরু করেছেন। ফলে নারীদের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানে প্রবেশে আমাদের কোনো সমস্যা নেই তবে এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই ইসলামি হিজাব মানতে হবে। নারীদের অধিকার থাকবে, তবে শুধুমাত্র হিজাব মানার শর্ত থাকবে।