বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ফ্যাশনেবল পোশাক উৎপাদন বাড়াতে হবে
মো. আখতারুজ্জামান : তৈরি পোশাক খাত রপ্তানিতে বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। মাসের ব্যবধানে ২০০-৩০০ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি কম করলেই এই স্থান দখল করে নেয় প্রতিযোগি দেশ ভিয়েতনাম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফ্যাশনেবল পোশাক উৎপাদন বাড়াতে না পারলে বাংলাদেশকে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা বড় চ্যালেঞ্জ হবে। প্রতিযোগিরা যেখানে প্রতিনিয়ত আধুনিক প্রযুক্তি আর ফ্যাশনেবল পোশক তৈরি করছে, সেখানে আমাদের উদ্যোক্তারা অনেক পিছিয়ে আছে।
গত বছরের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর কয়েক দফায় লকডাউনে মোট ৬৫ দিন পোশাক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকার সুযোগ নিয়েছে ছিলো ভিয়েতনাম। সেই সময়ে দেশটি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে যায়। ফলে তারা বিশ্বে পোশাক রপ্তানিতে নিজেদেরকে ২য় স্থানে নিয়ে যায়। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে ভিয়েতনামের চেয়ে ১৯৩ কোটি ৭২ লাখ ডলার বেশি আয় করেছে বাংলাদেশ। এ সময়ে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের মোট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৭৯ কোটি ৮৫ ডলারে আর ভিয়েতনামের হয়েছে ১ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৩ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইয়ুথ লিডারস অ্যাসোসিয়েশন (বায়লা) এর সাধারণ সম্পাদক আল শাহরিয়ার আহমেদ বলেন, আমাদের দেশে লকডাউনের ফলে পোশাক উৎপাদন বন্ধ ছিলো। তবে এটার কারণে ভিয়েতনাম এগিয়ে যাইনি। আসলে তারা মুলত ফ্যাশনেবল পণ্য বেশি করার কারণে এগিয়ে গিয়েছিলো।
তারা একটা ফ্যাশনেবল পণ্য বিক্রি করে ৯-২৫ ডলার পর্যন্ত। আর আমাদের একটি টি-শার্ট বিক্রি হয় ১-২ ডলার পর্যন্ত। তাদের আর আমাদের ব্যবধানটা এখানেই। লকডাউনের সময় আমাদের অর্ডারও কিছু কমে যায়। আমরা নিট আইটেমটা বেশি করে থাকি। ডেলিমে আমরা ভালো করতেছি। বর্তমানে আমাদের কারখানাগুলোর ক্যাপাসিটি ও ক্যাপাবেলিটি বেড়েছে। সেইসঙ্গে বায়ারদের অর্ডার বেড়েছে। ফলে আমরা ভিয়েতনামকে আবারও পিছনে ফেলাতে পেরেছি।
তিনি বলেন, উৎপাদনে আমরা এখনও পুরোন দিনের পণ্যেই পড়ে আছি। এখান থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। ফ্যাশনেবল পণ্য উৎপান করতে না পারলে ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবো না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে এখন কিছু নবীন উদ্যোক্তা ফ্যাশনেবল পণ্য উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে। প্রবীনরা বলেন, আমরা যে পণ্যে উৎপাদন করছি সেটাতেই থাকবো। আর নবীনরা নতুন পণ্যের পাশাপাশি কারখানার ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন নিয়ে আসছে। কখনো কখনো আধুনিকায়ন ও নতুন পণ্য তৈরি নিয়ে নবীন ও প্রবীণরা যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তবে সেক্ষেত্রে নবীনদেরই জয় হয় বলে তিনি জানান।
জুলাইয়ে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস রিভিউ ২০২১ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, ২০২০ সালে বাংলাদেশকে পেছনে ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হয়েছে ভিয়েতনাম। করোনা মহামারির ওই বছরে বাংলাদেশ থেকে বিশ্ববাজারে গেছে ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আর ভিয়েতনাম থেকে ২ হাজার ৯০০ কোটি ডলার মূল্যের পোশাক। তালিকায় শীর্ষে ছিল চীন।
বিজিএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাছির জানান, ভিয়েতনাম আমাদের থেকে এগিয়ে যাওয়ার পেছনে কারণ হচ্ছে, প্রথমত, ওরা আধুনিক মেশিনারিজ ব্যবহার করে থাকে। দ্বিতীয়ত, ওরা ফ্যাশনেবল প্রোডাক্ট উৎপান বেশি করে থাকে। যারা দাম আমাদের পোশাকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। ফলে আমরা রপ্তানিতে কখনো কখনোও পিছিয়ে পড়ি। তৃতীয়ত, ওদের ওখানে চীন, কোরিয়াসহ অন্যান্য বিদেশিরা বেশি ব্যবসা করে থাকে। চতুর্থত, ওদের ভালোমানের সমুদ্র বন্দর রয়েছে। ফলে ওরা খুব দ্রুত সরাসরি পণ্য সিপ্টমেন্ট করতে পারে। আমাদের এখানে সরাসরি সিপ্টমেন্ট করা যায় না। ফলে সময় বেশি লাগে।
বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনামের রপ্তানি উন্নয়ন পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুতেই এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। জানুয়ারিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৮৬ কোটি ডলার। ভিয়েতনামের এ পরিমাণ ছিল ২৬৬ কোটি ডলার। পরের মাসে ব্যবধান আরও বাড়ে। ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের ২৬৩ কোটি ডলারের বিপরীতে ভিয়েতনামের এ পরিমাণ ছিল ১১৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ মাসটিতে ভিয়েতনামের রপ্তানি বাংলাদেশের অর্ধেক। মার্চে অবশ্য ভিয়েতনাম এগিয়ে যায় সামান্য ব্যবধানে। এপ্রিলে আবারও ভিয়েতনামের দ্বিগুণ দাঁড়ায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি। সর্বশেষ জুলাই পর্যন্ত সাত মাসের পরিসংখ্যানে মোট রপ্তানিতে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও