আমরা পরমাণু শক্তি ব্যবহার করবো শান্তির জন্য : প্রধানমন্ত্রী দেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দক্ষিণাঞ্চলে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র পাবনার রূপপুরের কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটে রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল বা পরমাণু চুল্লিপাত্র স্থাপনের মধ্য দিয়ে স্বপ্ন পূরণের পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে রুশ সহায়তায়। রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল হল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র। এর ভেতরেই ইউরেনিয়াম থেকে শক্তি উৎপাদন হবে, যা কাজে লাগিয়ে তৈরি হবে বিদ্যুৎ। রিয়্যাক্টেই হল একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রাণ।
রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রিঅ্যাক্টর স্থাপন কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পরমাণু শক্তির একটা অংশ হিসেবে সেখানে একটা স্থান আমরা করে নিতে পারলাম, আর সেটা শান্তির জন্য। এর মাধ্যমে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, সেই বিদ্যুৎ গ্রাম পর্যায়ে মানুষের কাছে যাবে, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে এখন আর পরিবেশ দূষণ হয় না। কারণ এখন সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। দক্ষিণ অঞ্চলে আরেকটা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট করার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জায়গা খুঁজছি। আমার ইচ্ছা পদ্মার ওপারে করা। তাহলে দক্ষিণ অঞ্চলের বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত হবে। এসময় সমালোচকদের ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, টক, মিষ্টি, ঝালের মিশেলে অনেকে অনেক সময় কথা বলেন, তবে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা করার দরকার করবো।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশটিকে জাতির পিতা চেয়েছিলেন উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে। সেটি আমরা করবো, এটাই আমাদের লক্ষ্য। দেশে একটা কিছু করতে গেলে এত সমালোচনা হয়। নানাভাবে নানাজনে বুঝে না বুঝে অনেক কথা বলে ফেলে, লিখে ফেলে। টকশোতেও অনেক কথা হয়। টক, মিষ্টি, ঝাল মিশিয়ে অনেক কথা হয়। এটাই তো বাংলাদেশের নিয়ম বা চরিত্র। কোনো একটা কিছু করতে গেলেই কেউ এটার মধ্যে খুঁত খোঁজে। তবে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে আমরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরু করি।
পারমাণবিক প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা-ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক অ্যানার্জি অ্যাসোসিয়েশন (আইএইএ) গাইড লাইন অনুযায়ী এবং সংস্থাটির কড়া নজরদারির মধ্যদিয়েই রূপপুর প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন।
দেশটির রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ, এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লোশকিন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান রূপপুরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে খুব বেশি সময় লাগবে না। প্রথম ইউনিটের ৫০ শতাংশ কাজ এ বছরেই শেষ হবে। সরকার আশা করছে, ২০২৩ সালের এপ্রিলে রূপপুরের ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা যাবে। বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা যাবে২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুরে পরমাণু চুল্লির জন্য প্রথম ইউনিটের কংক্রিটের মূল স্থাপনা নির্মাণের উদ্বোধন করেছিলেন, যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল নির্মাণ পর্বের কাজ। পরের বছর জুলাই মাসে দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের জন্য কংক্রিট ঢালাই কাজ উদ্বোধন করা হয়।
রূপপুরের প্রকল্প এলাকায় এক হাজার ৬২ একর জমির ওপর চলছে বিপুল কর্মযজ্ঞ।
প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার দেশি-বিদেশি শ্রমিক, প্রকৌশলী, বিশেষজ্ঞ সেখানে কাজ করছেন। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর রোসাটমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি কমিশন।
দুই ইউনিট মিলিয়ে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার (১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা)। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড ব্যয়ের এই প্রকল্পে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত সর্বাধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ব্যবহৃত তেজষ্ক্রিয় জ্বালানি সরিয়ে নিতেও রাশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। সম্পাদনা : শরীফ শাওন