মানিক লাল ঘোষ
সনাতন হিন্দু ধর্মের দর্শনে শ্রী শ্রী দুর্গা দেবীকে পৃথিবীর সৃজনীশক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, দেবী দুর্গা অসুরশক্তি নিধন এবং পৃথিবীতে দেবরাজ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা দানের জন্য। আর এ কারণেই হিন্দু সম্প্রদায়ের সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে দুর্গোৎসব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দুর্গাপূজায় দেবী দুর্গার মাতৃকাশক্তির আরাধনাই প্রধান। বহুর মধ্যে এক মহাশক্তিরূপিনী, ইষ্টফলদায়িনী, সর্বদুঃখহারা, মাতৃরূপিনী দেবীদুর্গা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে চিরদিনের রাজ-রাজেশ্বরী মহাকাল দর্শিনী। যতদূর জানা যায়, বঙ্গদেশে দুর্গোৎসবের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয় ষোড়শ শতাব্দীতে মোগল সম্রাট আকবরের শাসনকাল থেকে। বিশেষ করে, বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে দুর্গাপূজার ব্যাপক প্রস্তুতি এবং বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান মালা প্রচলিত হয় যা পরবর্তীকালে ব্যাপকতর পরিসরে অনুষ্ঠিত হতে থাকে। প্রকৃতপক্ষে দেবী দুর্গা কল্যাণময়ী, দুর্গতিনাশিনী, সর্বদুঃখ হরিণী। অন্যদিকে কখনো কখনো তিনি জেগে ওঠেন আসুরিক শক্তি দমনের লক্ষ্যে। তখন তিনি দশভুজা হয়ে সংহারকারিনীর মূর্তিতে আবির্ভূত হন। মানুষকে রক্ষা করেন অসুররূপী দানবের হাত থেকে। প্রতিবছর শরৎকালে পঞ্জিকার তারিখ অনুযায়ী হিন্দু সম্প্রদায় মা দুর্গার এই পূজার আয়োজন করে। এ উৎসবের কালক্রমে উৎসাহ ও উদ্দীপনা যেন ক্রমশই ভাটা পড়েছে। গত বছরের চেয়ে পূজা ম-পের সংখ্যা বাড়লেও কমছে পূজারীর সংখ্যা। যথাযোগ্য মর্যাদা উৎসাহ-উদ্দীপনায় কিংবা কঠোর নিরাপত্তায় শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত বা আয়োজনের কথা প্রতিবছর যতই প্রচার করা হোক না কেন, পূজার সেই স্বতঃস্ফূর্ততা কি আগের মতো আছে?
লেখক: সাংবাদিক/ সম্পাদনা: আশিক রহমান