‘করোনাকালে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে ধসের হাত থেকে রক্ষা পায় আবাসন শিল্প’
সুজিৎ নন্দী : রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (রিহ্যাব) চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল বলেছেন, আমাদের অব্যাহত অনুরোধ এবং দাবির মুখে সরকার আবাসন সেক্টরে নিবন্ধন ব্যয় ৩ শতাংশ হ্রাস করে। নতুন করে আরো ব্যয় হ্রাস করার জন্য আমাদের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। নিবন্ধন ব্যয় বেশি থাকার কারণে এক সময় ফ্ল্যাট-প্লট বিক্রির ওপরে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
তিনি বলেন, অনেকে ফ্ল্যাটই রেজিস্ট্রেশন করতো না। যার কারণে ভবিষ্যতে ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে আইনী জটিলতা তৈরি হতো। নিবন্ধন ব্যয় ৩ শতাংশ কমানোর কারণে বর্তমানে সেই অবস্থা থেকে অনেকটাই উত্তরণ ঘটেছে।
‘রিহ্যাব পরিচালনা পর্ষদের দীর্ঘদিনের দাবী ও অব্যাহত চেষ্টার মাধ্যমে জাতীয় বাজেট ২০২০-২১ অর্থ বছরে আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। এই অর্থ বিনিয়োগে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা হবে না।’
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকার মহামারি করোনার সময়ে দূরদর্শী এ সিদ্ধান্তের কারণে বড় ধরনের ধসের হাত থেকে রক্ষা পায় আবাসন শিল্প তথা জাতীয় অর্থনীতি। এর সুবিধার ফলে গেল অর্থ বছরে বিশ হাজার ছয়শো কোটি টাকার উপরে মূল অর্থনীতিতে ফিরে এসেছে। যার মাধ্যমে সরকার ট্যাক্স পেয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বেশি।
’
‘এই সুবিধার ফলে মহামারির করোনার মধ্যেও এই শিল্পে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। আমাদের ধারাবাহিক তৎপরতায় বিগত কয়েকটি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রেখেছিল সরকার। এই অর্থ বছরে কোন প্রশ্ন না করায় দেশে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। ফলে টাকা পাচার কমে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
‘সব চেয়ে বড় কথা চলতি অর্থ বছরে বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে অন্যান্য ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হলেও আবাসন খাতে আগের মতই সুবিধা বহাল রেখেছে বর্তমান সরকার।’
‘রিহ্যাবের ট্রেনিং ইন্সটিটিউট করার জন্য প্রথমে ১৫ কাঠা জায়গা বরাদ্দ দেয় সরকার। রাজধানীর উত্তরার তৃতীয় পর্বে ১৭ নং সেক্টরে ‘কে ব্লক’ এ জমি বরাদ্দ দেয় রাজউক। পরবর্তীতে উক্ত বরাদ্দকৃত ১৫ কাঠা জমি সংলগ্ন আরো ৯ কাঠা জমি রাজউক থেকে বরাদ্দ পাওয়ার জন্য ব্যাপক তৎপরতা চালানো হয় আমাদের পক্ষ থেকে। অবশেষে আমরা সফল হই।
রিহ্যাব ট্রেনিং ইন্সটিটিউট এর জন্য উত্তরায় বরাদ্দ পাওয়া নিজস্ব ২৪ কাঠা জায়গায় সর্বাধুনিক ১৫তলা ভবন নির্মাণের কার্যক্রম আমরা শুরু করেছি। যেটা আবাসন সেক্টরের জন্য অনেক বড় একটি অর্জন।’
‘২৪ কাঠা জায়গার উপর রিহ্যাব এর ১৫তলা একটি নিজস্ব ভবন অনেক বড় একটি গর্বের বিষয়। আবাসন খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক, কর্মকর্তা-প্রকৌশলীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে রিহ্যাব দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় ‘রিহ্যাব ট্রেনিং ইন্সটিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রথমে পান্থপথে ইন্সটিটিউটের অফিস নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে মিরপুর মাজার রোডে এর কার্যক্রম চলছে।
ইতোমধ্যে এই রিহ্যাব ট্রেনিং ইন্সটিটিউট থেকে প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিয়ে বের হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষ করা এই সব শিক্ষার্থীর প্রায় ৯০ শতাংশ এর কর্মসংস্থান হয়েছে।’
‘আবাসন খাতে আগের তুলনায় গৃহঋণের সুদের হার কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এর শীর্ষ কর্মকর্তাসহ অন্যান্য তফসিলি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে আমরা বিভিন্ন সময় এই বিষয় নিয়ে বৈঠক করেছি। পরবর্তীতে কয়েকটি ব্যাংক সিঙ্গেল ডিজিটে হাউজিং লোন দেয়ার ঘোষণা দেয় এবং তা কার্যকর করে। পরবর্তীতে সরকারের আদেশে বর্তমানে প্রায় সব ব্যাংকই এক অংকের সুদে হাউজিং লোন দিচ্ছে।’
‘গৃহায়ন খাতে অর্থায়ন করা সরকারি প্রতিষ্ঠান হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন থেকে ফান্ডের অভাবে ফ্ল্যাট ও প্লট ক্রয় করতে ঋণ পাওয়া অনেক কঠিন হতো। কিন্তু আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন এর আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। তারা এখন সরল সুদে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সহজেই হাউজিং লোন দিচ্ছে। বর্তমানে আমানতের সুদের হার কম থাকায় সবাই কম সুদে হাউজিং লোন দিচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের জুনে রিহ্যাবের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল। এরপর ২০১৬ সালের মে মাসে দ্বিতীয় বার এবং ২০১৮ সালের নভেম্বরে ৩য় বারের মতো দায়িত্ব গ্রহণ করে। সর্বশেষ চলতি মাসে ১২ তারিখে চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হন। ইতিপূর্বে দায়িত্ব গ্রহণের পর নানাবিধ সমস্যা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে বেশ কিছু সাফল্য অর্জন করে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ।