প্রথম পাতা • লিড ৫ • শেষ পাতা
৭ কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে পতন
মাসুদ মিয়া : দেশের শেয়ারবাজার আগের দিনের ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবারও বড় ধরনের দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের তিন কার্যদিবসেই বড় দরপতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। সেই সঙ্গে টানা সাত কার্যদিবস পতনের মধ্যে থাকলো বাজার। এমন টানা বড় দরপতনের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গতকাল লেনদেনের শুরুতে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে। এতে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ৪০ পয়েন্টের ওপরে বেড়ে যায়।
শুরুর এই বড় উত্থান প্রবণতা লেনদেনের প্রথম আড়াই ঘণ্টা অব্যাহত থাকে। এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ৮৮ পয়েন্ট পর্যন্ত বেড়ে যায়। কিন্তু দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে। পতনের তালিকায় নাম লেখাতে থাকে লেনদেনে অংশ নেওয়া একের পর এক প্রতিষ্ঠান। ফলে বড় উত্থান থেকে দেখতে দেখতে ধসে রূপ নেয় শেয়ারবাজার।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৭৬ পয়েন্ট কমে ৭ হাজার ২০ পয়েন্টে নেমে গেছে। এর আগে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক কমে ৫৬ পয়েন্ট। দ্বিতীয় কার্যদিবস রোববার কমে ৮৯ পয়েন্ট। ফলে চলতি সপ্তাহের তিন কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক কমেছে ২২৩ পয়েন্ট। আর সাত কার্যদিবসের টানা পতনে কমেছে ৩৪৭ পয়েন্ট।
প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি কমেছে ডিএসইর অপর দুই সূচক। এর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ ২০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৫০৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ২২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৬৫৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
দিনভার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৮৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৫৪টির। আর ৩৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এবিষয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল রাজ্জাক বলেন, শেয়ারবাজার ভালোর দিকেই যাচ্ছিল। তবে হঠাৎ করে আবার পতন ধারায় চলে যাচ্ছে। এটা কোন কু চক্র মহল শেয়ারবাজার ধস নামাচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকার দের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করছে। রাজ্জাক আরও বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারা বাজার দরপতন ঘটাচ্ছে।
এবিষয়ে বিনিয়োগকারী মিজান বলেন, ২০১০ সালের ধসের পর সম্প্রতি শেয়ারবাজার অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। এতে বাজারে নতুন করে বিনিয়োগ বাড়িয়েছি। কিন্তু গত কয়েকদিনের দরপতনে বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়েছি। বাজারে প্রতিদিন যে হারে পতন হচ্ছে তাতে আবারও পুঁজি হারানোর শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেছে। হঠাৎ কেন এমন পতন হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। বাচ্চু নামে আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, প্রতিদিনই ভাবি আজ হয়তো শেয়ারের দাম একটু বাড়বে। সকালের দিকে দাম একটু বাড়লেও দিন শেষে দরপতন হচ্ছে। প্রতিদিনই বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছি। আমি যে কয়টি শেয়ার কিনেছি, সবগুলোতে লোকসানে রয়েছি। এই লোকসান কোথায় গিয়ে থামবে কিছুই বুঝতে পারছি না।
এভাবে বাজার পড়তে থাকলে সবার মধ্যেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে। আমি যাদের সঙ্গে কথা বলছি, সবাই হতাশার সুরে কথা বলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, সার্বিকভাবে বাজারে এখন এমন দরপতনের বস্তুনিষ্ঠ কোনো কারণ দেখছি না। এভাবে দরপতন হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, এই দরপতনের আগে বাজার কিন্তু অনেকটাই উঠেছে। সুতরাং বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ হয়তো এখন প্রফিট টেকিং করছেন। ফলে বিক্রির চাপ বাড়ায় দরপতন হচ্ছে।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজার খুবই সেনসিটিভ। যেকোন বিষয় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আর কোনো কারণে বাজারে একটু দরপতন হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দেয়। সবাই তখন বিক্রি করতে চায়। এতে বিক্রির চাপ বেড়ে গিয়ে পতনের মাত্রা বেড়ে যায়। এখনো হয়তো সেটাই হচ্ছে।
এদিকে টানা দরপতনের সঙ্গে শেয়ারবাজারে লেনদেনের গতিও কমে গেছে। গত কয়েক দিন আগে ডিএসইতে ২ হাজার কোটি টাকার উপরে লেনদেন হয়েছে এখন সেই লেনদেন কমে দুই হাজারের নিচে রয়েছে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৬৮২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় এক হাজার ৩৯৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ২৮৯ কোটি ২ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির ১০৪ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সের ১০২ কোটি ১৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৭৩ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আএফআইসি ব্যাংক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ফার্মা, ফরচুন সুজ, বেক্সিমকো, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, সোনালী পেপার এবং জেনেক্স ইনফোসিস।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৮৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৯৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২০৪টির এবং ২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।