নিবন্ধন করে টিকা নেয়ার অপেক্ষায় দেড় কোটির বেশি মানুষ
শাহীন খন্দকার : করোনা ভাইরাসের টিকার জন্য নিবন্ধন করার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এসএমএস পেতে দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে অনেকেকে। তাদের কেউ কেউ কোভিড টিকার জন্য সুরক্ষা ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের পর দুই মাসের বেশি সময় পার করে দিয়েছেন, কারও পেরিয়েছে কয়েক সপ্তাহ। দেশে গত ২৬ জানুয়ারি থেকে টিকার জন্য অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, সোমবার পর্যন্ত ৫ কোটি ৪৭ লাখ ৯৭ হাজারের বেশি মানুষ টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন।
এর মধ্যে করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৩ কোটি ৮৮ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মানুষ। অর্থাৎ, নিবন্ধিতদের মধ্যে এখনও টিকা পাননি প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, কোনো কোনো কেন্দ্রে টিকার আবেদন বেশি থাকায় তারিখ জানিয়ে এসএমএস পাঠাতে দেরি হচ্ছে। বিষয়টি সমাধানে কাজ চলছে।
গত ৩ অগাস্ট ঢাকা ডেন্টাল কলেজ কেন্দ্রে টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেন পল্লবীর বাসিন্দা সিয়াত আলীয়া। একই দিনে নিবন্ধন করেছিলেন তার মা নাজনীন সেলিমও। কিন্তু দুই মাস পরও টিকা নেওয়ার তারিখ জানিয়ে কোনো এসএমএস তারা পাননি। সিফাত আলীয়া বলেন, এখন মানুষ যেভাবে চলছে,তাতে সংক্রমণ আবারও বাড়তে পারে। যদি সংক্রমণ বাড়ে,তাহলে যারা এখনও টিকা নেননি, তাদের ঝুঁকি বেশি থাকবে।
ঝুঁকিমুক্ত থাকতেই টিকা নিতে চাইছি। কিন্তু এসএমএস তো আসছে না। এতদিন সময় নেওয়া উচিত না। এখন তো আমাদের সরবরাহে ঘাটতি নাই। অন্তত জানানো উচিত কেন টিকা পাই নাই। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ইকবাল শাহরিয়ার ও তার স্ত্রী টিকার জন্য নিবন্ধন করেছিলেন গত ৮ অগাস্ট। দুই মাস আট দিন পর ১৮ অক্টোবর এসএমএস পান তারা।
রাজাবাজারের একটি বাসার তত্ত্বাবধায়ক দেলোয়ার মৃধা গত ১০ অগাস্ট করোনাভাইরাসের টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। কেন্দ্র হিসেবে বাছাই করেন রাজধানীর জাতীয় নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। তিনিও জানালেন টিকার জন্য এসএমএস পাননি।
তিনি বলেন,সরকার সবাইকে টিকা নিতে বলছে।আমিও মনে করলাম টিকা নিলে নিরাপদ থাকতে পারব। এজন্যই বাসার একজনকে দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করছিলাম। কিন্তু দুই মাস পার হইছে এখনও টিকা নেওয়ার জন্য এসএমএসই পাইলাম না। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সুরক্ষা ওয়েবসাইটে নিবন্ধন অনুযায়ী তথ্যগুলো সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে। প্রতিটি কেন্দ্রে ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড দেওয়া থাকে। সে অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকাদান কার্যক্রমে নিয়োজিত স্বাস্থকর্মীরা এসএমএস পাঠানোর কাজটি করেন।
অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং ন্যাশনাল ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন,স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিদিন ৬ লাখ ডোজ টিকা দিতে পারে। তবে এই সংখ্যাটি আরও বাড়ানো যায়। দেড় কোটির বেশি মানুষ টিকার জন্য অপেক্ষায় আছে জানিয়ে তিনি বলেন, টিকার জন্য নিয়মিত নিবন্ধন হয়, তাদের মধ্য থেকে এসএসএম পাঠিয়ে কিছু মানুষকে টিকা দেওয়া হয়। একটা অংশ আছে একবার যাদের এসএমএস পাঠানো হয়েছে কিন্তু তারা তখনও আসেননি। এই দেড় কোটি মানুষের মধ্যে একটা বড় অংশ এমএমএস পাওয়ার অপেক্ষায় আছে।
নিবন্ধন করে দীর্ঘদিন পরও এসএমএস না আসার কারণ জানতে চাইলে ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এটা নির্ভর করে যে কেন্দ্রের জন্য নিবন্ধন করা হয়েছে সেখানকার চাপের ওপর। কোনো কোনো কেন্দ্রে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা বেশি। সেখানে এসএমএস পেতে কিছুটা দেরি হয়। আবার কোনো কোনো কেন্দ্র আছে গতকাল রেজিস্ট্রেশন করলে আজই ডেট পাওয়া যাচ্ছে। তবে ঢাকার বাইরে বেশি জমা নেই। এসব কেন্দ্রে সমস্যা সমাধানে আমরা কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াচ্ছি, বুথের সংখ্যা বাড়াচ্ছি। কীভাবে দ্রুত বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া যায় এগুলো নিয়ে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।