লিটার ১৬০ টাকা নির্ধারণের কথা জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা সয়াবিন তেল লিটারে বাড়লো ৭ টাকা
মো. আখতারুজ্জামান : দেশের বাজারে আবারও সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার ঘোষাণা দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। এবারে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের প্রতি লিটারে দাম বাড়ানো হয়েছে ৭ টাকা। আগে ১৫৩ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হবে ১৬০ টাকা কেজি দরে। মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এ কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী ও বনস্পতি উৎপাদক সমিতি। ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থানে সয়াবিনের দাম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। এখন তেলের দাম বাড়ানো কোনো সুযোগ নেই। আর সরকারের নিয়তন্ত্রণ না থাকায় ব্যবসায়ী একটি চক্র নিজেদের ইচ্ছা মতো পণ্যের দাম বাড়িয়ে থাকে।
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও অপরিশোধিত পাম তেলের দাম বাড়ায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সয়াবিন তেলের এই দাম নির্ধারণ করেছে সংগঠনটি।
এখন থেকে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকায় বিক্রি হবে, যা এত দিন ১৫৩ টাকা ছিল। এ ছাড়া পাঁচ লিটারের এক বোতল তেল পাওয়া যাবে ৭৬০ টাকায়, যা এত দিন ৭২৮ টাকা ছিল। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১৩৬ টাকা ও বোতলজাত পাম সুপার তেল ১১৮ টাকা দরে কিনতে পারবেন ক্রেতারা।
এই মূল্য অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে বাংলাদেশ ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী ও বনস্পতি উৎপাদক সমিতির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। তবে পরিবেশক ও খুচরা পর্যায়ে পুরোনো মজুতের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)-এর সহসভাপতি এস এম নাজির হোসেন জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা এক মাস আগে দাম বাড়ানো এই প্রস্তাব দিয়ে ছিলো। তখন বাড়ালে একটা কথা ছিলো। কিন্তু এখন বাড়ানো কোনো যুক্তি নেই।
বর্তমান এখন হয়েছে ব্যবসায়ীরা কোনো পণ্যের দাম বাড়ানো প্রস্তাব নিয়ে সরকারের কাছে গেলেই না করছে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ক্যাব’র তথ্যমতে, খোলা সয়াবিন ২০২০ সালে ছিলো ১০১ টাকা, ২০১৯ সালে ৮৮.৪০ টাকা ২০১৮ সালে ৯৯.৫০ টাকা, ২০১৭ সালে ৯২.৫৮ টাকা এবং ২০১৬ সালে ৯০ টাকা। অন্যদিক প্যাকেটজাত সয়াবিন ২০২০ সালে ১১৩.৭৫ টাকা, ২০১৯ সালে ১০৪.৩০ টাকা, ২০১৮ সালে ১০৮.৭৫ টাকা, ২০১৭ সালে ১০৫.৯৬ টাকা এবং ২০১৬ সালে ৯৭.৬৩ টাকা।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা কনশাস কনজ্যুমার্স সোসাইটি (সিসিএস) এর নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ বলেন, বিদেশে কোনো কিছুর দাম বাড়লেও আমাদের দেশে দাম বাড়ে। আবার কমলেও দাম কমে। তবে যেহারে দাম বাড়ে সেই হারে দাম কমে না। আমরা পেঁয়াজের ক্ষেত্রে দেখলাম, সরকার যখন শুল্কমুক্ত করার ঘোষণা দিলো তার পরের দিন কেজিতে ১৫ টাকা কমে ছিলো। প্রশ্ন হচ্ছে একদিনেই কিভাবে দেশের বাজারে বাহিরে পেঁয়াজ চলে এলো? যার ফলে দাম কমলো। আসল কথা হচ্ছে দেশের পণ্যের দাম বাড়ানো একটি চক্র আছে। দেশের ভোক্তারা এদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। এরা মন চাইলে দাম বাড়ায়, মন চাইলে কমায়। সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ইচ্ছা নিয়েও সন্দেহ আছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।