বিনিয়োগে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে ব্লু ইকোনমি
মো. আখতারুজ্জামান : প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, দেশের ব্লু ইকোনমিতে বেসরকারি খাতের জন্য বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এটাকে কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা উন্মুক্ত হবে।
রোববার যৌথভাবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনা ও করণীয় শীর্ষক এক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, এ কে এনামুল হকসহ বিডা ও এফবিসিসিআইয়ের নেতারা।
সালমান এফ রহমান বলেন, দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন হিসেবে এফবিসিসিআইর ৩০-৪০ তলার ভবন থাকা প্রয়োজন। এফবিসিসিআইর কার্যালয়ে মতিঝিল থেকে পূর্বাচলে নিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে। আইনি কোনো সমস্যা থাকলে সেই সমস্যার সমাধানের কথাও বলে তিনি।
দেশের ব্লু অর্থনীতির বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, দেশের ব্লু অর্থনীতি বেসরকারি খাতের জন্য বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। মনে রাখতে হবে, আমাদের পোশাক-শিল্প একদিনে এই অবস্থানে আসেনি। পোশাক-শিল্পে ব্যাক টু ব্যাক এলসি ও বন্ডের মাধ্যমে বিক্রি। তেমন ব্লু অর্থনীতিও। আমাদের সামনে বেশ কিছু অপশন রয়েছে যেগুলোকে কাজে লাগাতে পারলে ব্লু অর্থনীতিও ভালো করবো। আমাদের সম্ভাবনাময় শিল্প ছিল জাহাজ তৈরি।
ইউরোপে বেশ কয়েকটি দেশে জাহাজ রপ্তানি করা হয়েছিল। আজ সেই রপ্তানির খবর আর সামনে আসে না। একটি কোম্পানি ভালোও করেছিলো। কিন্তু কি কারণে তারা তাদের ব্যবসা বন্ধ করলে সেই সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে। সেই সমস্যার আলোকে আমাদের এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে। আমরা সম্প্রতি কন্টেইনার সংকটে পড়ে ছিলাম। এই কন্টেইনার তৈরি আমাদের জন্যও ভালো ব্যবসা হতে পারে। নিজেদের ব্যবহারের পাশাপাশি কন্টেইনার রপ্তানিও করতে পারি।
অনেকে বলছেন, ব্লু অর্থনীতিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে আলাদা মন্ত্রণালয় করার জন্য। এটার তেমন একটা প্রয়োজন নেই। যে মন্ত্রণালয় রয়েছে তাদেরকেই সঠিক গাইলাইন দিলেই হবে। তারা গাইডলাইন পেলে সেই আলোকে কাজ করবে। এখন আমাদের প্রয়োজন হচ্ছে বেসরকারি খাত থেকে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রয়োজন। তা হতে হবে নির্ভর যোগ্য। যাতে করে সরকার সেই বিষয়গুলোর আলোকে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
তিনি বলেন, ইলেকট্রনিকস ও আইসিটি সেক্টরেরও সুযোগ এসেছে। শিল্পখাতের জন্য সরকার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। আমরা আশা করি, ইলেকট্রনিকস ও প্রযুক্তি খাত রপ্তানিতে পোশাক-শিল্পকেও ওভারটেক করবে। এখন আইসিটি বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করছে, যা হয়তো দুই-তিন বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। সমুদ্রে আমাদের ফিশিং নিয়ে কাজ করতে হবে। সেখানে যে পরিমাণ মাছ ধরা হচ্ছে ভালো প্রযুক্তি পেলে সেটা আরও অনেক বেশি হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব মোহাম্মাদ খোরশেদ আলম জানান, গত বছর দেশের ৪ হাজার ৬০০টি জাহাজ এসেছে। জাহাজে করে দেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য গতবছর ৯ বিনিলয়ন ডলার খরচ করেছে। এর মধ্যে মাত্র ১০ ভাগ পরিবহন হয় নিজস্ব জাহাজের মাধ্যমে। ৫০ শতাংশ পণ্য নিজস্ব জাহাজের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি করতে পারলে বছরে সাড়ে চার হাজার বিলিয়ন ডলার সঞ্চয় হবে।
আমাদের দেশের মালিকানায় মাত্র ৭০টি জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি সরকারি বাকিগুলো বেসরকারি খাতের। জাহাজে করে পণ্য নিয়ে আসতে খরচ হয় ৪৭ শতাংশ। আর বন্দর থেকে পণ্য ঢাকায় নিয়ে আসতে খরচ হয় ৫৩ শতাংশ। আমাদের দেশের মোট কারখানার ৬৫ শতাংশ ঢাকা ও এর আশপাশে রয়েছে।
তিনি জানান, আমরা আমাদের সমুদ্রের মাত্র ৬০ কি.মি.’র মধ্যেই যে মাছ রয়েছে সেটা শিকার করে থাকি। এর বাহিরে যাওয়ার মত স্বক্ষমতা এখন অর্জন করতে পারিনি। সমুদ্রের যে ৫০-৬০ কেজি ওজনের মাছ রয়েছে তা শিকার কারার প্রযুক্তি আমাদের কাছে নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সামুদ্রিক এলাকা প্রাকৃতিক গ্যাস ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। এখন এই সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। সামুদ্রিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে শিল্পোন্নত দেশগুলো তাদের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। সমুদ্র অর্থনীতি কেবল নতুন বাজারের সুযোগই তৈরি করে না বরং এটি সামুদ্রিক সম্পদের সুরক্ষা দেয়। এর আওতায় সম্পদের সমৃদ্ধি বাড়ায়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সামুদ্রিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহারে ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সমুদ্রখাতে অনেক সেক্টর রয়েছে। তবে আমাদের এখনই মেরিটাইম শিপিংসহ বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের বন্দর আছে, সেখানে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। দেশীয় শিল্পের অধিকাংশ অর্থই চলে যাচ্ছে সড়ক দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়ায়। কারখানা থেকে পণ্য বন্দর পর্যন্ত নিতে একটা বড় খরচ হচ্ছে সেটা কেউ দেখে না, সেটাও হিসাবের মধ্যে আনতে হবে। জাহাজ-শিল্পের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে, আধুনিক মাছ ধরার ট্রলার হলে গভীর সমুদ্রের বড় মাছগুলো পাওয়া যাবে। সেখানেও রপ্তানি আয়ের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও