ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টায় একটি শ্রেণি সতর্ক থাকুন : প্রধানমন্ত্রী
নিনা আফরিন : দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে স্বার্থান্বেষী একটি শ্রেণি চেষ্টায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু কিছু ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটছে, ঘটানো হচ্ছে। ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হচ্ছে। সেটা আপনারা নিজেরাই টের পান। যাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। সেই সঙ্গে অপপ্রচারও চালানো হয়।
রোববার সকালে গণভন থেকে ভার্চুয়ালি পায়রা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে আর কখনও কেউ পেছনে টানতে পারবে না। এ সময় ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-তামাবিল মহাসড়কের আলাদা এসএমভিটি লেনসহ ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প দুটির নির্মাণ কাজের ভিতও স্থাপন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যতই উন্নতি করি, ভালো কাজ করি, একটা শ্রেণি আছে বাংলাদেশের বদনাম করতে তারা ব্যস্ত। তারা কী চায়? তারা এ দেশে স্বাভাবিক, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক, সেটা চায় না। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হলে পরে তাদের একটু কদর বাড়ে, সে জন্য তাদের সব সময়ৃতারা উন্নয়নটা আর দেখে না, ধ্বংসই তারা করতে চায়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।
সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘ সময় থাকার ফলে আজকের বাংলাদেশকে আর কেউ হেয় করে দেখতে পারে না। আজকে বাংলাদেশের নাম বললে সবাই সম্মান করে। আজকে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটা মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই।
সারা দেশে একটা যোগাযোগের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার বিকল্প নেই। আর তাই পায়রা সেতু করাসহ ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-তামাবিল মহাসড়কের আলাদা এসএমভিটি লেনসহ ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমি বলব, সারা দেশে একটা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।
পায়রা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির নাম ‘পায়রা’ রাখার যৌক্তিকতাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বরিশাল-পটুয়াখালীর একটা সংযোগ সৃষ্টি করবে এই পায়রা সেতু। কারণ পায়রা নদীর ওপর সেতু। নদীর নামে সেতুর নামটা হলে নদীটারও একটা পরিচয় পাওয়া যাবে। এ জন্য আমি নামটা পছন্দ করেছি। আর পায়রা তো শান্তির প্রতীক, কাজেই এ অঞ্চলে এই সেতু হবার পর মানুষের যে আর্থিক উন্নতিটা হবে, তার ফলে মানুষের মনে একটা শান্তি আসবে, মানুষ সুন্দরভাব বাঁচতে পারবে।
সিলেটের সড়কগুলো ৬ লেনে উন্নীত করার ফলে দারুণ কিছু সুযোগ আসবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই রাস্তাটা হয়ে গেলে যে যোগাযোগটা বাড়বে তার জন্য আমাদের দেশের বিশেষ উন্নতি হবে। কাজেই আন্তর্জাতিক সড়ক নেটওয়ার্কেও বাংলাদেশ যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়ে যাবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দক্ষিণাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে জানান সরকারপ্রধান। বলেন, এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নটা যত দ্রুত আমরা করতে পারি, ততই এ অঞ্চলের মানুষ আর্থিকভাবে সচ্ছল হবে, উন্নত হবে। জাতীয় অর্থনীতিতেও বিরাট অবদান রাখবে।
সশরীরে পায়রা সেতু দেখতে যাওয়ার আকাঙ্খার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বলেই আপনাদের সঙ্গে গণভবনে বসেও কথা বলতে পারছি, মিলিত হতে পারছি। তবে এটা ঠিক যে আমি যদি সেখানে উপস্থিত থাকতে পারতাম, পায়রা সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে পারতাম বা সেতুতে নেমে যদি একটু দাঁড়াতে পারতাম, পায়রা নদীটা দেখতে পারতাম। যে নদীতে আমি সব সময় স্পিডবোটে চড়েছি সেই নদীর ওপরের ব্রিজে যদি হাঁটতে পারতাম। তবে সত্যি খুব ভালো লাগতো।
করোনা পরিস্থিতির কারণে যেতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু করোনার কারণে আসলে এক প্রকার বন্দি জীবন, সেজন্য আর সেটা হলো না। তবে আমার আকাঙ্ক্ষা আছে একদিন গাড়ি চালিয়ে সম্পূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন, দৃষ্টিনন্দন এ নতুন সেতুটা দেখতে যাবো অবশ্যই।
বরিশাল পটুয়াখালী মহাসড়কে পায়রা নদীর উপর এ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪৪৭ দশমিক ২৪ কোটি টাকা। এ সেতু ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল ও ঝালকাঠির সঙ্গে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলাকে সরাসরি সড়ক পথের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। ফলে মাওয়া বা আরিচা থেকে পায়রা বন্দর ও সাগরকন্যা কুয়াকাটায় যেতে আর কোনো ফেরির প্রয়োজন হবে না।
১৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুটির প্রস্থ ১৯.৭৬ মিটার। আর সেতুর সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য ১২৬৮ মিটার এবং প্রস্থ ২২.৮০ মিটার। এ সেতুতে ৩২টি স্প্যান ও ৩৩৮টি পাইল রয়েছে। যার মধ্যে মূল সেতুর পাইল সংখ্যা ৫২টি। আর এ সেতুর গভীরতম পাইলের দৈর্ঘ্য ১৩০ মিটার, যার সংখ্যা ৪০টি। এছাড়া পিয়ার সংখ্যা ৩১টি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমুখ। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও