বৈদেশিক ঋণের স্থিতি অর্থ বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে পার্থক্য ৯৮৯ কোটি ডলার
সোহেল রহমান : সরকারের পুঞ্জিভূত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে গরমিল দেখা দিয়েছে। দুই হিসাবের মধ্যে পার্থক্য প্রায় ৯৮৯ কোটি ২৫ লাখ ডলার।
অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, গত ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে অর্থাৎ গত জুন শেষে সরকারের পুঞ্জিভূত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৪৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এটি জিডিপি’র ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, একই সময়ে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৩৫ কোটি ডলার। এটি জিডিপি’র ১৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ। সে হিসাবে গত জুন শেষে দেশে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৬০ দশমিক ৯৩ ডলার (প্রায় ৩৯ হাজার ৫৪৮ টাকা)।
অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে সরকারের বৈদেশিক ঋণের পুঞ্জিভূত স্থিতি ছিল ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। এটি ছিল জিডিপি’র ১৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বেড়েছে।
অর্থ বিভাগের মতে, করোনা জনিত কারণে সরকারের ঋণ বেড়ে যাওয়ায় সার্বিক ঋণ স্থিতি বেড়েছে। তবে এটি এখনো ঝুঁকিসীমার অনেক নীচে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ‘টেকসই ঋণ কাঠামো’ (ডেট সাসটেইনেবল ফ্রেমওয়ার্ক-ডিএসএফ)-এর মানদন্ড অনুযায়ী, জিডিপি’র ৭০ শতাংশ ঋণকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের পুঞ্জিভূত বৈদেশিক ঋণের যে হিসাব করেছে, এতে দেখা যায়Ñ ৫ হাজার ৯৩৫ কোটি ডলারের মধ্যে ৫ হাজার ২৮৭ কোটি ডলার-ই সরকারের নিজস্ব দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ। এর মধ্যে ঋণ সহায়তার পরিমাণ ৫ হাজার ৮৭ কোটি ডলার এবং অবশিষ্ট ২০০ কোটি ৩৫ লাখ ডলার অন্যান্য ঋণ।
এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী বৈদেশিক ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মোট ৩২৯ কোটি ৪৯ লাখ ডলার (স্বল্প মেয়াদী ১৫৭.১৭ কোটি ডলার ও দীর্ঘ মেয়াদী ১৭২.৩২ কোটি ডলার); বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মোট ২৫৫ কোটি ডলার (স্বল্প মেয়াদী ৪৪.২৮ কোটি ডলার ও দীর্ঘ মেয়াদী ২৫১.৭০ কোটি ডলার) এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ২২ কোটি ২০ লাখ ডলার স্বল্প মেয়াদী বৈদেশিক ঋণ রয়েছে।
এদিকে সরকারের সার্বিক পুঞ্জিভূত ঋণস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, গত ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে সরকারের মোট (অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক) পুঞ্জিভূত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। এটি জিডিপি’র ৩৮ শতাংশ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি হচ্ছে ৭ লাখ ২৩ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। এটি জিডিপি’র ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং মোট পুঞ্জিভূত ঋণের ৬৩ দশমিক ২৬ শতাংশ।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নে স্টেক-হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান ‘মধ্য মেয়াদী ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল’ আরও আধুনিকায়ন করা হবে এবং আঙ্কটাড-এর কারিগরি সহায়তায় অর্থ বিভাগে ‘ডেট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল এনালাইসিস সিস্টেম’ নামে একটি কাস্টমাইজ ডাটাবেজ স্থাপন করা হবে। এছাড়া সরকারের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ঋণ পরিস্থিতি আলোচনা ও বিশ্লেষণ, ঋণ গ্রহণের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা এবং এ-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণে আগামীতে একটি ‘ঋণ সম্মেলন’-এর আয়োজন করা হবে।