জোরালো হচ্ছে ‘হাফ পাশ’ দাবি, সাধারন শিক্ষার্থী ছাড়াও মাঠে ৮ ছাত্র সংগঠন
শরীফ শাওন : সারাদেশে গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের ‘হাফ পাশ’ দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিচ্ছিন্নভাবে সড়ক অবরোধ করেন। এসময় বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনসহ নানা শ্লোগান দিতে দেখা যায়। মার্কার দিয়ে বাসের গায়ে দাবির বিষয় লিখতেও দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে মিরপুর সড়ক, ধানম-ি, নিউ মার্কেট এলাকায় ব্যপক যানজট তৈরি হয়।
মঙ্গলবার দুপুর ১১টায় হাফ পাশের দাবিতে রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে রাস্তার উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভে অংশ নেয় ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থীরা। তারা জনান, হাফ পাশ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে। কয়েকদিন থেকে এ দাবি নিয়ে আন্দোলন জানানো হলেও সরকারের কোন পদেক্ষেপ দেখছি না।
দুপুর দেড়টায় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলে পড়ে ঢাকা কলেজের একদল ছাত্র। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৫০-৬০ জন তরুণ কলেজের হোস্টেল প্রাঙ্গণ থেকে লাঠিসোঁটা হাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও মারধরের শিকার হয়ে পরে দুপুর ২ টায় শিক্ষার্থীরা প্রস্থান করেন।
অপর দিকে বেলা ১১টায় রাজধানীর বকশিবাজার মোড়ে অবস্থান নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজসহ বিভিন্ন কলেজ শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে বিক্ষোভটি নীলক্ষেত মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এসময় তারা ‘হাফ পাশ’ নিয়ে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে কার্যকর করার দাবি জানান। অনাদায়ে ২৫ অক্টোবর নীলক্ষেত মোড় থেকে পুনরায় আন্দোলণের ঘোষণা দেওয়া হয়।
রায়হান কবির নামে এক শিক্ষার্থী জানান, ভাড়া নিয়ে প্রতিনিয়ত বাসে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে কোন কোন পরিবহন হাফ পাশ ভাড়া নিতেও রাজি হয়েছে। তবে এ সুবিধা নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর জন্য হলে তাতে বৈষম্য সৃষ্টি হবে। এ দাবি সকল শিক্ষার্থীর, তাই সমান অধিকার নিশ্চিত ও ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
এদিন রাজধানী ছাড়াও একই দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টার দিকে নগরের ২ নম্বর গেট মোড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একটি সমাবেশ শুরু হয়।
নগর পুলিশের উত্তর জোনের উপ-কমিশনার মোখলেসুর রহমান জানান, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সমাবেশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। শান্তিপূর্ণভাবেই তারা সমাবেশ মিছিল শেষ করেছে।
শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিশ্চিত করতে প্রজ্ঞাপন জারির জানিয়ে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে ৮ ছাত্র সংগঠন। দাবি না মানলে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি নেওয়া হবে জানিয়েছেন ছাত্রনেতারা। নীলক্ষেত মোড়ে সমাবেশ থেকে আগামী ২৯ নভেম্বর শাহবাগ সহ বিভিন্ন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এদিন বেলা ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি টিএসসি ঘুরে নীলক্ষেতে এসে বিক্ষোভ সমাবেশে মিলিত হয়। নীলক্ষেত মোড়ে দেড় ঘণ্টা ধরে সমাবেশ চলে। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল সাইন্সল্যাব মোড়, কাটাবন, শাহবাগ মোড় ঘুরে সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মাসুদ রানার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবীর, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মিখা পেরেগু, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সহ-সভাপতি সায়েদুল হক নিশান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের দপ্তর সম্পাদক শুভাশীষ চাকমা ও বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সভাপতি তৌফিকা প্রিয়া।
সমাবেশে ছাত্রনেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার পরিবহন খাতের সামগ্রিক নৈরাজ্য জারি রেখে ভাড়া বৃদ্ধির বোঝা জনগণের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। পরিবহন খাতের মাফিয়া এবং চাঁদাবাজের দৌরাত্ম্য ঠেকানোর কোন পদক্ষেপ সরকারের নাই। আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাতে দাম বৃদ্ধি করলেও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করা হয় না। এগুলো সরকারের গণবিরোধী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ।
ছাত্রনেতারা আরও বলেন, অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের হাফ পাসের প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। প্রজ্ঞাপন জারি করলে ছাত্রদের সাথে পরিবহন শ্রমিকদের অকারণ বাকবিত-া তর্ক বিতর্ক, মারামারি বন্ধ হবে। শহরের গণপরিবহনে কোনো সিটিং সার্ভিস চলবে না। ওয়েবিল চেকিং এর নামে বাড়তি ভাড়া নেয়া বন্ধ করতে হবে, কিলোমিটার প্রতি ভাড়া নিতে হবে। ন্যূনতম ভাড়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে।
সাইন্সল্যাব মোড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলা প্রসঙ্গে নেতৃবৃন্দ জানান, শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকটি আন্দোলনে এবং যেকোনো গণআন্দোলনে ছাত্রলীগ চাপাতি হেলমেট হাতুড়ি লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করে। ভোট ডাকাতির সরকারের যেকোনো গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে যেকোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগ এবং পুলিশের ভূমিকা একই। আন্দোলনে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজের বৃহত্তর প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান ছাত্রনেতারা।