আন্তর্জাতিক পর্বত দিবসের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সময়ের দাবি : বীর বাহাদুর উশৈ সিং
আনিস তপন : একান্ত আলাপে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং বলেন, সারা বিশে^ ১১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস পালিত হচ্ছে। পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও টেকসই ভবিষ্যত নির্মাণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারও দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করছে।
চলতি বছর আন্তর্জাতিক পর্বত দিবসের প্রতিপাদ্য করা হয়েছে, ‘সাসটেইনেবল মাউন্টেইন ট্যুরিজম’।
তিনি বলেন, পাহাড় হচ্ছে প্রকৃতির মাঝে এক নান্দনিক সৌন্দর্যের আধার। আবার পাহাড়-পর্বত প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে।
পাহাড়ের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলেও বৈশি^ক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অতিবৃষ্টি, খরা, ঝড়-ঝাঞ্জা মোকাবেলা করতে হচ্ছে মানুষকে। অপরদিকে মানুষের অপরিকল্পিত ব্যবহারের কারণে বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে বন উজার হওয়ায় পার্বত্য এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। প্রতিকূল এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাই বিশ^ব্যাপী তরুণদের সম্পৃক্ত করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, পাহাড়-পর্বত মানবজাতির ক্রমবিকাশে ভূমিকা রাখছে। আদিম সময় থেকে এখন পর্যন্ত সভ্য সমাজ প্রতক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাহাড়ের উপর নির্ভরশীল। খাদ্য, সুপেয় পানি, জ¦ালানির অন্যতম প্রধান উৎস পাহাড়। মানুষের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার অন্যতম স্থান। এটি মানুষের সাংস্কৃতিক ক্রমবিকাশে বেশ প্রভাব বিস্তার করেছে। বেঁচে থাকার জন্য, বিনোদনের জন্য, ধর্মীয় উপাসনা, আচার-অনুষ্ঠানসহ নানাবিধ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চর্চার ভূমি এসব পাহাড়-পর্বত। দেশের পার্বত্য অঞ্চল সল্প পরিসরে হলেও বিশাল এর বৈচিত্র ও সাংস্কৃতিক পরিসর।
বিশ^ উষ্ণায়নের বিরূপ প্রভাব সরাসরি পাহাড়ি কৃষিভিত্তিক জীবন ও অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে। তিন পার্বত্য জেলার আয়তন দেশের মোট ভূ-খ-ের শতকরা ১০ ভাগ হলেও এখানে বাস করে মোট জনসংখ্যার মাত্র এক ভাগ। সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে পার্বত্য তিন জেলার অধিবাসীরা দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে এখনো পিছিয়ে রয়েছে। সরকার এই অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবন-মান উন্নয়নে কাজ করছে।
পাশাপাশি সমতল এলকার অধিবাসীরাও পাহাড়-পর্বতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশের পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসীরা আর্থিকভাবে দুর্বল। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ায় ঝুকির মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিবেশের এই দ্রুত পরিবর্তন ও ক্ষতি এবং পার্বত্যবাসী অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হওয়ায় এই ঝুঁকি মোকাবেলায় তারা প্রায় অসমর্থ।
বীর বাহাদুর এমপি বলেন, বিশ^ পর্যটন শিল্পের শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ আয় হয় পাহাড়-পর্বতভিত্তিক পর্যটন থেকে।
এদেশেও পাহাড়কেন্দ্রিক সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প বেশ গুরুত্ব বহন করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, উন্নয়ন বোর্ড, পর্যটন শিল্পের বিকাশে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই অঞ্চলের জন্য টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধ পরিকর। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিক্ষা, যোগাযোগ, অবকাঠামো, কৃষিসহ অন্যান্য খাতেও উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তরান্বিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস প্রাকৃতিক ভয়াবহ বিপর্যয় কাটিয়ে ঝুঁকি মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতির বিষয়ে সচেতন করতেই পালন করা হয়ে থাকে বলেও জানান মন্ত্রী। ২০০৩ সাল থেকে প্রতি বছর ১১ ডিসেম্বর সারাবিশে^ যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস পালিত হয়ে আসছে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব