ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদন আগামীতে ১০টি ঝুঁকির সম্মুখীন বিশ্ব
লিহান লিমা : প্রায় ১ হাজার বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে সংগৃহীত বিশ্লেষণের ভিত্তি করে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফেরামের তৈরি করা বৈশ্বিক ঝুঁকি প্রতিবেদন এর ১৭তম সংস্করণে বলা হয়েছে, বিশ্ব আরো বেশি অসম হয়ে উঠছে এবং মহামারীর ফলে সৃষ্ট উত্তেজনা, অসন্তোষ এবং জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সামাজিক অস্থিতিশীলতা দেশগুলোর পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলবে।
প্রতিবেদনে মত দেয়া এক হাজার বিশেষজ্ঞদের ৮৪ শতাংশ বলেছেন তারা বিশ্বের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন। ১২ শতাংশ ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন।
প্রতিবেদনে আগামী ১০ বছরের প্রধান প্রধান বৈশ্বিক ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো- জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতা, চরম আবহাওয়া, জীববৈচিত্র হ্রাস, সামাজিক সম্প্রীতি হ্রাস, জীবনযাত্রার সংকট, সংক্রামক ব্যাধি, মানুষের পরিবেশগত ক্ষতি, প্রাকৃতিক সম্পদ সংকট, প্রাকৃতিক সম্পদ সংকট, ঋণ সংকট এবং ভূ-অর্থনৈতিক সংঘাত।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারী থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পুরোটাই নির্ভর করছে টিকার ওপর। সংস্থাটির গ্লোবাল রিস্কের প্রধান এমিলিও ফ্রাঙ্কো বলেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার একসঙ্গে হচ্ছে না।
২০২২ সাল শুরু হয়ে গিয়েছে কিন্তু এখনো বিশ্ব জনসংখ্যার অর্ধেককেও টিকা দেয়া হয় নি। এই অসমতা বিশ্ব অর্থনীতিকে বিভক্ত করতে পারে। তার ওপর মুদ্রাস্ফীতি, সরবরাহ-শৃঙ্খলে বাধা, ক্রমবর্ধমান ঋণ এবং সুরক্ষাবাদ বিশ্ব অর্থনীতিকে জলাবদ্ধতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁঁকি, সাইবার আক্রমণের ক্রমবর্ধমান হুমকি, ব্যাপক অভিবাসন এবং মহাকাশ অনুসন্ধানের মতো বিষয়গুলোর জন্য আরো জটিল হয়ে উঠেছে।’
প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, মহামারী পূর্ববর্তী সময়ে তুলনায় প্রায় ৫ কোটি ১০ লাখ বেশি মানুষ চরম দারিদ্রের মধ্যে বসবাস করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জলবায়ু বান্ধব নীতি নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে একটি বিভাজন সৃষ্টি হবে, কার্বন নিবিড় শিল্প থেকে সরে যাওয়া অর্থনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করবে এবং বেকারত্ব বাড়াবে। ডিজিটাল সিস্টেমের উপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা যা মহামারীতে আরো ব্যাপকভাবে বেড়েছে তা বিশ্বকে পুরোপুরি বদলে দেবে। ডিজিটালাইজেশন সম্পর্কে অপ্রস্তুতের কারণে ২০২০ সালে ম্যালওয়্যার এবং র্যানসমওয়্যার আক্রমণ যথাক্রমে ৩৫৮ শতাংশ এবং ৪৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডব্লিউইএফ বলছে, মহামারী দেখিয়েছে কোনও দেশই অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং সামাজিক ব্যাঘাত থেকে মুক্ত নয়। তাই সরকারগুলোকে অপেক্ষমাণ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার প্রস্তুতির জন্য বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। অর্থাৎ বৃহত্তর নীতিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা, জনস্বাস্থ্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিষয়গুলো মোকাবেলায় স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করা এবং সমাধানের জন্য বেসরকারি খাতের বৃহত্তর অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা।