ঢাকার প্রতিটি এলাকায় খেলার মাঠ করে দেওয়া হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী
অর্থনীতি ডেস্ক : শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অভিভাবকদের আরও বেশি আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সব থেকে দুর্ভাগ্য হলো, ঢাকা শহরে খেলাধুলার জায়গা সব থেকে কম। ইতিমধ্যে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি, প্রতিটি এলাকায় যেন খেলার মাঠ থেকে। যেখানে খালি জায়গা পাচ্ছি আমরা খেলার মাঠ করে দিচ্ছি। বুধবার সকালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার ২০১৩-২০ প্রধান অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলা জাতি গঠনে বিশেষ অবদান রাখে বলে আমি বিশ্বাস করি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও সব সময় উৎসাহ দিতেন। তিনি নিজেও স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকতেন, খেলা দেখতেন। ১৯৭২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম প্তটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রপতি একাদশ ও মুজিবনগর একাদশের মধ্যে ঢাকা স্টেডিয়ামে। সেখানে খেলোয়ার ও সংগঠকদের উদ্দেশে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, সেখানেও তিনি উল্লেখ করেছিলেন একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে ক্রীড়ার দিকে যথাযথ মনোযোগ দেওয়া দরকার।
তিনি বলেন, আমরা যখন দ্বিতীয়বার সরকারে আসি তখন ক্রীড়া অঙ্গনে ব্যাপক উন্নয়ন করতে সক্ষম হই। ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্রীড়া অঙ্গনে বাংলাদেশের সফলতার পরিসংখ্যান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে আমাদের জাতীয় দলগুলো দক্ষতা দেখাচ্ছে, আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তারা বারবার অংশগ্রহণ করছেন, স্বর্ণপদক-তাম্রপদক পাচ্ছেন। সব ধরনের সাফল্য আমরা দেখতে পাই। এটা বাংলাদেশের জন্য সত্যি খুব সৌভাগ্য। ১৯৯৬ সালে যখন আমরা সরকারে আসি তখন বিকেএসপিতে কিছুই ছিল না। বড় বড় ঘাস আর সাপ ঘুরে বেড়াতো এমন একটা পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। আমি নিজে সেখানে গিয়েছিলাম তখন আমাদের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি আমাকে নিয়ে যায় দেখেন আপা কী অবস্থা! তারপর থেকে আমরা এটা উন্নতি করার পদক্ষেপ নেই।
বাংলাদেশ দলের সাফল্যের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট এগিয়ে গেছি। সেইসঙ্গে আমাদের মেয়েরা কিন্তু পিছিয়ে নেই। মেয়েদের খেলাধুলা যখন প্রথম ৯৬ সালে শুরু করি তখন কিছু কিছু প্রতিবন্ধকতা এসেছিল। সেটা আমরা কাটিয়ে উঠেছি এখন।
এ সময় নারী ক্রিকেট ও প্তটবল দলের সাফল্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ক্রিকেট-প্তটবল সব ক্ষেত্রেই দেখি আমাদের নারীরা অনেক পারদর্শিতা দেখাতে পারছে। তাদের বেশি করে সুযোগ দিতে হবে এবং আরও উৎসাহিত করতে হবে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন যারা তারাও কিন্তু খেলাধুলায় যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখায়। ৯৬ সালে যখন আমি সরকারে তখন তাদের বিশেষ অলিম্পিকে যাওয়ার কথা, আর্থিকভাবে সেই সামর্থ্য ছিল না। আমি প্রাইম মিনিস্টারের ফান্ড থেকে টাকা দিয়ে তাদের পাঠিয়েছিলাম। ৭২টা পদক নিয়ে এসেছিল বাংলাদেশ। তারপর থেকে যারা ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড তাদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। তারা কিন্তু পারদর্শিতা আরও বেশি দেখাচ্ছে। সুস্থরা যা না পারে এরা কিন্তু আরও বেশি পারে, সেটাই আমার ধারণা, আমি দেখতে পাচ্ছি।
আমরা সব সময় ক্রীড়াকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেই। ইতোমধ্যে আমরা আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম তৈরি করছি, সেইসঙ্গে আমাদের লক্ষ্য সারা দেশে প্রতিটি উপজেলায় খেলার মাঠ সেই খেলাম মাঠ বড় স্টেডিয়াম না। মিনি স্টেডিয়াম আমি নাম দিয়েছি। সেটার নির্মাণ কাজ চলছে। এ পর্যন্ত ১৮৬টি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আরও ১৭১টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারে আমরা স্টেডিয়াম করে দিয়েছি। সেখানে শুধু ক্রিকেট না, প্তটবলসহ পুরো ক্রীড়া কমপ্লেক্স হবে। সিলেটে আমরা যে আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম করে দিয়েছি, এই দুটি স্টেডিয়ামের দুটি দিকে আমরা দৃষ্টি দিয়েছি। কক্সবাজারে সমুদ্রের দিকটা সম্পূর্ণ খোলা থাকবে আর সিলেটে পাহাড়ের সবুজ দৃশ্যটা যাতে দেখা যায় সেদিকটা উন্মুক্ত রেখে স্টেডিয়াম করা হচ্ছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশীয় খেলা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের অনেকগুলো খেলা আছে। এসব গ্রামীন খেলাগুলো কিছুটা চালু করা হয়েছে। সেগুলো সচল করতে হবে। খুব বেশি খরচও লাগে না। আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা, আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতা যাতে ব্যাপকভাবে চলে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
ঢাকার প্রতিটি এলাকায় খেলার মাঠ করে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সব থেকে দুর্ভাগ্য হলো, ঢাকা শহরে খেলাধুলার জায়গা সব থেকে কম। ইতোমধ্যে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি, প্রতিটি এলাকায় যেন খেলার মাঠ থেকে। আমাদের শিশুরা এখন ফ্ল্যাটে বাস করে, ফ্ল্যাটে বাস করে করে সেই ফার্মে মুরগির মতোই হয়ে যাচ্ছে। আর এখন তো মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, আইপ্যাড এগুলো ব্যবহার করে ওগুলোর মধ্যে পড়ে থাকা। এটা মানসিকভাবে-শারীরিকভাবে সুস্থতার লক্ষ্য না।
বাবা-মা, অভিভাবকদের আমি অনুরোধ করবো কিছু সময়ের জন্য হলে ছেলে-মেয়েরা যাতে হাত-পা ছুড়ে খেলতে পারে সেটা আপনাদের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। প্রত্যেকটা এলাকায় খেলার মাঠ থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন। ইতোমধ্যে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি, যেখানে খালি জায়গা পাচ্ছি আমরা খেলার মাঠ করে দিচ্ছি। আমাদের যারা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন তাদের প্রশিক্ষণের জন্য সংসদ ভবনের পাশের মাঠে আমরা নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। তাদের জন্য একটা একাডেমিও আমরা তৈরি করে দিচ্ছি। প্রত্যেকটা অভিভাবক যদি একটু আন্তরিক হন, ছেলে-মেয়েদের দৌড়-ঝাঁপের মধ্য দিয়ে শারীরিক-মানসিক বিকাশ হয়। তারা অন্য দিকে যাবে না। জেলা-উপজেলা প্তটবল, হকি, সাঁতার সেই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশীয় খেলাগুলো ডাঙ্গুলী থেকে শুরু করে হাডুডু সব খেলাই তো আমাদের দেশে ছিল। স্কুলে স্কুলে খেলা হতো। সেই খেলাগুলো এবং আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা করতে হবে। সূত্র : ডেইলি স্টার বাংলা, বাসস