আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন
সোহেল রহমান : আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা ব্যয় সম্বলিত ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী’ (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে সরকার (জিডিপি’র ৫ দশমিক ৬ শতাংশ)। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস তথা সরকারি অর্থায়নের পরিমাণ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ কোটি ৯ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়নের পরিমাণ ৯৩ হাজার কোটি টাকা।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটে এডিপি’র আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। এটি জিডিপি’র ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা’য় (এনইসি) এ অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে সভায় সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এক ব্রিফিং-এ সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্পোরেশনগুলোর জন্য প্রায় ৯ হাজার ৯৩৭ কোটি ১৮ লাখ টাকার এডিপি-ও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থায়নের পরিমাণ ৭ হাজার ১০৪ কোটি ২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়নের পরিমাণ ২ হাজার ৮৩৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। তিনি বলেন, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্পোরেশনগুলোর উন্নয়ন প্রকল্পসহ এডিপি’র মোট আকার দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩ কোটি টাকা। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করেই এই অনুমোদন। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নসহ নানা ধরনের উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, এডিপি’র আওতায় মোট প্রকল্পের সংখ্যা হচ্ছে ১ হাজার ৪৩৫টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ২৪৪টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১০৬টি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্পোরেশনগুলোর নিজস্ব অর্থায়নের আওতায় ৮৫টি প্রকল্প রয়েছে। খাত ভিত্তিক বরাদ্দের শীর্ষ ১০টি হচ্ছেÑ পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ প্রায় ৭০,৬৯৬ কোটি টাকা (২৮.৭৩%); বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে প্রায় ৩৯,৪১২ কোটি টাকা (১৬.০২%); শিক্ষা খাতে প্রায় ২৯,০৮১ কোটি টাকা (১১.৮২%); গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলী খাতে প্রায় ২৪,৪৯৭ কোটি টাকা (৯.৯৬%); স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ১৯,২৭৮ কোটি টাকা (৭.৮৩%); স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে প্রায় ১৬,৪৬৫ কোটি টাকা (৬.৬৯%); কৃষি খাতে প্রায় ১০,১৪৪ কোটি টাকা (৪.১২%) ; পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ খাতে প্রায় ৯,৮৫৯ কোটি টাকা (৪.০১%); শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে প্রায় ৫,৪০৭ কোটি টাকা (২.২%) এবং বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে প্রায় ৪,১৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়/বিভাগ ভিত্তিক বরাদ্দের শীর্ষ ১০টি হচ্ছেÑ স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৩৫,৮৪২ কোটি টাকা; সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য প্রায় ৩১,২৯৬ কোটি টাকা; বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য প্রায় ২৪,১৩৯ কোটি টাকা; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রায় ১৬,০১১ কোটি টাকা; স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জন্য প্রায় ১৫,৮৫১ কোটি টাকা; রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রায় ১৪, ৯২৯ কোটি টাকা; মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য প্রায় ১৪,০০১ কোটি টাকা; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রায় ১১,৬৪২ কোটি টাকা; সেতু বিভাগের জন্য প্রায় ৯,২৯০ কোটি টাকা এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রায় ৭,৯৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
প্রকল্প ভিত্তিক বরাদ্দের শীর্ষ ১০টি হচ্ছেÑ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ১৩,৩৯৬ কোটি টাকা; চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী (পিইডিপি-০৪) প্রকল্প খাতে প্রায় ৮,৭৫৯ কোটি টাকা; মাতারবাড়ি ২,৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্পের জন্য প্রায় ৬,৫৫৪ কোটি টাকা; হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (১ম পর্যায়) প্রকল্পের জন্য প্রায় ৬,০১৯ কোটি টাকা; পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য প্রায় ৫,৮০৯ কোটি টাকা; কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সী রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডামিক পিপেয়ার্ডনেস (ডব্লিউবি-জিওবি) প্রকল্পের জন্য ৪,২৫৪ কোটি টাকা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ৩,৮৫১ কোটি টাকা; ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ৩,৭০৩ কোটি টাকা; এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া প্রকল্পের জন্য ৩,০৫৯ কোটি টাকা এবং ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬) প্রকল্প খাতে ২,৮৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে।