বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক কাটছে না
মাসুদ মিয়া : দেশের শেয়ারবাজার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়া টানা দরপতন চলছে। টানা দরপতের কারনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক কাটছে না। বেশ কিছুদিন যাবত অস্থিরতা বিরাজ করছে শেয়ারবাজার। গতকাল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারও দরপতনের মধ্যে দিয়ে শেয়ারবাজারে লেনদেন শেষ হয়েছে। এই নিয়ে টানা সাত কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে দর পতন অব্যাহত রয়েছে। এই টানা পতনে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সাড়ে চারশত পয়েন্ট এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১২ শত পয়েন্ট হারিয়েছে। গতকাল সূচকের সাথে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর এবং টাকার পরিমাণে লেনদেনও কমেছে।
এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বর্তমানে শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আস্থাহীনতার অভাব। সে কারনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কে বাড়ছে। এই আতঙ্কের কারনে শেয়ার বিক্রির মহোৎসবে মেতেছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে শেয়ারবাজারে বড় দর দরপতন হচ্ছে। পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ইস্যুর মধ্যে দেশের বাজারে ডলারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং শ্রীলঙ্কার দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানা ভয় ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এই ভয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। তারা টাকা তুলে নিতে শেয়ার প্যানিক সেল দিচ্ছেন। প্যানিক সেলের পরিমাণ এতই বেশি যে বাজার আবারও দরপতনের ধারায় থেকে বেড় হতে পারছে না। এবিষয়ে ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, ডলারের অস্থিরতার প্রভাব সবজায়গাতে পড়েছে। পাশাপাশি জিনিসপত্র এবং শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির ঘটনা নিয়ে নানা রকম গুজবে বিনিয়োগকারীরা প্যানিক হয়ে শেয়ার বিক্রি করেছেন।
এছাড়া আরেকটি হলো করোনার সময় ব্যবসা-দোকানপাট বন্ধ করে কিছু মানুষ শেয়ারে বিনিয়োগ করেছিল। এখন তারা পুরোনো ব্যবসায় ফিরেছে। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, দরপতন ঠেকাতে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। এর আগে গত ৯ মে ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়ে ৬ হাজার ৬৯৮ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। এরপর ১০ মে থেকে পতন শুরু হয়। যা গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। বৃহস্পতিবার সূচকটি কমতে কমতে ৬ হাজার ২৫৮ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। অর্থাৎ এই সাত কার্যদিবসে ডিএসইএক্স সূচকটি ৪৪০ পয়েন্ট কমেছে। গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমতে থাকে। এতে লেনদেনের ১০ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৭৫ পয়েন্ট কমে যায়। আর লেনদেনের এক ঘণ্টার মাথায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে ৮০ পয়েন্ট। এরপর অবশ্য বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ে। এতে বড় পতন থেকে বেরিয়ে এক পর্যায়ে সূচক ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা পায়।
দুপুর ১টা ২৫ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে সূচকের এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। লেনদেনের শেষ ঘণ্টায় এসে আবার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমে যায়। ফলে বড় পতন দিয়েই শেষ হয় দিনের লেনদেন।
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫১.৬৬ পয়েন্ট বা ০.৮১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৫৮.২৪ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৮.৪৬ পয়েন্ট বা ০.৬০ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৯.৮০ পয়েন্ট বা ০.৮৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৮৩.০৪ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৩১৬.৬৮ পয়েন্টে। ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৬৬৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকার। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৯৪ কোটি ৫ লাখ টাকা কম।
আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল ৭৬২ কোটি ৯৩ লাখ টাকার। ডিএসইতে ৩৮০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৭টির বা ১৭.৬৩ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ২৬৩টির বা ৬৯.২১ শতাংশের এবং ৫০টির বা ১৩.১৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- বেক্সিমকো লিঃ, ইসলামি ব্যাংক লিঃ, শাইনপুকুর সিরামিকস, জেএমআই হসপিটাল, বিএসসি, ওরিয়ন ফার্মা, এনআরবিসি ব্যাংক, এসিআই ফরমুলেশন, আরডি ফুড ও বিএটিবিসি।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- এসআলম কোল্ড, বিএনআইসিএল, বিএসসি, সিলভা ফার্মা, বীকন ফার্মা, আলহাজ্ব টেক্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, রানার অটো, ই-জেনারেশন ও কে অ্যান্ড কিউ।
দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- পেপার প্রসেসিং, এসিআই ফরমুলেশন, বঙ্গজ লিঃ, আরডি ফুড, শাইনপুকুর সিরামিকস, তাক্কাফুল ইন্স্যুরেন্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, এনটিসি, এনআরবিসি ব্যাংক ও মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ১৩৫.৪৩ পয়েন্ট বা ০.৭২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪৩৯.৭২ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৮৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৫৪টির, কমেছে ২০৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬টির দর। সিএসইতে ২৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।