পরোটা-শিঙাড়া আকারে ছোট ও দাম বাড়ায় খাওয়া কমিয়েছেন নি¤œবিত্তরা
অর্থনীতি ডেস্ক : দফায় দফায় সয়াবিন তেল, আটা-ময়দা সহ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় পাড়া-মহল্লার হোটেল, রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা পড়ছেন বিপাকে। গত বছরের শেষে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পর রুটি, পরোটা, ডিম ভাজিসহ বিভিন্ন খাবারের দাম বাড়িয়েছিলেন তারা। তবে সম্প্রতি ফের নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন লাগলেও নতুন করে আর খাবারের দাম বাড়াতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে লোকসান ঠেকাতে পরোটা, শিঙাড়ার আকার ছোট করছেন। তবে এতেও বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন না হোটেল ব্যবসায়ীরা। এমন অবস্থায় ব্যবসা টেকাতে অনেকেই খাবার কম তৈরি করছেন।
শুক্রবার ও শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার হোটেল মালিকরা জানান, এখন আর আগের মতো খাবার তৈরি করছেন না তারা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধবগতিতে নি¤œ ও মধ্যবিত্ত মানুষ হিসাব করে খরচ করছেন উল্লেখ করে হোটেল মালিকরা বলছেন, তেলের দাম বাড়ার পর এক তৃতীয়াংশ গ্রাহক কমেছে। এছাড়া খাবার বিক্রির পরিমাণ ও কমেছে।
মিরপুরের বিভিন্ন হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, তিন টাকা, পাঁচ টাকা- এই দুই ধরনের আলু পুরি বিক্রি করছেন তারা। এছাড়া শিঙাড়া ও সমুচা বিক্রি হচ্ছে পাঁচ টাকায়। তবে দীর্ঘক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তিন টাকা দামের পুরিই বিক্রি হচ্ছে বেশি।
হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, হোটেলের খাবার তৈরির মূল উপাদান ময়দা ও তেল। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ময়দার দাম কেজিতে ৮ টাকা, তেলের দাম লিটারে ৪০টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ডিম, সবজি, মাংস, পেঁয়াজসহ সব জিনিসের দাম বেড়েছে। এমন অবস্থায় দাম বাড়িয়ে বা খাবারের মান কমিয়েও বিশেষ সুবিধা হচ্ছে না তাদের।
পল্লবীর মিরপুর হোটেলের স্বত্বাধিকারী মিজান মাহমুদ বলেন, কাস্টমার (ক্রেতা) কমেছে প্রায় অর্ধেক। সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত পরোটা, ডিম-ডাল ভাজির কাস্টমার পাওয়া যেতো। এখন ৯টার পর কাস্টমার পাওয়া যায় না। একেক জন আগে ৫০-১০০ টাকা বিল করতো, এখন ২৫-৩০ টাকা বিল করছে। আমরাও খাবার বানানো কমিয়েছি। ফলে যেদিন গ্যাস থাকে না সেইদিন দেখা যায় অনেকেই হোটেলে এসে খাবার পায় না।
তিনি বলেন, নি¤œবিত্ত যেসব মানুষ হোটেলে সকাল-বিকালের নাস্তা করতেন তারাও খাওয়া কমিয়েছেন। তাদের পরিবারের ব্যয় বেড়েছে। ফলে খাওয়া কমিয়ে টাকাটা সংসারের কাজে লাগাতে চাইছেন।
মিরপুরের বেশ কয়েকটি হোটেলে দেখা গেছে, তারাও সকাল-বিকালের নাস্তা বানানোর পরিমাণ কমিয়েছেন। মিরপুর ১২ নম্বরের রাজু হোটেলের এক কর্মচারী বলেন, আমাদের হোটেল রাতে ৮ ঘণ্টা বাদে সবসময়ই খোলা থাকে। আগে দিনে ২৫ লিটার তেল লাগতো, ১০-১৫ কেজি ময়দা লাগতো। এখন ২০ লিটার তেল লাগছে, ময়দার ব্যবহারও কমেছে। কেননা হোটেলে আগের তুলনায় খাবারের চাহিদা কম।
হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার পর এমন দুর্যোগ আসতে পারে তা তারা কল্পনাও করতে পারেননি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যদি আরও বাড়ে তাহলে তাদের হোটেল ব্যবসা ছেড়ে বিকল্প চিন্তা করতে হবে।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, আমরা অনেকেই আর টিকে থাকতে পারছি না। অনেকেই হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ করে ফেলছেন। করোনার পরে ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করেছিলেন।
কিন্তু উল্টো এখন ব্যবসা বন্ধ করার অবস্থা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩০-৪০ শতাংশ বিক্রি কমেছে। রেস্তোরাঁগুলোতে মানুষ কম আসছেন, খাবারও কম কিনছেন। কিন্তু রেস্তোরঁগুলোর ব্যয় বেড়ে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় হোটেলের কর্মীরাও বেশি বেতন চাইছেন। খুব কষ্টে আছি আমরা।
তিনি বলেন, এখন অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁ খাবার বানানো কমিয়েছে, কেউ দোকান বন্ধ রাখছে। যুদ্ধের কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। এটাতো কারও হাতে নাই, সহসা সমাধানও হচ্ছে না। এ অবস্থায় আমাদের টিকে থাকাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। সূত্র : জাগোনিউজ, বার্তা২৪