বিমসটেক সম্মেলনে শেখ হাসিনা জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় হাতে হাত রেখে কাজ করতে হবে
আগামী সম্মেলনে এফটিএ চুক্তির বাস্তবায়নের পরামর্শ
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : বিশ্ব কমিউনিটির দায়িত্বশীল সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের জিরো টলারেন্সের কথা পুনর্ব্যক্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সহিংস চরমপন্থাকে দমনে আমাদের হাতে হাত ধরে কাজ করতে হবে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে পরাজিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদ মোকাবিলায় বিমসটেকের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারে আমরা সক্ষম হব।
গতকাল রোববার ভারতের গোয়ায় ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সামিটে অংশ নিয়ে জোট নেতাদের প্রতি এ আহবান জানান শেখ হাসিনা। ব্রিকস ও বিমসটেকের এই শীর্ষ সম্মেলনকে নতুন সহযোগিতার সূচনা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জোট গঠনের একযুগ পরও এফটিএ (মুক্তবাণিজ্য চুক্তি) চুক্তি না হওয়ায় বিমসটেক (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন)ভুক্ত দেশগুলোর অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জোট নেতাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবেই দীর্ঘ সময় পরও এ চুক্তি বাস্তবতার মুখ দেখেনি।
তিনি জোটকে গতিশীল ও সক্রিয় করতে এফটিএ চুক্তি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আহ্বান জানান। আগামী বছর বিসমটেকের ২০তম বর্ষপূর্তির সময় এফটিএসংক্রান্ত চারটি চুক্তি গ্রহণের জন্য লক্ষ্য স্থির করার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।
গোয়ার লিলা হোটেলে এ রিট্রিটের আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিসমটেকভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে একে একে সবার সঙ্গে তিনি করমর্দন করেন এবং ছবি তোলেন। এরপর সবাই মিলে গ্রুপ ফটোসেশন হয়।
বিসটেক রিট্রিটের আগে এ জোটনেতাদের সম্মানে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্মীকান্ত পারসেকারের দেওয়া মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন শেখ হাসিনা। থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন বিমসটেকনেতারা।
বিমসটেকের যাত্রা শুরুর পর গত প্রায় ২০ বছরে দুটি অঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের কাজে অগ্রগতি খুব ধীরে হলেও সেই সংযোগের ভিত্তি দেওয়ার কাজ এখন শেষ হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
বিমসেটক অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবনযাত্রার মানোন্ননে আঞ্চলিক প্রকল্প তৈরির প্রস্তাব দিয়ে এ জোটের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এতে বিমসটেক যেমন জনগণের সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত হবে, সংগঠন আরও স্থিতিশীল ও দৃশ্যমান হবে। এখন আমাদের যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিমসটেককে আরও কার্যকর ও ফলপ্রসূ করতে নেতাদের প্রত্যাশার পুনর্মূল্যায়নের সময় এসেছে।
আগামী পাঁচ বছরে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জ্বালানি, আঞ্চলিক সংযোগ ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের মতো প্রধান ক্ষেত্রগুলোতে নজর দিতে বিমসটেক নেতাদের প্রতি আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন, সহযোগিতার প্রধান ক্ষেত্রগুলোতে নিয়মিত মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠক হলে তাতে কাজে গতি আসবে। সড়কপথে যোগাযোগ বাড়াতে বিমসটেক ওয়ার্কিং গ্রুপ ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু করেছে। সংযোগ বাড়াতে আমরা এখন উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি করার কথা বিবেচনা করতে পারি। এখন আমরা চাই, উন্নততর উপ-আঞ্চলিক গ্রিড সংযোগ এবং জ্বালানি বাণিজ্যের বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি ও তার বাস্তবায়ন দ্রুততর হবে।
নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গোয়ায় আমাদের আমন্ত্রিত করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আজ এখানে ১৯৯৭ সালে বিমসটেকের প্রতিষ্ঠাকালীন চারজন নেতার একজন হিসেবে দাঁড়িয়ে আমি বলতে পারি গত বিশ বছরে আমরা আমাদের দুটি অঞ্চলকে সংযুক্ত করার পথে অগ্রগতি এনেছি। এটা ঠিক আমাদের এগিয়ে চলার গতি কিছুটা মন্থর, তবে এখন সময় সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজটি জোরদার করার।
উল্লেখ্য, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে ১৯৯৭ সালে বিমসটেক গঠিত হয়। পরে ২০০৪ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ নিজেদের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলার বিষয়ে একমত হয়। তবে এ ধরনের অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও নীতি এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় সেই উদ্যোগ এখনো আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়া প্রায় দুই বছর আগে বাংলাদেশের প্রস্তাব অনুযায়ী ঢাকার গুলশানে বিমসটেকের স্থায়ী সচিবালয় যাত্রা শুরু হয়।
শনিবার গোয়ায় শুরু হওয়া অষ্টম ব্রিকস সম্মেলনে অংশ নেন এই জোটের সদস্য দেশ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট মিশেল টেমের, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
আর বিসমটেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি আউটরিচ সামিটে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী ভাষণ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনিও বিমসটেককে কার্যকর করার জন্য সকল সদস্যের সক্রিয় ভূমিকার আহবান জানান। অন্যসব নেতারাও তাদের বক্তব্যে বিমসটেককে কার্যকর জোটে পরিণত করার লক্ষ্যে তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তার প্রেসসচিব ইহসানুল করিম জানান, বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর নেতারা মধ্যাহ্নভোজের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সম্পাদনা: আলাউদ্দিন