সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী দুর্ভোগের আশঙ্কা
জহিরুল ইসলাম : অব্যাহত বৃষ্টি আর উজানের ঢলে বাড়ছে সিলেটের নদ-নদীর পানি।এর ফলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশই খারাপের দিকে যাচ্ছে।চরম দুর্ভোগে পড়ছেন বন্যাকবলিত মানুষেরা।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে সিলেটে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। এর সাথে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে নেমে আসছে ঢল। দুইয়ে মিলে সিলেট অঞ্চলে দেখা দিয়েছে বন্যা।
বন্যার্তদের উদ্ধারে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বন্যাকবলিত এলাকার স্থানীয়রা জানিয়েছে, বন্যায় জেলায় যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পরিস্থিতি ক্রমে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলার প্রতিটি উপজেলাই কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। অধিকাংশ ঘরেই হাঁটু থেকে গলাসমান পানি। নৌকার অভাবে অনেকে ঘর ছেড়ে নিরাপদেও যেতে পারছে না।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সুনামগঞ্জের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পুরোপুরি বিপর্যস্ত সুনামগঞ্জ জেলা। তবে প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করছে মানুষের পাশে দাঁড়াতে।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, ‘পৌর শহরের সব রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। মানুষ উঁচু এলাকা খুঁজে খুঁজে আশ্রয় নিচ্ছে। এক ভয়াবহ দুর্যোগে পড়েছে জেলা শহরের বাসিন্দারা।
অব্যাহত পানিবৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যে লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অসংখ্য বাড়িঘর, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট এখন পানিতে কাবু। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর সাথে উপজেলা সদর কিংবা জেলা সদরের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। সুপেয় পানির সংকটও দেখা দিচ্ছে।এমন অবস্থায় বন্যাকবলিত পরিবারগুলো দীর্ঘস্থায়ী দুর্ভোগের আশঙ্কা করছেন। সিলেটের নদীগুলোর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নদ-নদীগুলোর অবস্থা এখন বিপজ্জনক।
সুরমা, কুশিয়ারাসহ সব নদীতেই পানি বাড়ছে। অন্তত চারটি পয়েন্টে পানি আছে বিপৎসীমার ওপরে।পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত জেলার প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বেড়েছে। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার এবং সারি নদের সারিঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জেও বাড়ছে।
এদিকে আবার বন্যার কবলে পড়েছেন সিলেট মহানগরীর নিচু এলাকার বাসিন্দারা। কয়েকটি রাস্তা তলিয়ে বাসা-বাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি। এতে ফের ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরীর এসব এলাকার মানুষ।একমাসও হয়নি, বন্যার কবল থেকে মুক্তি পেয়েছেন সিলেটবাসী। সে বন্যার ধকল এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি বন্যার্তরা। এরই সিলেটে আবারও দেখা দিলো বন্যা।
নগরীর তালতলা, কালিঘাট, সোবহানীঘাট ও শাহজালাল উপশহর ঘুরে দেখা যায় যায়- নিচু রাস্তাগুলো ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে। বেশ কিছু বাসায় ঢুকে পড়েছে পানি। এতে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন অনেক পরিবার। কালিঘাটের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় ফের বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে গোয়াইনঘাট থেকে আমাদের প্রতিনিধি লোকমান হাফিজ জানান, গোয়াইনঘাটে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এক মাসের ব্যবধানে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। সালুটিকর – গোয়াইনঘাট সড়কে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গোয়াইনঘাট সদরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে।
জানা যায়, বাড়ি ঘর, রাস্তা ঘাট তলিয়ে গেছে। প্রধান প্রধান সড়কে এখন মাছ জাল আটকিয়ে মাছ ধরছেন অনেকেই।
নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার নি¤œ অঞ্চল প্লাবিত হয়ে রাস্তা ঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কোন কোন এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার পাশাপাশি মানুষের বসতবাড়িসহ, হাট বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবতি হয়ে গেছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাৎক্ষনিকভাবে মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণের নিমিত্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জেলা প্রশাসক , সিলেট এর মাধ্যমে উপজেলায় জি.আর খাদ্যশস্য বাবদ বরাদ্দকৃত ৪৪,০০০ টন চাল বরাদ্দ প্রদান করা হলো । প্রত্যেক উপকারভোগীকে ১০ কেজি হারে চাল বিতরণ করা হবে ।
সম্প্রতি কয়েক দিনের অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে অত্র উপজেলায় ৪র্থ বারের মতো সৃষ্ট বন্যা বিপদ সীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, সারি ও পিয়াইন নদীসহ গোয়াইনঘাটের অন্যান্য নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গোয়াইনঘাটবাসীকে ভীত না হয়ে সতর্ক থাকার জন্য। নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের চলিতাবাড়ী এলাকায় ১ জন নিখোঁজ ও ১ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।ইতোমধ্যে বন্যার সার্বিক অবস্থা জেলা প্রশাসকসহ মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে তাৎক্ষনিক অবহিত করা হচ্ছে এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে অত্র উপজেলায় জেলা প্রশাসক হতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ মজুদ রাখা হয়েছে। আবহাওয়ার সার্বিক অবস্থা একটু উন্নতি হলে উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নে ত্রাণ তৎপরতা চালু হবে। উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নে পর্যাপ্ত সংখ্যক আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে কারো বসতবাড়িতে পানি উঠলে বা থাকার সমস্যা হলে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করতে পারেন। উল্লেখ্য যে, যেসব আশ্রয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্টিত হবে ঐ সকল আশ্রয় কেন্দ্রগুলিতে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে।