ইভিএম-ই কেবল পারে প্রযুক্তি নির্ভর সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্বের নিশ্চয়তা দিতে
ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম
রাজনীতি অত্যন্ত জটিল। আর এই জটিলতার বেড়াজালে জন্মনেয় নেতা,পরিবর্তন হয় নেতৃত্বের। একটি গণতান্ত্রিক দেশে নেতৃত্ব পরিবর্তনের জিম্মাদারি জনগণের হাতে যা প্রতিফলিত হয় ভোটের মাধ্যমে। আবার এই ভোট ই কখনো দেশ কে ঠেলে দেয় প্রহসনের দ্বার প্রান্তে। কখনো আগের রাতে বা ক্স ভর্তি করে ,আবার কখনো একজনেই হাজারো ব্যালট পেপারে সিল মেরে ক্ষম তাকে করে কুক্ষিগত জনগণ হয়ে পড়ে অসহায়, গুরুত্বহীনও হতা শাগ্রস্থ। নির্বাচন কে কেন্দ্র করে ঝরে অগণিত রক্ত , ঝরে তাজাপ্রাণ। নেতৃত্বের অপপ্রয়োগে বেশি র ভাগ ক্ষেত্রেই দেশ হতে থাকে দরিদ্র – জনজীবনে নেমে আসে দূর্ভোগ। মাস্তান,সন্ত্রাসী আর চাঁদা বা জরা হয়ে যায় জনপ্রতিনিধি কঠিন হয়ে পড়ে নাগরিকদের চলারপথ ক্ষুধা দারিদ্রে অতিষ্ট হয় মানবজীবন।
অন্যদিকে একটি দূরদর্শী নিয়মতান্ত্রিক নেতৃত্বে জীবন হয়ে উঠে সমৃদ্ধ, আরামপ্রদ প্রযুক্তি নির্ভর। একটা দেশ সন্ত্রাস-চাঁদা বা জিতে ভরেযাবে,নাকি সমৃদ্ধির পথে ধাবিত হবে তারই নির্ণায়ক জনগণের ভোট াধিকার,সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেসঠিক লোককে নেতৃত্ব প্রদান। গণতান্ত্রিক দেশে তাই সুষ্টু নির্বাচনের গুরুত্ব অনস্বীর্কার্য।
ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম-ই কেবল পারে প্রযুক্তি নির্ভর সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্বের নিশ্চয়তা দিতে । এখানে উল্লেখ্যযে, বাংলা দেশে বর্তমানে উদ্ভাবিত এবং ব্যবহৃত ইভিএম মেশিন টি২০১৩ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত ইভিএম মেশিন হতে সম্পূর্ণ আলাদা,সম্পূণর্ নতুন চিন্তা নিয়ে ভিন্ন প্রযুক্তি তে ভিন্ন ভাবে উদ্ভাবিত। নতুন এই মেশিনটির উদ্ভাবকদের সাথে পূর্বের মেশিনের উদ্ভাব কদের কোন সংযোগ নেই নেই পূর্বের ইভিএম মেশিনের কোন সম্পর্ক। এই মেশিনে একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারেনা এবং ভোটের সময় ব্যতীত এর আগে বা পরেদিনে বা রাতে কখনো ই ভোট দেওয়া যায় না। ভোটার আঙুলের ছাপ দিলেই কেবল ইলেক্ট্রনিক ব্যালট পেপার ভোট দানের জন্য উন্মুক্ত হয় ,অন্যথায় নয়। ব্যালট পেপার অন হবার পর ভোটারতার ভোট প্রদানের সাথে সাথে তা আবারো অকেজো হয়ে যায় এবং অন্য একজন ভোটারের আঙ্গুলের ছাপনা দেওয়া পর্যন্ত আর ভোট দানের জন্য উন্মুক্ত হয় না। একজন ভোটার দ্বিতীয় বা র ভোট দিতে চাইলে মেশিন নিজেই তাকে ভৎসনা করে ফিরিয়ে দেয়। মানুষের করা দুর্নীতির সকল প্রচেষ্টা কেন স্যাৎ করে দেয় এই মেশিন -তার নিজস্ব ক্ষমতা বলে। কোন ভাবেই কেন্দ্র দখল করে ভোট দেওয়া যায় না বিধায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা আর রক্ত পাতেরসূত্রপাতহ বা র কোন সুযোগ থাকে না। শাš পরিবেশে নির্ভয়ে ভোট দিতে ইভিএমের কোন বিকল্পনেই। জনগণের প্রকৃত ভোটাধিকার নিশ্চিত করে যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের পথকে মসৃণ ও প্রশস্থ করতে প্রয়োজন নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার ।
যে কোন নতুনত্বের মাঝেই থাকে হাজারো জিজ্ঞাসা, ভয় ,সন্দেহ আর দ্যোদুল্য মানতা। তাছাড়া এ দেশে অতীতে ঘটে যাওয়া বহুবিধ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সুষ্ঠ্যু নির্বাচনের প্রত্যাশা জনগণের মাঝে আশাতীত। হ্যাঁ/না ভোটের প্রহসন হতে শুরু করে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি, কেন্দ্র দখল করে একজন মাস্তানের হাজারো ভোট প্রদান,দাঙ্গা-হাঙ্গামা আর রক্তের বন্যা প্রবাহিত করে নেতা হওয়া কিংবা প্রতিপক্ষকে ভয় দেখিয়ে ভোট কেন্দ্রের দ্বারের কাছেও ঘেষতে না দেওয়া কিনা ঘটেছে এ দেশের নির্বাচন কে ঘিরে। তাই ইভিএম কে ঘিরেও রয়েছে অনেক প্রশ্ন অনেক অবিশ্বাস। যদিও বিগত হাজার খানেক নির্বাচনে এই মেশিনের ব্যবহার প্রমাণ করেছে এর নিরপেক্ষতা এবং জনগণের আস্থা। এই নির্বাচন গুলোর কোনটিতেই হয়নি কোন সহিংসতা ঝরেনাই কারো রক্ত । ভোট কারচুপির কোন প্রমাণও কেউ দেখাতে পারেনি। তবু ভয় ! যা তারা দেখতো কি আসলেই সত্য? নির্বাচন কে সুষ্ঠ্যু হবে এবিশ্বাসই যেন দানাবাঁধেনা এ দেশের মানুষের মনে। কিন্তু পাশাপশি এটাও ভুলে গেলে চলবে না যে,আমাদের এই স্বপ্নের বা ংলা দেশ দ্রুতপদক্ষেপে এগিয়েযাচ্ছেসামনেরদিকে –অতীতের সকল ব্যর্থ তাগ�ানিকে পিছনে ফেলে – একটি ধনীউন্নত দেশ হবার স্বপ্ন নিয়ে । আর এই স্বপ্ন কেটেই বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন দুনীর্তি মুক্ত একটি সমাজ-যা সুষ্ঠ্যু নির্বাচন ছাড়া সম্ভব নয়। ইভিএম -ই কেবল পারে বাংলা দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠ্যু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে । একজনমানুষ – তিনি জাতি জন বঙ্গবন্ধুর কন্যা। তাঁর রয়েছে পরিবর্তনের স্বপ্ন বাংলা দেশকে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাড়করানোর দৃঢ় প্রত্যয়। পরিবর্তনের স্বপ্ন যাদের চোখে মুখে তারা যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে জানে বলেই আজকের পৃথিবীতে এত প্রযুক্তি মানুষের জীবনে এত সমৃদ্ধি। তারপরও বিশ্বাসের জায়গাটা সুদৃঢ় হয় না অনেক জিজ্ঞাসা ঘুরপাক খায় আমাদের মস্তিষ্ক জুড়ে। আর ইভিএম সম্পর্কে এই জিজ্ঞাসা গুলো নিয়েই আজকের এই প্রবন্ধের অবতারণা।
ইভিএমে ভোট কারচুপি করা যায় না প্রথমেই ধরাযাক,রহিম সাহেব ইভিএমে নিমগাছ প্রতীকে ভোট দিলেন,সেই ভোট বটগাছ প্রতীকে যাবেনাকেন? প্রোগ্রাম করে তো সবকিছুই করা যায় ,সুতরাং এক প্রতীকের ভোট অন্য প্রতীকে নেয়া সম্ভব হবে নাকেন?চাইলেই আপনি কোন ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে প্রোগ্রাম করে দেখিয়েও দিতে পারেন যেএক প্রতীকে ভোট দিলেন,তা অন্য প্রতীকে চলে গেল। ভাবছেন,কি ভয়ংকর ব্যাপার? তাইনা? না,মোটেই তা নয়। আপনি ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে প্রোগ্রাম করতে পারলেও আপনার বা সারা টিভির জন্য প্রোগ্রাম করতে পারবেন না। কারণ,টিভির প্রোগ্রাম টিটিভি তৈরির সময় ইকোম্পানির নিজস্ব কোডিং এর সাহায্যে তৈরি করে টিভির ভিতর ঢুকিয়ে দেওয়া হয় । তাই এই প্রোগ্রাম পরিবর্তন করা সম্ভবনয়।
তদ্রুপ,ইভিএমের প্রোগ্রাম ওচাইলেই আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না। একটি টিভিযে এই তৈরির পর চলে যায় কাস্টমারদের কাছে ,ঠিক তেমনি একটি ইভিএম তৈরির পর এটি উপজেলা নির্বাচন অফিসে চলে যায় । একটি ক্যাসেট প্লেয়ারের ভিতরযে এই কোন সিনেমা থাকে না,ক্যাসেট ঢুকিয়ে তা চালাতে হয় ;ঠিক তেমনি একটি ইভিএম মেশিনে কোন ডাটা থাকে না। কোন মেশিন কোন কেন্দ্রে যাবে,তাওকারোজানা থাকে না – এ এই কি নির্বাচন কি একই ারওনা। কোন ধরনের কাস্টমাইজেশন ছাড়াই একই মেশিনে ইউনিয়ন পরিষদ,উপজেলা,পৌরসভা এবং জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচন পরিচালনা করা হয় । অপর পক্ষে প্রত্যেক নির্বাচনের আগে ভোটারদের ডাটা,প্রার্থীদের ডাটা,প্রিজাইডিং অফিসারদের আঙ্গুলের ছাপসহ তথ্য এবং নির্বাচন সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্য এসডিকার্ড এবং স্মার্টকার্ডে কাস্টমাইজ করে নির্বাচন কেন্দ্রে পাঠানো হয় । এই সব তথ্যের উপরভিত্তি করেই মেশিন নির্বাচন কার্যসম্পন্ন করে । এসডিকার্ড এবং স্মার্টকার্ডে কোন প্রোগ্রাম থাকে না। এই কার্ডগুলো কিভাবে কাস্টমাইজেশন করা হবে ,প্রার্থীদের এবং প্রতীক গুলোর সিরিয়াল কি হবে ,তা মেশিনের জানা থাকে না। নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী এসডিকার্ড এবং স্মার্টকার্ড কাস্টমাইজেশনের সময় প্রার্থীগন অথবা তাদের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত থাকতে পারে। ইভিএম মেশিন কেবলমাত্র একটি ক্যাসেট প্লায়ারের মতো কাজ করে বিধায় কার্ড সমূহে প্রদত্ত ডাটা যেভাবে যে সিরিয়ালে দেওয়া হবে , মেশিন ঠিক সেইভাবে একই সিরিয়ালে কাজ করবে। যেহেতু মেশিন এবং কাস্টমাইজেশন সম্পূর্ণ আলাদা প্রক্রিয়া এবং নির্বাচনের আগে প্রোগ্রাম কাস্টমাইজেশন করা র কোন সুযোগনেই,তাই এই মেশিনে এক প্রতীকে প্রদত্ত ভোট অন্য প্রতীকে স্থানান্তর সম্ভবনয়।
উপরন্ত একই প্রোগ্রাম যেহেতু সকল মেশিনে ব্যবহৃত হয় ,তাই প্রোগ্রামে কোন ধরনেরসমস্যাথাকলেতা সকল মেশিনেই প্রতিফলিত হতে পারে এবং এটি দৃষ্টির অন্তরালে রাখা সম্ভব হতে ানা, কিন্তু এই ধরনের কোন সমস্যা কখনো পরিলক্ষিত হয় নি।
ইভিএমে হ্যাকিং করা যায় না মোবাইলসহ সকল স্মার্ট মেশিনে হ্যাকিং করা যায় এবং প্যাচ ডাউনলোড করে সফটওয়্যার আপডেট করা যায় । তাহলে ইভিএম মেশিনে কেন হ্যাকিং করে ফলাফল পরিবর্তন করা যাবেনা অথবা নির্বাচনের আগে প্যাচের মাধ্যমে প্রোগ্রাম পরিবর্তন করা যাবেনা?এখানে সকলের জেনে রাখা ভালোযে, ইভিএম মেশিনে কোন ইন্টারনেট অথবা মোবাইল সংযোগ নেই। এসডিকার্ড এবং স্মার্টকার্ড ঢুকানোর পোর্ট ভিন্ন অন্য কোন পোর্ট না থাকায় মেশিন টিকে কোন ভাবেই অন্য কোন যন্ত্রের সাথে সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। মেশিনের ভিতরের প্রতিটি পোর্ট ইভিএমের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি করা যাতে মেশিন খুলেএটিকেঅন্য কোন যন্ত্রের সাথে সংযোগ দেওয়ানা যায় । আবার এসডিকার্ড এবং স্মার্টকাডের্ যে ডাটা ঢুকানো হয় এবং নির্বাচনের সময় যে ডাটা জমা হয় ,তা নিজস্ব এলগোরিদম এবং কোড ব্যবহার করে এই ক্রিপটেড করে রাখা হয় বিধায় এসব কার্ডে সংরক্ষিত ডাটা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে যাতে এই মেশিনকে হ্যাকিং কিংবা দূরনিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবনা হয়। ইভিএম সম্পূর্ণ ভাবে হ্যাকিং এবং প্যাচ হতে মুক্তস্বয়ং সম্পূর্ণ একটি যন্ত্র,যাকে কোন ভাবেই কেউ নিজের কন্টোলে নিতে পারেনা বিধায় ফলাফল পরিবর্তনের কোন সুযোগনেই।
বিশ্বের সেরা ইভিএম বাংলাদেশে বিশ্বের প্রায় ১২০টি গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে আনুমানিক ২৫টি দেশে ইভিএম ব্যবহার করা হয় যার বেশি রভাগ গুলোতেই রয়েছে ইভিএম -বিতর্ক। অনেক প্রযুক্তি -উন্নত দেশও চিন্তা করছে তারা ইভিএম ব্যবহার কর বেশি না। এমনি একটি পরিস্থিতিতে বাংলা দেশে উদ্ভাবিত ইভিএম কতটা নির্ভরযোগ্য এই প্রশ্নটি মোটেই অবান্তর নয়। প্রযুক্তিতে আমরা শক্তিশালী দেশ নই একথা যে এই সত্য,তেমনি অনেক ক্ষেত্রেই আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি যে,আমাদের উদ্ভাবিত অনেক প্রযুক্তি মোটেই দুর্বল নয় বরং তাদের জন্য শিক্ষণীয়। বায়োমেট্রিকসহ জাতীয় পরিচয়পত্র তথা ভোটার তালিকা প্রণয়ন,কোভিড-১৯ এর টিকা ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের নিজস্ব উদ্ভাবিত প্রযুক্তির গুণগতমান তুলেধরতে সক্ষম হয়েছি। দেখিয়ে দিয়েছি যে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা তাদের চেয়ে বেশি সফলকাম্য। ইভিএম মেশিনের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্র এই। বর্তমানে আমাদের ইভিএ এই যে বিশ্বসের-এই চ্যালেঞ্জ আমরা প্রকাশ্যে ছুঁড়ে দিতে ইপারি। আমাদের ইভিএম উদ্ভাবনের পর বিশ্বের অন্যান্য দেশে র ইভিএম ভোট গণনার মেশিনে পরিণত হয়েছে সেগুলো না পারে ভোটারদের সনাক্ত করতে, না পারে মেশিন তাঁর নিজস্ব কর্তৃত্ব বজায় রাখতে এবং নাপারে ভোটের সময় নিয়ন্ত্রণ করতে।
আমাদের দেশে বর্তমানে ব্যবহৃত ইভিএম মেশিন ব্যতীত পৃথিবীর প্রায় সকল ইভিএম মেশিন প্রতিটি নির্বাচনে ব্যবহারের পূর্বে কাস্টমাইজ করে নিতে হয় ,২০১৩ সালের পূর্বে বাংলাদেশে ব্যবহৃত ইভিএম মেশিন ওপ্রতিটি নির্বাচনের আগে কাস্টমাইজ করে নিতে হতো। বর্তমানে উদ্ভাবিত এবং ব্যবহৃত ইভিএম মেশিন এক বার তৈরির পর আর কাস্টমাইজ করতে হয় না,ফলে এই মেশিনে কোন প্রকার ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বা ভোট কারচুপির সুযোগ নেই। উন্নত দেশে র ইভিএম মেশিন গুলোকে পরিবর্তন করে আমাদের মেশিনের সমতুল্য বা আরও উন্নত করতে তাদের সবচেয়ে বড় বাঁধা হলো তাদের দেশে বায়োমেট্রিকসহ কোন ভোটার ডাটা বেজ না থাকা।
ভিভি প্যাট ব্যবহার না করার কারণ ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে উদ্ভাবিত ইভিএম মেশিনে ভোটার ভেরিফাইড পেপার অডিট ট্রেইল অর্থাৎ ভোটার কর্তৃক যাচাইকৃত কাগজ নিরীক্ষার পন্থা(সংক্ষেপে ভিভি প্যাট) ব্যবহার করা হলেও আমাদের দেশে তা ব্যবহার করা হয় না কেন ?এটি একটি সার্বজনীন প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আগে আমাদের জানা প্রয়োজন ভিভি প্যাট কি এবং কেন ব্যবহৃত হয় ? প্রত্যেক ভোটার ভোট দানের পর মেশিন হতে যে প্রতীকে ভোট দিল তা প্রিন্ট করে ব্যালট বাক্সে জমা করার পদ্ধতিকে ভিভি প্যাট বলে। পরে মেশিন প্রদত্ত প্রতীক ভিত্তিক ভোটের সংখ্যা এবং ব্যালট বাক্সে জমাকৃত প্রতীক ভিত্তিক ভোটের সংখ্যা মিলিয়ে দেখা হয় মেশিন ঠিকমতো কাজ করেছে কি না। ভারতসহ যে সকল দেশ ভিভি প্যাট ব্যবহার করেছে,তারা সকলেই কম বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। ভোটদান পদ্ধতি হয়েছে বির্তকিত। অনেক সময় ভোট গ্রহন এবং ফলাফল বাতিল করতে হয়েছে। ভিভি প্যাট ব্যবহারে রয়েছে বহুবিধ প্রতিবন্ধকতা যার একটি হলো মেশিনের সাথে প্রিন্টারের সংযুক্তি। প্রিন্টার যেহেতু যান্ত্রিক সঞ্চালনে কাজ করে তাই যেকোনো সময় হতে পারে পেপার জ্যামসহ বিভিন্ন বিভ্রান্তি মূলক ঘটনা। উদাহরণ স্বরূপ,ধরুন আপনি ভোট দিলেন এবং মেশিনও আপনার ভোট গ্রহণ করে প্রিন্টারকে নির্দেশ দিলো তা প্রিন্ট করার। কিন্তু প্রিন্টার ভোটটি প্রিন্ট করার সময় কাগজ আটকে গেল। এখন উপায়? এক বার ভাবুন তো, ভোট দেওয়া হয়ে গেছে অথচ ব্যালট প্রিন্ট হচ্ছে না কিংবা অর্ধেক প্রিন্ট হয়ে আটকে আছে। ডাকলেন একজন কারিগরি বিশেষজ্ঞকে পেপার জ্যাম ছাড়াতে। বিশেষজ্ঞ জ্যাম ছাড়াতে এসে দেখে ফেললেন ভোটার কোন প্রতীকে ভোট দিয়েছে। ব্যত্যয় হলো নির্বাচনী আইনের কিন্তু শাস্তি দিবেন কাকে?অপরাধ সংঘঠিত হলো কিন্তু কাউকে অপরাধী করা যাবেনা। নির্বাচনী আইন সংশোধন করতে হবে ,তখন ঘটে যাবে আরেক বিপত্তি। অপরের ভোট দেখার পথ সুগম হবে সমাজে সৃষ্টি হবে আরেক অরাজকতা। কোন একজননে তাকে ভোট না দেওয়ার শাস্তিভোগ করতে হবে গরীব নিরীহ জনগণকে। আবা র মেশিনেরফলাফলের সাথে ব্যালট বাক্সে সংরক্ষিত কাগজের মাঝে দেখা দিবে অসংগতি। ব্যালট বা ক্সছিনতাইসহনানবিধঘটনারঅবতারণা হবে ভোট দানপদ্ধতিকেবিতর্কিত করতে । যে সকল দেশে প্রত্যেক ভোটের আগে মেশিনকে কাস্টমাইজ করে সন্দেহের সৃষ্টি করে ,তারাইকেবলভিভিপ্যাট ব্যবহার করেছে নির্বাচন কে গ্রহনযোগ্য করা র একটি প্রয়াসহিসেবে। আমাদের দেশে ব্যবহৃত ইভিএম মেশিন যেহেতু নির্বাচনের আগেকাস্টমাইজ করা হয় না,তাই ভিভি প্যাটের ব্যবহার নির্বাচনে শুধুমাত্র প্রতিবন্ধকতাই বৃদ্ধি করবে,নতুন কিছু অর্জিত হবে না।
লেখক পরিচিতি : অধ্যাপক,কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশলবিভাগ
বাংলাদেশ প্রকৌশলবিশ্ববিদ্যালয়(বুয়েট) এবংসদস্য, ইভিএম উদ্ভাবন ও কারিগরি কমিটি