ডিএসইতে ১৭৫ কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে
মাসুদ মিয়া : দেশের শেয়ারবাজার আগের কার্যদিবস উত্থান হলেও গতকাল বুধবার সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস ব্যাপক দর পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন শেয়ারবাজারের সব সূচক কমেছে। সূচকের সাথে টাকার পরিমাণে লেনদেন এবং বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দরও কমেছে। এদিন দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ৫০ পয়েন্ট কমেছে। আর ১৭৫টি কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে।
এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সূচকের এমন বড় পতনের পেছনে তিন কারণ রয়েছে। কারণগুলোর মধ্যে প্রথমত, ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময়হার এক দিনে ১০ টাকা বড় হওয়ার প্রভাব। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, টাকার বড় দরপতনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে উৎপাদন খাত। আমদানি করা কাঁচামালের দাম বেড়ে যাবে ১০ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা দেশে পণ্যের মূল্য আরও বাড়লে চাহিদা কমে গিয়ে বিক্রিতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এতে কোম্পানির মুনাফা কমে যেতে পারে। টাকার মান কমার ফলে, এই আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ছেড়ে দিতে চাইছেন। দ্বিতীয়ত, শেয়ারবাজারের মৌল ভিত্তির কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরে পতন হয়েছে। যার কারণে সূচকের এমন বড় পতন হয়েছে। মৌল ভিত্তির কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ার দর কমতে দেখা গেছে ।
তৃতীয়ত, দেশের গণমাধ্যমে শেয়ার কারসাজির সাথে সাকিবের জড়িত থাকার খবর নেতিবাচক ধারায় ফলাও করে প্রচার হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও আতঙ্কিত হয়েছেন। সাকিব-হিরোর বিরুদ্ধে বিএসইসির একের পর এক সিদ্ধান্তের কারণে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা বিভ্রান্ত অবস্থানে রয়েছেন। তারা মনে করছেন, বিএসইসির এমন পদক্ষেপে সাকিব হিরোর সহযোগিরা বাজার থেকে ছিটকে যাবে। সেই আতঙ্কে বাজারে সেল প্রেসার বেড়েছে। এচাড়াও বড় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সেল প্রেসার ছিল বেশি। সেল প্রেসারের চাপে কেনাবেচা কম হয়েছে। এতে বাজারে লেনদেনও কমেছে। ডিএসইর লেনদেনও কমেছে আগের দিনের তুলনায় ১৭২ কোটি টাকার বেশি। শুধু বড় বিনিয়োগকারীরা সেল প্রেসার দিয়েছে তা নয়, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও তেমন একটা সক্রিয় ছিল না।
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫০.৪১ পয়েন্ট বা ০.৭৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৮৭.১৭ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৯.৪২ পয়েন্ট বা ০.৬৬ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২০.২৭ পয়েন্ট বা ০.৮৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪১৭.৫২ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৩৩৩.২৩ পয়েন্টে।
টাকার পরিমাণে ডিএসইতে লেনদেন এক হাজার ৩০৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকার। যা আগের দিন থেকে ১৭২ কোটি ২৯ লাখ টাকা কম। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৪৮০ কোটি ৭ লাখ টাকার। ডিএসইতে ৩৭১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৭২টির বা ১৯.৪১ শতাংশের, শেয়ার দর কমেছে ১৭৫টির বা ৪৭.১৭ শতাংশের এবং ১২৪টির বা ৩৩.৪২ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- অরিয়ন ফার্মা, বেক্সিমকো লিঃ, জেএমআই হসপিটাল, লাফার্জহোলসিম, মালেক স্পিনিং, শাইনপুকুর সিরামিকস, বিএসসিসিএল, অরিয়ন ইনফিউশন, বিএসসি ও ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, সিভিওপিআরএল, নর্র্দান জুট, অরিয়ন ইনফিউশন, এম্বী ফার্মা, মুন্নু এগ্রো, ইজেনারেশন, জেএমআই হসপিটাল, ওয়াটা কেমিক্যাল ও আরামিট লিঃ।
দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো- ফারইস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এসআলম কোল্ড রোল্ড, শাইনপুকুর সরামিক, ইন্দো-বাংলা ফার্মা, এডভেন্ট ফার্মা, বসুন্ধরা পেপার, নাহী অ্যালুমিনিয়াম, কোহিনুর কেমিক্যাল, স্কয়ার টেক্সটাইল ও শাহজিবাজার পাওয়ার।
দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৬৪.৬৫ পয়েন্ট বা ০.৮৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ০৬৮.২১ পয়েন্টে।
এদিন সিএসইতে ২৬২টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৪৩টির আর ৬৯টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ২১ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।