জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে বাড়ছে এডিস মশা : ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ
শাহীন খন্দকার : ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাক্তিগত চিকিৎসক ইমিরেটস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, এপ্রিল থেকে শুরু হয় ডেঙ্গুর প্রকোপ। যা শীতের আগ পর্যন্ত চলতেই থাকবে।
ডা. এবিএম আবদুল্লাহ আরো বলেন, এবার ডেঙ্গু বাড়ার মূল কারণ থেমে থেমে এবং বিক্ষিপ্তভাবে ও বৃষ্টি হওয়া। এভাবে বৃষ্টি হলে পানি যেখানে-সেখানে জমে থাকছে। আর এসব জমে থাকা পানিতেই মশার প্রজনন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃষ্টির সচ্ছ পানিতে ডিম দিচ্ছে এডিস মশা। ফলে আবারো বৃদ্ধি পাচ্ছে ডেঙ্গু রোগী।
ইমিরেটস অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, ডাবের খোসা, পরিত্যাক্ত পাত্র কিংবা রাস্তার পাশে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা ডিম পারছে। এসব স্থান থেকে ডেঙ্গু মশাগুলো বাসাবাড়িতে যাচ্ছে। আর এতেই বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ।
ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, বিশেষ করে বর্ষাকালে ডেঙ্গুজ¦রের প্রকোপ বিগত কয়েক বছর ধরেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাথটাব, ফুলের টব, কমোড বা ছাদবাগানে জমে থাকা পানিতেও এসব মশা বিস্তার লাভ করছে। আজকাল মানুষে ছাদে ড্রামে ফল-সবজি বাগান করছে। সেখানে পানি জমে থাকা সচ্ছ জমা পানিতে এডিসমশার উৎপত্তি।
অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু প্রধানত দুই ধরনের। এক. ক্লাসিক্যাল এবং দুই. হেমোরেজিক ফিভার। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুজ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সাথে সারা শরীরে প্রচন্ড ব্যথা হয়। ডেঙ্গু হলে ১০৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত জ¦র হতে পারে। শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি, মাংসপেশিসহ মাথাব্যথা ও চোখের পিছনে তীব্র ব্যথা হয়। তাই এই জ¦রের আরেক নাম ব্রেক বোন ফিভার।
শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যথার তীব্রতায় স্পর্শ করলেই তারা কেঁদে ওঠে, খিটখিটে মেজাজ হয়। জ্বর হওয়ার ৪-৫ দিন সারা শরীরে লালচে দানা দেখা যায়। যাকে স্কিন র্যাশও বলা হয়ে থাকে। যা অনেকটা এলার্জি বা ঘামাচির মত। সেই সঙ্গে বমিবমি ভাবসহ বমি হতে পারে।
ডেঙ্গু রোগীরা অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করেন এবং রুচি কমে যায়। সাধারণত জ¦র ৪-৫ দিন থাকার পর তা এমনিতেই চলে যায়। কোনো কোনো রোগীর ২-৩ দিন পর আবার জ্বর আসে। একে বাইফেজিক ফিভার বলে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু জ¦রের ভয়াবহ রূপ হলো ডেঙ্গু শক নিড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের সঙ্গে সার্কুলেটরী ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়। এর লক্ষণ হলো রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া, নাড়ীর স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রæত হওয়া, হাত-পা ও অন্যান্য অংশ ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া। এছাড়া নারীদেও ক্ষেত্রে অনেক সময় পিরিয়ড হওয়ার পরও বন্ধ না হওয়া। এসব কারণে রোগী হঠাৎ করে অজ্ঞান হতে পারেন। এ সময় নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত আসা, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ আরো বলেন, কারো জ¦র হলে সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুসহ করোনার টেষ্ট করাতে হ।ে সেই সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিকে হবে।
বয়স্করা নানা ধরনের রোগে ভোগেন, ডায়াবেটিকস, ক্যান্সার, হার্টের রোগে আক্রান্তদের করোনা হলে যেমন ঝুকিঁ রয়েছে তেমনি ডেঙ্গুজ¦রে আক্রান্ত হলেও ঝুকি রয়েছে। তাদের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি চলতি বছরের শুরু থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু আগস্ট মাস থেকে ডেঙ্গু সংক্রমণ দ্বিগুণ শক্তি নিয়েচেপে বসেছে। এরই মধ্যে হাসপাতালে দৈনিক ভর্তির সংখ্যা তিনশ ছাড়িয়েছে। আগামী মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন তিনি। চলতি মাসে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় ডেঙ্গুর মৌসুম নভেম্বর পর্যন্ত বাড়তে পারে।
রোগীদের ঠিকানা নিয়ে ওইসব এলাকায় মশক নিধনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বৃষ্টি না হলেও ঢাকা শহরে এডিস মশা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা যায়, বহুতল ভবন। সেখানে পার্কিংয়ের জায়গায় গাড়ি ধোয়া হয়। এই পানি নিষ্কাশন ঠিকভাবে হয় না। কোথাও না কোথাও জমে থাকে। আর তাই এসব জায়গায় প্রচুর এডিস মশা পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, যেহেতু সেপ্টেম্বরের শেষেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে সেহেতু দীর্ঘ হতে পারে ডেঙ্গু মৌসুম। আগে মে থেকে অক্টোবর ঝুঁকিপূর্ণ সময় ধরা হলেও এখন নভেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
ডা আব্দুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়াটা খুবই উদ্বেগজনক। এখন আমাদের জানা দরকার রোগীর মধ্যে নতুন সেরোটাইপের আছে কিনা। কারণ, যার এক ধরনের সেরোটাইপের ডেঙ্গু হয়েছে সে যদি অন্য সেরোটাইপে আক্রান্ত হয়, তবে তা খুবই ভয়ংকর। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে মশা বিতাড়ক স্প্রে ব্যবহারের পাশাপাশি নগরবাসীকে ঘুমানোর সময় মশারি টানানো, লম্বা হাতা জামা ও মোজা পরার পরামর্শ দিয়েছেন। সম্পাদনা: মাজহারুল ইসলাম