ইরানের পর ভারত রাশিয়ার সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য শুরু করছে
রাশিদ রিয়াজ : ভারতীয় রপ্তানি বাড়ানোর জন্য একটি নতুন লেনদেন ব্যবস্থাকে অনুমোদন দিয়েছে বিজেপি সরকার। ভারত শীঘ্রই রাশিয়ার সাথে রুপিতে বাণিজ্য শুরু করবে, ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের প্রধান এই সপ্তাহে বিষয়টি জানিয়েছেন। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া একটি নতুন লেনদেন ব্যবস্থা সহজ করতে সম্মত হওয়ার পরে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আরটি
ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের প্রধান এ শক্তিভেল সাংবাদিকদের বলেন, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া রাশিয়ার সাথে রুপি বাণিজ্য সহজতর করার জন্য এগিয়ে এসেছে এবং কিছু অন্যান্য ব্যাঙ্কও আগ্রহ দেখিয়েছে। ভারত ইতিমধ্যেই ‘ইরানের সঙ্গে একটি ভাল রুপি লেনদেন ব্যবস্থা চালু করেছে যা একই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে চালু করতে যাচ্ছে।
গত জুলাই মাসে, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, একটি সার্কুলার জারি করে ঋণদাতাদেরকে রুপিতে আমদানি ও রপ্তানি লেনদেনের জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা চালু করার আহŸান জানিয়েছিল। ডলারের উপর রুপির নির্ভরতা কমাতে পরিকল্পিত পদক্ষেপটিকে মস্কোর সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য একটি প্রণোদনা হিসাবেও দেখা হয়। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে এপ্রিল-জুলাই মাসে রাশিয়ায় ভারতের রপ্তানি প্রায় এক তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এ. শক্তিভেলের মতে, রুপির বাণিজ্য চলতি অর্থবছরে রাশিয়ায় ভারতীয় রপ্তানিকে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি করতে পারে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ভারতীয় কোম্পানিগুলি ইতিমধ্যে রাশিয়ার সাথে লেনদেনে এশিয়ান মুদ্রা ব্যবহারে ঝুঁকছে।
মস্কো দুই সপ্তাহের মধ্যে রুপিতে পারস্পরিক মীমাংসার জন্য ব্যাংকটির নাম ভারতকে জানাবে বলে আশা করছে দিল্লি। এদিকে, মস্কো স্টক এক্সচেঞ্জ মার্কিন ডলার এবং ইউরো থেকে দূরে সরে যাওয়ার ইচ্ছায় ভারতীয় মুদ্রায় বাণিজ্য শুরু করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর দেয়া নিষেধাজ্ঞার পর ভারত কম দামে রুশ তেল কিনে লাভ করেছে ৩৫ হাজার কোটি রুপি। রাশিয়ার কাছ থেকে ডিসকাউন্টে তেল কিনে ভারতের এই বিপুল আর্থিক লাভ হয়েছে। ইউক্রেনে আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়ার পর একে একে দূরে সরে যায় মস্কোর ক্রেতারা। কিন্তু ডিসকাউন্ডে তেল বিক্রির প্রস্তাব দেওয়ার পর রাশিয়া তার তেল রপ্তানির অন্তত অর্ধেক পরিমান তেলের নতুন ক্রেতা পেয়ে গেছে। সুযোগ বুঝে রুশ অশোধিত তেলের জন্য দর কষাকষি শুরু করে ভারত। একপর্যায়ে নিষেধাজ্ঞার কারণে চালানে আটকে থাকা তেল বড় ডিসকাউন্টে ভারতকে দেওয়া শুরু করে রুশ ব্যবসায়ীরা। রুশ তেল কিনে ভারত তা থেকে পেট্রোপণ্য কিনে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিও করেছে। চীনের পর রুশ অপরিশোধিত তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা এখন ভারত। ভারত তার মোট আমদানিকৃত তেলের ১২ শতাংশই কিনে থাকে রাশিয়ার কাছ থেকে যা ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ছিল ১ শতাংশেরও কম। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই মাসে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি আট গুণ বেড়ে ১১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে গেছে। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তেলের দাম ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ দেশটি আমদানির মাধ্যমেই তেলের চাহিদার ৮৩ শতাংশ পূরণ করে থাকে। বিপুল এই আমদানি ভারতের অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ২০২১-২২ সালে তেল আমদানিতে খরচ দ্বিগুণ হয়ে ১১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
২০২০ সালে করোনা মহামারি মধ্যে বিশ্ব স্থবির হয়ে গেলে তেলের দাম কমে যায় এবং ভারত সরকার কৌশলগত ভাবে তেল মজুদ করে। সেসময় পরে তেলের দাম বাড়লেও রিফাইনাররা ২৫ হাজার কোটি রুপি সাশ্রয়ের জন্য জাহাজে তেল সংরক্ষণ করে। আর এখন নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ভারতে রাশিয়ান তেলের প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে যথেষ্ট সক্রিয় ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও।