সপ্তাহ ব্যবধানে ডিএসইতে বাজার মূলধন বেড়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার উপরে
মাসুদ মিয়া: দেশের শেয়ারবাজার গত সপ্তাহে উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। গত সপ্তাহ শেয়ারবাজারের প্রধান প্রধান সূচক বেড়েছে। সূচকের সাথে টাকার পরিমাণে লেনদেনও বেড়েছে। তবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। আর সপ্তাহ ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর বাজাার মূলধন বেড়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার উপরে। এর আগের সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন আড়াই হাজার কোটি টাকা কমেছিল। অবশ্য তার আগের চার সপ্তাহের উত্থানে বাজার মূলধন বাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকার ওপরে।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ২০ হাজার ১২৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ২ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। তার আগের চার সপ্তাহে বাজার মূলধন বাড়ে ১৯ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা।
বাজার মূলধন বাড়লেও গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম কমেছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৮৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৬টির। আর ১৩৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এরপরও গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট বা দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৪৫ পয়েন্ট বা দশমিক ৬৯ শতাংশ।
আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহে বেড়েছে ১৯ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৮২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ২৯ দশমিক ৮২ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। প্রধান ও ডিএসই-৩০ মূল্যসূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে বেড়েছে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক। গত সপ্তাহে এ সূচকটি বেড়েছে ৭ দশমিক ১৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৫০ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১১ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বা দশমিক ৮১ শতাংশ।
সবকটি সূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ২২ কোটি ৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ১ হাজার ৪১৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৬০৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বা ৪২ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১০ হাজার ১১০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৭ হাজার ৮২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৩ হজার ২৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বা ৪২ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অংকে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ১২ দশমিক ২৭ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকোর শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৩৬ কোটি ৭৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। ৪৭৯ কোটি ৭০ লাখ ৪১ হাজার টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে-জেএমআই হসপিটাল অ্যান্ড রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, ইস্টার্ন হাউজিং, একমি ল্যাবরেটরিজ, শাহিনপুকুর সিরামিক এবং শাহজিবাজার পাওয়ার।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৪০৮ কোটি ৯২ লাখ ৩৬ হাজার ৬১৯ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১৪৪ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৯৪২ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন ২৬৪ কোটি ৬৮ লাখ ৯৪ হাজার ৬৭৭ টাকা বেড়েছে।
সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২০৩.৮৪ পয়েন্ট বা ১.০৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৩৪৪.৮৬ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসসিএক্স ১২৩.২১ পয়েন্ট বা ১.০৭ শতাংশ, সিএসই-৫০ সূচক ১০.৭১ পয়েন্ট বা ০.৭৭ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক ১৪.৮৯ পয়েন্ট বা ১.২১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১ হাজার ৫৯৬.০২ পয়েন্টে, এক হাজার ৪০৯.২৭ পয়েন্টে এবং এক হাজার ২৪৮.৪৭ পয়েন্টে। তবে ডিএসই-৩০ সূচক ৬.৭৪ পয়েন্ট বা ০.০৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৫০৫.২২ পয়েন্টে।
সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩৩৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯২টির বা ২৭.৩০ শতাংশের দর বেড়েছে, ১১৬টির বা ৩৪.৪২ শতাংশের কমেছে এবং ১২৯টির বা ৩৮.২৮ শতাংশের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।