বাংলাদেশে ৬.১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে : বিশ্ব ব্যাংক
অর্থনীতি ডেস্ক : চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। প্রবৃদ্ধিতে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে থাকবে মালদ্বীপ ও ভারত। সংস্থাটি বলছে, তারল্য সংকট, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি তুলে ধরতেই বিশ্বব্যাংক, ঢাকা অফিসের এই ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন।
সংস্থাটি বলছে, চলতি বছরে এ অঞ্চলে গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২৪ সালেও হবে একই প্রবৃদ্ধি। দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলংকা ছাড়া বাকি সব দেশই প্রবৃদ্ধি দেখবে। সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে মালদ্বীপের। আর ৭ শতাংশ নিয়ে ভারত দ্বিতীয় এবং ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
তবে এ সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ অন্তত তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করার পাশাপাশি সময়োপযোগী মুদ্রা-ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি বলছে সংস্থাটি। বাংলাদেশের অর্থনীতির বিদ্যমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ নিয়েও নিজেদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক বলছে, সব ঠিক থাকলে আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ২ শতাংশ।
এর আগে গত জুন মাসে প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ রিপোর্টে বিশ্বব্যাংক বলেছিল চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। বাংলাদেশ সরকার এই অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরো (বিবিএস) ২০২০-২১ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে সাময়িক হিসাব প্রকাশ করেছে, তাতে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরলেও মহামারি পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় তা সংশোধন করে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছিল।
মহামারির শুরুর ধাক্কায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নেমে গিয়েছিল ৩ দশমিক ৫১ শতাংশে, যা তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে; ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে নিয়ে কিছু চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও কোভিড-১৯ মহামারি থেকে পুরোপুরি পুনরুদ্ধারের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, যা অর্থনৈতিক কর্মকাÐকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে এবং গত এক দশকে অর্জিত কিছু অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করেছে। করোনা মহামারি গত ২০২০ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমিয়েছে। দারিদ্র্য হ্রাসের গতি মন্থর করেছে। রপ্তানি হোঁচট খেয়েছে। বৈষম্য বেড়েছে। ২০২০ সালে দারিদ্র্যের হার ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক ১ শতাংশ হয়েছে। এরপরও প্রবাসীদের পাঠানো রেকর্ড রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করেছে।
সত্যিকার অর্থে উচ্চ-মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা সফল করার জন্য বাংলাদেশকে করোনা মহামারির চ্যালেঞ্জ দ্রæত মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যত দ্রæত সম্ভব দেশের সব মানুষকে টিকা দিতে হবে। তাহলেই কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত ও মৃত্যু কমবে এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করতে সক্ষম হবে দেশটি। এ ছাড়া প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায়িক পরিবেশ, দক্ষ শ্রমশক্তি, বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ এবং বেসরকারি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করে-এমন নীতি নিয়ে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সূত্র : একুশেটিভি অনলাইন ও নিউজ বাংলা