ডিসি-এসপিদের নিয়ে বৈঠক জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড কঠোর নজরদারিতে রাখবে সিইসি
এস.ইসলাম জয় : আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের নিয়ে সিইসির বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, তারা যাতে কোনো দলের পক্ষ হয়ে কাজ না করে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় ইসির অবস্থান থাকবে কঠোর। মাঠ কর্মকর্তাদের কাজও পর্যবেক্ষণ করা হবে। দায়িত্ব পালনে কোনো হেয়ালি অথবা শৈথল্যতা আমরা মেনে নেব না।
শনিবার নির্বাচন ভবনে জেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে দেশের ৬১ জেলার ডিসি ও পুলিশ সুপারদের সাথে সভায় তিনি এ পরামর্শ দেন। সকাল ১০টা থেকে তিন ঘণ্টার এই বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনরিাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক, ইসি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সিইসি বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সাধারণ নির্বাচনের বিষয়ে আপনাদের কঠোরভাবে দায়িত্ব-সচেতন হতে হবে। কোনো অবস্থাতেই আপনাদের কর্ম ও আচরণে এমন কিছুর প্রতিফলন যেন না হয় যাতে জনগণ ভাবতে পারে যে আপনারা কোনো একটি দলের পক্ষে কাজ করছেন। জনগণের স্বাধীন ভোটাধিকার প্রয়োগের সহায়ক অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে হবে।
নিরপেক্ষ থেকে আপনারা সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করবেন। সিইসি আরও বলেন, সংবিধান, আইন ও বিধি-বিধানের আলোকে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। যেকোনো মূল্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করে নির্বাচনের অনুক‚ল পরিবেশ বজায় রাখবেন। জনগণের স্বাধীন ভোটাধিকার প্রয়োগের সহায়ক অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে হবে। নিরপেক্ষ থেকে আপনারা সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করে প্রজাতন্ত্রের কর্মের কাক্সিক্ষত মান ও আদর্শকে সমুন্নত রাখবেন। গণতন্ত্রের প্রয়োগ, চর্চা ও বিকাশে স্ব স্ব অবস্থান থেকে অবদান রাখতে হবে আপনাদের। নির্বাচন কমিশন তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন ও ক্ষমতা প্রয়োগে কঠোর অবস্থানে থাকবে।
সিইসি বলেন,দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে উপেক্ষা করা যাবে না। সংসদীয় পদ্ধতির বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রশ্নে মতপার্থক্য বা মতের বিভিন্নতা থাকতেই পারে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিভাজন নিয়ে সংশয় থাকলেও আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ ও সার্বিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদিচ্ছা, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা যেকোনো সংকট ও সংশয় নিরসনের সামর্থ্য রাখে। মতৈক্য ও সমঝোতা হবে। সংকট ও সংশয় কেটে যাবে। সভায় তিনি বলেন, আমরা কঠোর ভাষায় বলছি ভয়ভীতি, পক্ষপাতিত্ব, চাপ বা অন্য যে কোনো কারণে নির্বাচনে অবৈধ হস্তক্ষেপ প্রতিহত করতে না পারলে নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের নামে প্রহসন হবে। পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে। আপনাদের এও বলছি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পুলিশ যেন হয়রানি করা না করে, সে বিয়ষ আপনার সচেষ্ঠ থাকবেন। এতে সংসদ নির্বাচনে জনগণের আগ্রহ, আস্থা ও অংশগ্রহণ উৎসাহিত হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে আশা প্রকাশ করে সিইসি বলেন, ইভিএম প্রশ্নেও বিতর্ক রয়েছে। আমরা কেবল বিশ্বাস করি না, প্রমাণ পেয়েছি ইভিএম প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্বাচনী সহিংসতা ও কারচুপি নিয়ন্ত্রণ সহজতর। অনূর্ধ্ব ১৫০টি আসনে, প্রাপ্যতা সাপেক্ষে, ইভিএম প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। তবে প্রয়োজনে সকল আসনে কিংবা ১৫০ এর অধিক আসনে ব্যালটে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি ও সামর্থ্য আমাদের থাকবে। সে লক্ষ্যে নির্বাহী ও পুলিশ প্রশাসনকেও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সামর্থ্য ও প্রস্তুতি রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশে একই দিনে একই সময়ে ৪২ থেকে ৪৫ হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। কর্মযজ্ঞটি সহজসাধ্য না হলেও, অসাধ্য নয় এবং সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে সার্থকভাবেই সাধন করতে হবে। বৈঠকে শেষে ইসির মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি আতিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের সময় ইসির অধীনে পুলিশ প্রশাসন কাজ করে থাকে। পুলিশ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার আলোকে দায়িত্ব পালন করে। কারও বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আখতার হোসেন বলেন, জেলা পরিষদ ও সংসদ নির্বাচন সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে যে নির্বাচনগুলো হয় তা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের বিষয়ে আলাপ হয়েছে। ডিসি-এসপি’রা পরামর্শ দিয়েছেন। তারা তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন।
তিনি জানান, গত নির্বাচনে ৪০ হাজারের মতো ভোট কেন্দ্র ছিল, আগামী নির্বাচনে এ সংখ্যা বেড়ে ৪৩ হাজারের উপরে হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের যে সংখ্যা তাতে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা যায় না। এজন্য আমরা যাচ্ছি ভোট ভেন্যুর সংখ্যা কমিয়ে বুথ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। এখন যেহেতু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে, কাজেই ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করে যৌক্তিক সংখ্যক করা হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করা সম্ভবপর হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠ প্রশাসনে রদবদল হয় না, এটি রুটিন ওয়ার্ক। কিছুদিন আগে পদোন্নতির কারণে আমরা ৪০টি জেলায় নতুন এসপি নিয়োগ দিয়েছি। ওই এসপিদের আমরা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে বলেছি।