![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)
বিরতিহীন ট্রেন ‘সোনার বাংলা’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী দেশে বুলেট ও পাতাল ট্রেন চলবে
দীপক চৌধুরী : দুর্গম এলাকাসহ দেশের সবকটি জেলাতেই রেলের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে দেশে বুলেট ও পাতাল ট্রেন চলবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে নতুন ট্রেন ‘সোনার বাংলা’ এক্সপ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই সম্ভাবনার কথা বলেন।
তিনি বলেন, জাপানের বুলেটট্রেনের প্রতি আমার খুব আগ্রহ ছিল। যতবার জাপানে গিয়েছি, সেখানে বুলেটট্রেনে উঠতাম। সেদিন বেশি দূরে নয়, আমরা দেশেই এই বুলেটট্রেন চালু করতে সক্ষম হব।
নতুন এই ট্রেন আজ রোববার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবে। প্রতিদিন সকাল সাতটায় কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনটি ছেড়ে দিয়ে ৫টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে পৌঁছবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। নতুন এ ট্রেনটি শুধু ঢাকার বিমানবন্দর রেলস্টেশনে থামবে।
শেখ হাসিনা ঢাকা-রাজশাহী রুটে সিল্কসিটি সার্ভিসের বিকল্প হিসেবে নতুন ব্রডগেজ ট্রেন সার্ভিসও চালু করেন।
প্রধানমন্ত্রী এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় বলেন, এই ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধন বাংলাদেশের যোগাযোগ ক্ষেত্রে এক নবতর অধ্যায়ের সংযোজন। নতুন ট্রেনে করে বাড়ি গিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের মজাটাই আলাদা হবে বলেও এ সময় প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর প্রেসক্রিপসনে দেশের রেল সার্ভিসকে প্রায় বন্ধই করে দিতে বিভিন্ন রুট থেকে রেললাইন পর্যন্ত তারা সরিয়ে ফেলে। সেই অবস্থা থেকে ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তার সরকার রেল পুনর্গঠনে উদ্যোগী হয়। সেক্ষেত্রে এ সরকার বুলেট ট্রেন এবং পাতাল ট্রেন চালুর উদ্যোগ ও গ্রহণ করবে বলে এ সময় প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
রেলপথ এবং নদ-নদী বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক এবং দাতাগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব স্বার্থে এই যোগাযোগের সহজ এবং সাশ্রয়ী মাধ্যম দুটিও বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ দেয়। তারা বঙ্গবন্ধু সেতুতেও রেললাইন স্থাপনে রাজি ছিল না। কিন্তু তিনি তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেননি বলেও প্রধানমন্ত্রী উলেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দাতারা অর্থ সহায়তা দেবে, কিন্তু আমাদের ভালো-মন্দ আমাদেরই বুঝতে হবে। তারা কিন্তু বুঝবে না। এ প্রসঙ্গে নিজস্ব সিদ্ধান্তে অটল থাকায় এখন বিশ্বব্যাংক বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশ দিয়ে একটি পৃথক রেলসেতু নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এসময় এলজিআরডির এবং সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, রেল সচিব ফিরোজ সালাউদ্দিন এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন, সেনাবাহিনী প্রধান আবু বেলাল মুহাম্মদ শফিউল হক, বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী এরপর যান চলাচলের সুবিধার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের তৈরি খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ইউ-লুপ খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন এবং কমলাপুর থেকে ফেরার পথে প্রগতি সরণী-বনশ্রী সংযোগ সড়কে নেমে প্রধানমন্ত্রী হাতিরঝিল প্রকল্পের সাউথ ইউ-লুপের ফলক উন্মোচন করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালক (অপারেশন) সৈয়দ জহুরুল ইসলাম বলেন, সোনার বাংলা ট্রেনটি বিমানবন্দর স্টেশনের পর আর কোথাও থামবে না। ট্রেনটিতে ১৬টি নতুন বগি থাকবে। প্রতিটি বগি ইন্দোনেশিয়ার তৈরি।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১৬টি বগির এই ট্রেনে যাত্রী ধারণক্ষমতা ৭৪৬ জন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) মোট আসন ২২০টি, শোভন চেয়ারের মোট আসন ৪২০টি, এসি বাথের আসন রয়েছে ৬৬টি। এছাড়া দুটি খাবার গাড়ির সঙ্গে ৪০টি আসন রয়েছে।
সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ১০০ টাকা, এসি সিটের ভাড়া এক হাজার টাকা ও শোভন চেয়ারের ভাড়া ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ট্রেনে যাত্রীদের খাবার সরবরাহ করবে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)